সিলেট: যুক্তরাজ্যফেরতদের নিজ খরচে কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করায় ফ্লাইট বাতিল করছেন অসংখ্য যাত্রী। এ কারণে ক্ষতির মুখে বাংলাদেশ বিমানের লন্ডন-সিলেট ফ্লাইট চলাচলে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এদিকে যেকোনো দিন ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যাত্রী না থাকায় এরই মধ্যে দুইটি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, ২শ ৯৮ জনের বহরের বিমান মাত্র গুটি কয়েক যাত্রী নিয়ে লন্ডন থেকে বাংলাদেশে চলাচল করছে। এ কারণে বড় ধরনের ভর্তুকি দিয়েও সরকার বিমান চলাচল স্বাভাবিক রাখছে।
বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) মাত্র ৩৪ জন যাত্রী নিয়ে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এরমধ্যে ২৮ জন সিলেটে এবং অন্য ৬ জন ঢাকায় নেমেছেন।
বাংলাদেশ বিমানের সিলেট অফিসের তথ্যমতে, নিজ খরচে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করায় বৃহস্পতিবার ফ্লাইটে ১শ ৯০ জন টিকিট কাটলেও এসেছেন ৩৪ জন।
এর আগে সোমবার (৪ জানুয়ারি) সিলেটে আসা ফ্লাইটের ১শ ৯০ যাত্রী টিকিট কিনলেও এসেছেন মাত্র ৩৬ জন। বাকিরা টিকিট বাতিল করেছেন।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সিলেট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক শাহনেওয়াজ মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, যুক্তরাজ্যফেরত যাত্রীরা নিজ খরচে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকার ভীতিতে টিকিট বাতিল করেছেন। সোমবার ও বৃহস্পতিবারের ফ্লাইটে দুই শতাধিক যাত্রী টিকিট কনফার্ম করার পরও তাদের বেশিরভাগই পরবর্তী টিকিট বাতিল করেছেন।
তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য থেকে বিমানের একটি ফ্লাইট চালাতে গেলে ৪ কোটি টাকার মতো খরচ হয়। যাত্রী প্রতি রিটার্ণ টিকিটসহ বিমানে ভাড়া আসে ৯শ পাউন্ড। সেখানে প্রায় ৩শ আসন সংখ্যার বিমান খালি আসছে বললেই চলে। এতে করে সরকারকে বিরাট অংকের ক্ষতি বহন করতে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে আসতে ১শ ৯০ জন যাত্রী টিকিট কেটে রেখেছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৩২ জন এসেছেন। তার মধ্যে ২৮ জন সিলেটে নেমেছেন। বাকি ৬ জন ঢাকার। এ অবস্থায় যাত্রী না থাকায় আগামী ২৩ ও ৩০ জানুয়ারির ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে মোবাইল ফোনে বাংলাদেশ বিমানের উপ মহা ব্যবস্থাপক (পাবলিক রিলেশন) তাহেরা খন্দকারকে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
করোনা ভাইরাসের নতুন ধরনের (স্ট্রেইন) সংক্রমণরোধে যুক্তরাজ্যফেরত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। এরই মধ্যে গত ৪ জানুয়ারি এক শিশুসহ ৪২ জন এবং বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে আসা আরও ২৮ জনকে প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়েছে।
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক হাফিজ আহমদ বাংলানিউজকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, বিমানের ফ্লাইটে ২৮ জন যাত্রী সিলেটে নেমেছেন। তাদের বিআরটিসি বাসে করে নির্ধারিত হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এর আগে সোমবার যুক্তরাজ্যেফেরত এক শিশুসহ ৪২ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, সপ্তাহের প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জতিক বিমানবন্দরে বিমানের সরাসরি ফ্লাইট আসে।
সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের জন্য নগরের ৮টি হোটেল নির্ধারণ করে রাখা হয়। এরমধ্যে অভিজাত হোটেল রোজভিউ, স্টার প্যাসিফিক ছাড়াও মধ্যম সারির হোটেল নুরজাহান গ্র্যান্ড, হলি গেইট, লা-রোজ, ব্রিটানিয়া, অনুরাগ ও হোটেল হলিসাইড। তবে এসব হোটেলের নুরজাহানে ভাড়া খাবারে অতিরিক্ত মূল্য রাখার অভিযোগ রয়েছে প্রবাসীদের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের সিদ্ধান্ত কার্যকরের আগে যুক্তরাজ্য থেকে সরাসরি বিমানের ফ্লাইটে সর্বশেষ ৩১ ডিসেম্বর ২শ ৩৭ যাত্রী নিয়ে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরে আসে বিমানের ফ্লাইট।
এর আগে ২৮ ডিসেম্বর ২শ ২ জন ও গত ২৪ ডিসেম্বর ২শ ২ জন যাত্রী যুক্তরাজ্য থেকে সিলেটে ফিরেন। এই তিনদিনে যথাক্রমে ১৬৫, ১৪৪ ও ২০২ জন ছিলেন সিলেটের যাত্রী। বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদের প্রত্যককেই হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশনা দিয়ে বাড়ি চলে যেতে দেওয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০২১
এনইউ/এএটি