ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

এভিয়াট্যুর

দুই এয়ারক্রাফটেই সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা লোকসান বিমানের

তামিম মজিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
দুই এয়ারক্রাফটেই সাড়ে ৬শ’ কোটি টাকা লোকসান বিমানের

ঢাকা: অবশেষে দূর হচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের গলার কাঁটা ইজিপ্ট এয়ার থেকে লিজে আনা বোয়িং ৭৭৭। ইতোমধ্যে একটি বোয়িং মিশরীয় এ এয়ারলাইন্সকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সেই এয়ারক্রাফটি হজরত শাহজালাল আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেছে।

তবে তারিখ নির্ধারিত না হলেও চলতি মাসের শেষের দিকে অপর বোয়িং মিশরীয় এয়ারলাইন্সটিকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। মূলত চুক্তি শেষ হওয়ায় এয়ারক্রাফটগুলো ফেরত দেওয়া হচ্ছে।

এটি নিয়ে অনেক সমালোচনা থাকায় আর চুক্তি নবায়ন করেনি বিমান।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ গলার কাটাঁ দূর হলে বিমান অনেকটা মুক্ত হবে। মাসে আর ১১ কোটি টাকা হারে গচ্চা দিতে হবে না। তবে এটা সরালেই কেবল বিমানকে মুনাফায় ফেরানো সম্ভব নয়। বিমানকে যদি দুর্নীতি মুক্ত করা যায়, তাহলেই কেবল লোকসান কমিয়ে মুনাফার মুখ দেখবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ দুই এয়ারক্রাফটেই প্রতি মাসে ১১ কোটি টাকা হারে গত পাঁচ বছরে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। মূলত এক পাইলটের নেতৃত্বে শক্তিশালী সিন্ডিকেটের স্বার্থ রক্ষায় ইজিপ্ট এয়ারের সঙ্গে চুক্তি করায় রাষ্ট্রীয় এ সংস্থাটি বছরে গচ্চা দিয়েছে ১৩২ কোটি টাকা।

বিমানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দুই উড়োজাহাজ লিজ আনা, মেরামতে চরম অবহেলা ও অনিয়মের কারণেই বিমানকে এতো টাকা গচ্চা দিতে হয়। উড়োজাহাজ লিজ নেওয়ার পর থেকে ইঞ্জিন বিকল হওয়া, আবার ভাড়ায় আনা, সেগুলোর মেরামত এবং উড়োজাহাজের ভাড়াসহ আনুষাঙ্গিক কাজে এ সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা খরচ হয়। যা দিয়ে একটি নতুন উড়োজাহাজ কেনা সম্ভব।

বিমানের পরিকল্পনা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে ইজিপ্ট এয়ারের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স হয়। সেই চুক্তি মোতাবেক ইজিপ্ট এয়ার থেকে দু’টি বোয়িং ৭৭৭-২০০ ইআর লিজ নেয় বিমান। প্রথম বোয়িং বিমানের বহরে যুক্ত হয় ওই বছরের মার্চেই। অপর বোয়িং বিমানের বহরে যুক্ত একই বছরের মে মাসে।

জানা গেছে, বোয়িং দু’টি বিমানের বহরে যুক্ত হওয়ার ১১ মাস পরই ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ফ্লাইট পরিচালনার পর একটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। উড়োজাহাজটি সচল করতে ইজিপ্ট এয়ার থেকেই ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন। তখন সুবিধাভোগীদের স্বার্থ হাসিল করতে চড়া দামে ইঞ্জিন ভাড়া করার অনুমোদন দেয় তৎকালীন বিমানের পরিচালনা পর্ষদ। দেড় বছরের মাথায় নষ্ট হয়ে যায় অবশিষ্ট বোয়িংয়ের ইঞ্জিনটিও। উড়োজাহাজটি সচল রাখতে ইজিপ্ট এয়ার থেকে আবারও ভাড়ায় আনা হয় আরেকটি ইঞ্জিন।

এরপর থেকে নানা অজুহাতে গ্রাউন্ডেড থাকে উড়োজাহাজ দু’টি। গত ডিসেম্বরে নষ্ট হয়ে যায় ভাড়ায় আনা ইঞ্জিনও। পরে ইঞ্জিন মেরামত করতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। ফলে এয়ারক্রাফটি ফেরত দেওয়া হচ্ছে।

যদিও সাম্প্রতিক সময়ে বিমানের কর্মকর্তাদের বদলি ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোসাদ্দেককে চাকরিচ্যুত করা হয়। এতে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও কিছু কর্মকর্তাকে বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা দেখা দেয়। ফলে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ বিতর্কিত কোনো সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকছে।

জানা গেছে, মূলত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমানকে লাভজনক করতে নির্দেশ দেওয়ায় ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী বিমানে পরিবর্তন আনতে অনড় থাকায় লিজে আনা এয়ারক্রাফটের চুক্তি নবায়ন করেনি কর্তৃপক্ষ।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ফরহাত জামিল বাংলানিউজকে বলেন, দু’টি এয়ারক্রাফটের মধ্যে একটি ইতোমধ্যে ইজিপ্ট এয়ারকে ফেরত দেওয়া হয়েছে। অপরটি চলতি মাসের মধ্যেই ফেরত দেওয়া হবে।  আমরা বিমানকে মুনাফায় আনতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি।

বাংলাদেশ সময়: ০৬৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৯
টিএম/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।