ঢাকা: ‘গণতন্ত্র উদ্ধার’ এর নামে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য বৃহত্তর ঐক্য গড়ার লক্ষ্যে চার বছর আগে সম্প্রসারিত বিএনপির নেতৃ্ত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবস্থা এখন অনেকটাই ‘ছন্নছাড়া’।
মাঝে-মধ্যে গুলশান কার্যালয়ে জোট নেতাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার ‘সান্তনা’ বৈঠক ছাড়া জোটগত কোনো কর্মকাণ্ড নেই ২০ দলের।
সম্প্রতি জোটের অন্যতম শরিক দলের এক মহাসচিব তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘অনেক বড় একটি রাজনৈতিক জোট, কিন্তু কাজের নামে লবডঙ্কা’ স্ট্যাটাস্ট দিয়ে ২০ দলের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরেন।
দলীয় সূত্রের খবর, ফেসবুক স্ট্যাটাস দেওয়া ওই মহাসচিবের মতো জোটের অনেক শীর্ষ নেতাই এখন বিশ্বাস করতে শুরু করছেন, আকারে-কলেবরে বৃহৎ জোট হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে কিছু করে দেখানোর ক্ষমতা এই জোটের নেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ‘নজিরবিহীন’ সহিংসতা, কারচুপি, প্রাণহানি ও জবরদস্তিকে ইস্যু করে ২০ দলীয় জোটের ব্যানারে মাঝারি মাপের কর্মসূচি দেওয়ার দাবি তুলেছিলো জোট শরিকরা।
জবাবে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে পাল্টা জানতে চাওয়া হয়-সরকারের সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য কতটুকু শক্তি সঞ্চয় করেছে শরিক দলগুলো। মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক সহিংসতা, কারচুপি ও জবরদস্তির সময় কতটুকু প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পেরেছে তারা।
জোটের প্রধান দলের শীর্ষ নেতাদের এমন মনোভাবে যারপরনাই হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন শরিক দলের নেতারা। নিজেদের সীমাবদ্ধতা ও অপারগতা মেনে নিয়েই তারা বলছেন, যা করার বিএনপি-জামায়াতকেই করতে হবে। শরিক দলগুলো কেবল তাদের সঙ্গে থেকে নৈতিক সমর্থন দিয়ে যাবে।
কিন্তু বিএনপির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, নেতারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে কারাবন্দি ও চরম শাস্তির মুখোমুখী হওয়ার পর ২০ দলীয় জোটের সেকেন্ড ফোর্স জামায়াত সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি, জীবিত নেতাদের কারাবাস ও মাঠ পর্যায়ের নেতাদের আত্মগোপনের ফলে কোনো কর্মসূচিতেই এখন আর জামায়াত নেতাদের সহযোগিতা পাওয়া যাবে না।
অন্যদিকে ২০ দলীয় জোটের থার্ড ফোর্স ইসলামী ঐক্যজোট বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট থেকে বের হয়ে যাওয়ায় ২০ দলের অবস্থা আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে। কওমী মাদ্রাসাভিত্তিক ইসলামী ঐক্যজোটের জনসমর্থন ও জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে রাজপথের আন্দোলন গরম করার সুযোগ হাত ছাড়া হয়েছে বিএনপির।
বাকি ১৭টি দলকে কোনো কর্মকাণ্ডেই ডাকছে না জোট নেতা বিএনপি। সদ্য সমাপ্ত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন জোটবদ্ধভাবে করার মৌখিক ঘোষণা দিয়েও শরিক দলের কারো জন্য কোনো ইউপি ছেড়ে দেয়নি তারা।
বিএনপির এমন আচরণে জোটের শরিক দলগুলোও হাল ছেড়ে দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, জোটকে যদি কার্যকর না করতে পারে বিএনপি, তাহলে জোট ভেঙে দেওয়াই উচিৎ। যার যার মতো স্বাধীনভাবে তখন কাজ করা যাবে। জোটে থাকার কারণে অনেক কিছুই এখন বলা যায় না, করাও যায় না।
সূত্রমতে, বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের আগে ইউপি নির্বাচন সামনে রেখে সর্বশেষ ২০ দলীয় জোটের মিটিং হয়েছিল। এর পর প্রায় তিন মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো মিটিং হয়নি।
তাছাড়া শরিক দলগুলো একের পর এক জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং সেগুলোর ভগ্নাংশ নিয়ে আরেকটি দল গঠনের প্রবণতাও ২০ দলীয় জোটের স্থায়িত্ব ও গ্রহণযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে বলে মনে করেন কেউ কেউ।
আবার নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত, সক্রিয়-নিষ্কিয়’র মধ্যে অবস্থানগত পার্থক্য না থাকায় আরেক ধরনের জটিলাতা তৈরি হয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটে। এখানে ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ বীর বিক্রমের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটি পার্টি (এলডিপি), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, জেবেল রহমান গাণির নেতৃ্ত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ, শফিউল আলম প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাগপাকে নাম ও সাইনবোর্ড সর্বস্ব দল ও দলের নেতাদের সঙ্গে একইভাবে মূল্যায়ন করায় চটেছেন এসব জাতীয় নেতা। ফলে অনেক সময় দেখা যায় বিএনপির আমন্ত্রণে নিজেরা না এসে দলের নিচের সারির নেতাদের পাঠিয়ে দেন এসব দলের নেতারা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব গোলাম মোস্তফা ভুইয়া বাংলানিউজকে বলেন, যেখানে দুধ আর ঘি একই দামে বিক্রি হয়, সেখানে ঘি ঘরে রেখে দুধ সরবরাহ করাই তো লাভ বেশি।
তবে বিষয়টিকে ভিন্নভাবে দেখছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন আপাতত কোনো কর্মসূচি না থাকায় জোট শরিকদের সঙ্গে সেভাবে বাসা হচ্ছে না। ফের যখন মাঠে নামার সময় হবে তখন সবাইকে সাথে নিয়ে বসেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলানিউজকে বলেন, যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে ২০ দলীয় জোট গঠন করা হয়েছে, সে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখনো হাসিল হয়নি। এ জন্য হয়তো জোট শরিকদের মধ্যে কিছুটা হতাশা কাজ করছে। সময়ে এগুলো সব ঠিক হয়ে যাবে। তখন আর এগুলো নিয়ে কথা উঠবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৫ ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৬
এজেড/জেডএম