ঢাকা: রাজনীতিবিদ এবং পেশাজীবী নেতা ও বিশিষ্ট নাগরিকদের সম্মানে আয়োজিত খালেদা জিয়ার পৃথক দু’টি ইফতার মাহফিলে অতিথিদের আমন্ত্রণ ছিল দায় সারা গোছের।
এ কারণে ১৪ ও ২০ দলীয় জোটের বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলের নেতা, জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী, পেশাজীবী নেতা, বিশিষ্ট নাগরিক, ব্যবসায়ী, সমাজসেবী, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, এনজিও ব্যক্তিত্ব, সাবেক বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষক ও আইনজীবী নেতারা আসেননি খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিলে।
ফলে বিএনপির সিলেক্টেড কিছু নেতা ও ২০ দলীয় জোটের সাইনবোর্ড ও নাম সর্বস্ব শরিক দলের নেতাদের নিয়ে অনেকটা ‘একা’ ইফতার করেছেন খালেদা জিয়া।
সূত্রমতে, দাওয়াত দেওয়ার পরও আমন্ত্রিত অতিথিরা ইফতার মাহফিলে না আসায় ক্ষুব্ধ খালেদা জিয়া বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা ও গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে এর কারণ জানতে চান। জানতে চান, ঠিক-ঠাক মত আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয়েছিল কি না?
এর পরই মূলত, দায়িত্বশীল নেতারা নড়ে চড়ে বসেন। খতিয়ে দেখার চেষ্টা করেন দাওয়াত দেওয়ার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের কোনো গফিলতি ছিল কি না?
জানা গেছে, প্রতি বছর গুলশান কার্যালয় কর্মচারীরাই খালেদা জিয়ার স্বাক্ষর সম্বলিত আমন্ত্রণ পত্র তালিকাভুক্ত অতিথিদের অফিস, বাসা বা চেম্বারে পৌঁছে দিয়ে আসেন।
তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিকল্প ধারার প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আব্দুর রব ও কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর আমন্ত্রণপত্র কেন্দ্রীয় নেতারা পৌঁছে দিয়ে আসেন।
এ বছর দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহ দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন এ দায়িত্ব পালন করেছেন।
আর জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক, বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান নির্বাহী, পেশাজীবী নেতা, বিশিষ্ট নাগরিক, ব্যবসায়ী, সমাজসেবী, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, এনজিও ব্যক্তিত্ব, সাবেক বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং শিক্ষক ও আইনজীবী নেতাদের আমন্ত্রণপত্র অফিস কর্মচারীদের দিয়ে পাঠানো হয়েছে।
সূত্রমতে, বিগত বছরগুলোতেও অফিস কর্মচারীদের দিয়ে আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর পর খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ফোন দেন। ইফতার মাহফিলে উপস্থিত থাকার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানান।
আর এ কাজটি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রাত্যহিক কর্মসিডিউলের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেসউইং কর্মকর্তারা।
কিন্তু এ বছর প্রেসইউং প্রধানের উপর দায় চাপিয়ে অন্য কর্মকর্তারা নীরব থাকায় মহাসচিবের কর্মসিডিউলের মধ্যে আমন্ত্রিত অতিথিদের ফোন দেওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়নি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির বেশিরভাগ নেতার বিশ্বাস, খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে কাউকে সরাসরি টেলিফোনে আমন্ত্রণ জানানো হলে তিনি না এসে পারবেন না। মতাদর্শ যাই থাক, সৌজন্যবোধ থেকে হলেও সাবেক তিন বারের প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দেবেন সবাই। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের দায়সারা গোছের আমন্ত্রণের কারণে এবার কেউ আসেননি খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিলে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, কয়েকজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে আমি ফোনে কথা বলেছি। কিন্তু সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলা হয়নি। তবে সম্পাদকদের নিয়ে আলাদাভাবে বসার চিন্তা-ভাবনা আমাদের আছে।
এদিকে খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিল নিয়ে বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা ও গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে।
খালেদা জিয়া আয়োজিত পৃথক চারটি ইফতার মাহফিলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান, ব্রি. জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান, চৌধুরী কামাল ইবনে ইউছুফ, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, ডা. এ জে এম জাহিদ হোসেন, এডভোকেট আহমেদ আযম খান, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালকেই ঘুরে ফিরে দেখা গেছে।
কিন্তু দলের আরো যারা আছেন-স্থায়ী কমিটির সদস্য, ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য-তাদেরকে খালেদা জিয়ার ইফতার মাহফিলে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদিন ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, ম্যাডাম কবে কোথায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেছেন, তা আমাদের জানানো হয়নি। আমরা যাইওনি। এ বিষয়গুলো তো আর ম্যাডাম দেখভাল করেন না। দায়িত্ব দেওয়া থাকে দলের কিছু নেতা ও গুলশান কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ওপর। তারা যদি আমাদেরকে হিসাবের বাইরে রাখেন-কী করার আছে?
বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৮ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১৬
এজেড/জেডএম