ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

উপেক্ষিত ৯০’র ছাত্র নেতারা

আসাদ জামান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৪১ ঘণ্টা, আগস্ট ৭, ২০১৬
উপেক্ষিত ৯০’র ছাত্র নেতারা

ঢাকা: জাতীয় কাউন্সিলের পর সাংগঠনিক সম্পাদকদের নাম ঘোষণার সময় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনকে আগের পদে রেখে দলটির চেয়ারপারসন আভাস দিয়েছিলেন ৯০’র ছাত্র আন্দোলনের নায়করা এবার উপেক্ষিত হতে যাচ্ছেন।

শনিবার (৬ আগস্ট) ঘোষিত ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা পরিষদে ৯০’র ছাত্র আন্দোলনের মহানয়ক, ডাকসুর সাবেক ভিপি আমানুল্লাহ্ আমানকে রেখে সেটি আরো পরিষ্কার করলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ধারায় মেজর জিয়াউর রহমান বীর উত্তম ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে আসেন। গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল বিএনপি।

দল গঠনের সময় যাদেরকে তিনি সঙ্গী হিসেবে পান তাদের বেশির ভাগই ছিলেন স্বাধীনতা বিরোধী। কেউ কেউ আবার একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কেউবা ছিলেন সাজাপ্রাপ্ত কারাবন্দি মুসলীম লীগ নেতা।

১৯৮১ সালের ৩০ মে মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এসব বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়েই রাজনীতি করেছেন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।

কিন্তু মৃত্যুর পর আরো জনপ্রিয় হয়ে ওঠা জিয়াউর রহমান ও তার আদর্শকে বুকে ধারণ করে যেসব তরুণ রাজনীতিতে আসেন তারাই পরবর্তী সময় ৮০ ও ৯০’র ছাত্রনেতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। ছাত্র জীবন শেষে পরিণত জীবনে এসে হয়ে ওঠেন পেশাদার রাজনীতিবিদ।

কিন্তু বিএনপির মূল এই শক্তিটাকে এবারের কমিটিতে একেবারেই গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ঠাঁই হয়নি ৯০’র ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম মহানায়ক আমানুল্লাহ্ আমানের। নির্বাহী কমিটির বাইরে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলে ১৩ নম্বর সিরিয়ালে রাখা হয়েছে তাকে।

আগের কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ্ আমানের আগে অবস্থান করছেন অ্যাড. এ জে মোহাম্মদ আলী, অ্যাড. কবির হোসেন, উকিল আবদুস সাত্তার, লুৎফর রহমান খান আজাদ, আখতার হামিদ সিদ্দিকী, এ কে এম মোশাররফ হোসেনের মতো অখ্যাত নেতাদের।

২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলের পর ৯০’র অন্যতম ছাত্রনেতা ফজলুল হক মিলনকে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বানানো হয়। দীর্ঘ ৬ বছর এ পদে দায়িত্ব পালনের পর দলের যুগ্ম মহাসচিব পদটি আশা করেছিলেন তিনি। কিন্তু কাউন্সিলের পর দ্বিতীয় ধাপে দেওয়া কমিটিতে আগের পদে নিজেকে দেখে হতাশ হন।

ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ৯০’র ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাবিবুর রহমান হাবিবকেও রাখা হয়েছে ৭৩ সদস্য বিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটিতে। এখানে তার সিরিয়াল ৪৯ নম্বরে। আগে কমিটিতে সম্পাদক মন্ডলির সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের জন্য এই পদ যথার্থ মনে করছেন না অনেকেই।

৯০’র ছাত্র আন্দোলনে আরেক নেতা নাজিম উদ্দিন আলমের ঠাঁই হয়নি কোনো জায়গায়। আগের কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম বিগত আন্দোলন সংগ্রামে পুলিশের পিটুনিতে গুরুতর আহত হয়ে দীর্ঘ দিন দেশের বাইরে চিকিৎসা নেন।

সূত্র মতে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা এই ছাত্র নেতা কা‌উন্সিলের আগে দলের যুগ্ম মহাসচিব পদের জন্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু জাতীয় নির্বাহী কমিটির কোথাও রাখা হয়নি তাকে।

এভাবে ৮০ ও ৯০ দশকের ছাত্র নেতাদের অনেককেই দেওয়া হয়নি যোগ্য সম্মান। কাউকে কাউকে রাখা হয়েছে কমিটির বাইরে।

সূত্র আরও জানায়, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের খুব কাছাকাছি থাকা বিএনপির একটি অংশ সুকৌশলে ৯০’র ছাত্র নেতাদের দলে কোণঠাসা করে রাখার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। তাদের মিশন-ই সফল হয়েছে। কেউ কেউ আবার বলছেন, ৯০’র ছাত্র নেতাদের গ্রুপটি ‘বিএনপির চেয়েও বড়’ হয়ে উঠেছিলো। তাই তাদের থামিয়ে দেওয়া হলো।

এ প্রসঙ্গে কথা বলার জন্য ৯০-এর একাধিক ছাত্র নেতাকে ফোন দিয়ে পাওয়া যায়নি। তাদের সবার ফোন বন্ধ। দুয়েকজনকে পাওয়া গেলেও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তারা।

বিএনপির প্রথম ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক বর্তমানে স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, একইসঙ্গে সবার প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব না। যাকে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনি সেটা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করলে ভবিষ্যতে তার হাতেই নেতৃত্ব যাবে। এ নিয়ে ‘আপসেট’ হওয়ার কিছু নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ ঘণ্টা, আগস্ট ০৭, ২০১৬
এজেড/এটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।