ঢাকা: জাতীয় কাউন্সিলের সাড়ে ৪ মাস পর শনিবার (০৬ আগস্ট) ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির দু’টি পদ ফাঁকা রেখে কয়েকজন সিনিয়র নেতার ‘অপেক্ষা’ দীর্ঘায়িত করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।
এ দু’টি পদের জন্য শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, আবদুল্লাহ আল নোমান, সেলিমা রহমান ও মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদের নাম জোরে-সোরে উচ্চারিত হচ্ছে বিএনপিতে।
এদের মধ্যে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ৪ নম্বর, আবদুল্লাহ আল নোমান ৫ নম্বর, মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ ১২ নম্বর ও সেলিমা রহমান রয়েছেন ১৫ নম্বর সিরিয়ালে।
সূত্রমতে, কাঙ্ক্ষিত পদ না পাওয়া এই চার নেতার মধ্যে অন্তত দুইজন তাৎক্ষণিকভাবে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত এই দুই নেতার শুভাকাঙ্খীরা তাদের বোঝাতে সক্ষম হন, স্থায়ী কমিটির শূন্য পদ পূরণের জন্য যাদের নাম বার বার উচ্চারিত হয়েছে তাদের সবাইকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে রাখা হয়েছে। সুতরাং শূন্য দুই পদ পূরণ করতে হলে ভাইস চেয়ারম্যানদের-ই ডাক পড়বে।
গত দুই দিন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- শূন্য দুই পদ পূরণের জন্য ঘোষিত কমিটির ৪ ও ৫ নম্বর ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন ও আবদুল্লাহ আল নোমান-ই এগিয়ে আছেন।
সূত্রমতে, গত দুই দিনে বিএনপির অভ্যন্তরে যে আলোচনাটি বার বার এসেছে, তা হলো- রাজনৈতিক ক্যারিয়ার, বয়োজ্যেষ্ঠতা, প্রজ্ঞা, বাগ্মীত্ব, অভিজ্ঞতার বিষয় বিবেচনায় নিলে স্থায়ী কমিটিতে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের অন্তর্ভুক্তি ছিল সবচেয়ে যৌক্তিক।
বর্ষীয়ান এই রাজনীতিককে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলার মজবুত ভিতও তৈরি করতে পারত বিএনপি। কারণ, নজরুল ইসলাম খান ছাড়া জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে ঠাঁই পাওয়া নেতাদের মধ্যে তেমন কেউ নেই, যারা রণাঙ্গনের আলোচিত মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন।
এ ক্ষেত্রে মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন হতে পারতেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির এক মাত্র সদস্য, যাকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে জীবন্ত কিংবদন্তিই বলা চলে।
সূত্রমতে, দলীয় পরিমণ্ডলে চলতে থাকা এই আলোচনা এরই মধ্যে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কানে পৌঁছেছে। কমিটি ঘোষণার পরের দিন লন্ডনে এক ঘনিষ্ঠজনের সঙ্গে আলাপকালে স্থায়ী কমিটিতে শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের থাকা উচিৎ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
এদিকে বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া আব্দুল্লাহ আল নোমানকে স্থায়ী কমিটিতে না রাখায় অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন।
তারা বলছেন, বিএনপির রাজনীতিতে পরীক্ষিত এই নেতা যখন দলের ১ নম্বর যুগ্ম মহাসচিব তখন বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ১৯৯১ সালে ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন আবদুল্লাহ আল নোমান। ওই সম্মেলনেই জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন ফখরুল।
তাছাড়া, স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় যে কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব ছিলেন, সেই কমিটিতেই আবদুল্লাহ আল নোমান ছিলেন ১ নম্বর যুগ্ম মহাসচিব। নজরুল ইসলাম খান, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় টানা দুই মেয়াদে স্থায়ী কমিটির সদস্য হলেও আবদুল্লাহ আল নোমান পড়ে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান পদে।
সূত্রমতে, নোমানকে নিয়ে দলের অভ্যন্তরে চলতে থাকা এই আলোচনাও খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলামের কান পর্যন্ত পৌঁছেছে। সব কিছু ঠিক থাকলে স্থায়ী কমিটির শূন্য দুই পদের একটিতে ঢুকে পড়ার সম্ভাবনা আছে নোমানেরও।
তবে স্থায়ী কমিটিতে একজন নারী সদস্য রাখার বাধ্যবাধকতা থাকলে সেলিমা রহমানও ঢুকে যেতে পারেন এই এলিট ফোরামে। আবার মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদকেও দেখা যেতে পারে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, শূন্য পদ বিএনপি নেতাদের দিয়েই পূরণ করা হবে। বাইরে থেকে তো কাউকে আনা হবে না। অপেক্ষা করেন, সব দেখতে পারবেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৬
এজেড/জেডএম