এ প্রসঙ্গে হজ এজেন্সি ঢালী ওভারসিজ’র কর্মকর্তারা জানান, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স যখন এজেন্সিকেগুলোকে প্রথমে হজ টিকিট বরাদ্দ দেয় তখন আমরাও আবেদন করেছিলাম। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের নিয়ম অনুযায়ী একটি এজেন্সিকে কমপক্ষে ১৫০টি ও সর্বোচ্চ ৩শটি টিকিট বরাদ্দ দেয়ার কথা।
হজ এজেন্সিগুলোকে টিকিট বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে একটি মহল সিন্ডিকেট করেছে। একারণেই এতো ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। এমনটাই মনে করেন খোদ বিমানেরই অনেক কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের উচ্চ পদস্থ এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, এবার হজের ক্ষেত্রে ই-ভিসাসহ কিছু জটিলতা রয়েছে এটা ঠিক। কিন্তু একই প্রক্রিয়ায় সৌদিয়া এয়ারলাইন্স কাজ করলেও তাদের ফ্লাইট বাতিল হয়েছে মাত্র চারটি আর আমাদের হয়েছে ১২টি। হজ ফ্লাইটের টিকিট বরাদ্দের ক্ষেত্রে যখন এজিন্সগুলোর কাছে আবেদন চাওয়া হলো তখন প্রায় ১১শ এজেন্সি হজ টিকিটের জন্য আবেদন করে। এর মধ্যে লিডিং এজেন্সি ছিলো ৬৩৫টি। এই ৬৩৫টি লিডিং এজেন্সির মধ্যে মাত্র ১০৪টি এজেন্সিকে টিকিট বরাদ্দ দেয় বিমান। কিন্তু ১০৪টি এজেন্সির মধ্যে ৭০টি এজেন্সিকে নামমাত্র টিকিট বরাদ্দ দেয়া হয়। ৩৪টি এজেন্সির মালিকদের নিয়মের বাইরে বেশি বেশি করে টিকিট বরাদ্দ দেয়া হয়। এই ৩৪টি এজেন্সির মালিকদের রয়েছে এজেন্সি। এসব এজেন্সির মালিকদের কারো কারো একারই ১০টিরও বেশি লাইসেন্স রয়েছে। এ কারণেই তৈরি হয়েছে জটিলতা। বাতিল হয়েছে ফ্লাইট।
বিমানের টিকিট নিয়ে একটি মহল সিন্ডিকেট করেছে বলে অভিযোগ করেন বাংলাদেশ হজযাত্রী কল্যাণ পরিষদের সভাপতি ড. আব্দুল্লাহ আল নাসের। তিনি টিকিট বরাদ্দে ক্ষেত্রে নিয়মভঙ্গ করার সুর্নিষ্ট উদাহরণ তুলে ধরেন।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, বিমানের টিকিটে সিন্ডিকেটের কারণেই এভাবে একের পর এক ফ্লাইট বাতিল হলো। আমরা বারবার বিমানকে হুঁশিয়ারি দিয়েছি। কিন্তু তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। প্রতিবারই ফ্লাইট বাতিল হয়, তবু টনক নড়ে না বিমানের। তারা একই এজেন্সিকে নিয়মের বাইরে গিয়ে সর্বোচ্চ ৩০০টির বেশি টিকিট বরাদ্দ দিয়েছে।
অন্যদিকে ধর্মমন্ত্রণালয়ের হজ অফিসের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, কেন এতো ফ্লাইট বাতিল হলো সে বিষয়ে আমরা বিমানের সাথে আলোচনায় বসব। তারা কাদের কতো টিকিট বরাদ্দ দিয়েছে সেই তালিকা আমরা চাইব। যেসব ফ্লাইট বাতিল হলো সেখানে কোন এজেন্সির কতো যাত্রী ছিলো তাও খতিয়ে দেখা হবে। সেখানেই বোঝা যাবে কোনো সিন্ডিকেট হয়েছে কিনা।
তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ বিমান। বিমানের মুখপাত্র শাকিল মেরাজ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা নিয়ম অনুযায়ীই এজেন্সিগুলোর কাছে আবেদন চেয়েছি। আবেদন করার পর সব দিক বিবেচনা করেই আবেদনকারীদের টিকিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এখানে কোনো সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব নেই। আমাদের সব কাজ স্বচ্ছ।
উল্লেখ্য, চাঁদ দেখা সাপেক্ষে ২০১৭ সনের হজ অনুষ্ঠিত হবে ১ সেপ্টেম্বর। চলতি বছর সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রী রয়েছেন মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। আরো প্রায় ২৫ হাজার হজযাত্রী ভিসা পেয়েছেন। তারা ফ্লাইটের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাছাড়া ৩৩ হাজার হজযাত্রীর ভিসার কার্যক্রম চলমান আছে। ২০১৭ সালে ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক অনুমোদিত হজ এজেন্সির সংখ্যা ৬৩৫ টি। ২৪ জুলাই হজযাত্রীদের নিয়ে সৌদি আরবের উদ্দেশ্যে প্রথম ফ্লাইটটি ঢাকা ছেড়ে যায় বিমানের।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ০৫, ২০১৭
ইউএম/জেএম