বিংশ শতকে বই পাঠকেরা কবিতা, গল্প আর উপন্যাসের বই কিনতে উদগ্রীব থাকতেন। সময়ের পরিক্রমায় একবিংশ শতকের তৃতীয় দশকে এসে পাল্টেছে সেই দৃশ্যপট।
সরেজমিনে গত কয়েক দিন বইমেলায় ঘুরে দেখা গেছে, বইমেলায় এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় থ্রিলারধর্মী বই। তরুণরাই এর প্রধান পাঠক। তরুণদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সীরাও কিনছেন থ্রিলারধর্মী গল্প-উপন্যাস।
প্রকাশকরা বলছেন, থ্রিলার বই সব সময়ই রোমাঞ্চকর। একটি গল্পের ভেতর তৈরি হয় অনেক গল্প। এসব গল্প মানুষের মস্তিষ্কে ঝড় তোলার ক্ষমতা রাখে। যে উপন্যাস মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ে খেলতে পারে, তা জনপ্রিয়তা পাবে, এটাই স্বাভাবিক।
সম্প্রতি থ্রিলারধর্মী বই কেন তরুণদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পাচ্ছে, এমন প্রশ্নে একাধিক থ্রিলার লেখক-প্রকাশক বলেন, থ্রিলার উপন্যাসের পাতায় পাতায় থাকে ভয়, রহস্য, রোমাঞ্চ। কী থেকে কী হয়, কে জানে! আগে থেকে কিছুই অনুমান করা যায় না। আবার অপরাধেরও নানা ধরন আছে। এসব উপন্যাসে কী ধরনের অপরাধ দেখানো হবে, অনেক ক্ষেত্রে সেটিও আগে থেকে অনুমান করা যায় না। ফলে পাঠক যখন এ ধরনের উপন্যাস পড়েন, তখন একটি উত্তেজনাপূর্ণ ভ্রমণের মধ্য দিয়ে যান। এ ধরনের রোমাঞ্চকর ভ্রমণের লোভেই পাঠকদের আগ্রহ থ্রিলার উপন্যাস কিংবা গল্পে।
মেলায় আসা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার কবির বলেন, সাহিত্যের বিভিন্ন বই পড়লেও এখন শুধু থ্রিলার, রহস্য এবং সায়েন্স ফিকশন পড়তে ভালো লাগে।
থ্রিলার লেখক মাহবুব নাহিদের তৃতীয় থ্রিলার উপন্যাস ‘বাজিগর’ প্রকাশ হয়েছে দাঁড়িকমা প্রকাশনী থেকে। তার উপন্যাস পাঠকপ্রিয়তা পাওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, থ্রিলার পাঠকদের মধ্যে একটা অ্যাডবেঞ্চার তৈরি করে। কোনো পাঠক থ্রিলার পড়া শুরু করলে তার মনের মধ্যে নানা আজানা প্রশ্ন তৈরি হয়। পুরো গল্প পড়া শেষ করা না পর্যন্ত সে গল্পের পুরো রহস্য উদঘাটন করতে পারে না। তাই থ্রিলারে আগ্রহ বাড়ছে তরুণসহ সব শ্রেণির পাঠকদের। শুধু তাই নয় থ্রিলারধর্মী বই পাঠককে পড়ুয়া করতেও আগ্রহী করে।
বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় আরেক থ্রিলার লেখক মোশতাক আহমেদ বলেন, আসলে আমরা দেখতে পাচ্ছি সমাজ পরিবর্তন হচ্ছে, এজন্য পাঠকের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে। থ্রিলার পছন্দের কারণ এন্টারটেইনমেন্ট মিডিয়া মানুষের হাতের মুঠোয় চলে আসছে। মোবাইলে ২০০ চ্যানেল দেখা যায়। ওখানে এন্টারটেইনমেন্ট পাওয়া যায়। আগে কবিতা, প্রেমের উপন্যাস পছন্দ করতো, সেখানে থ্রিলার পছন্দ করছে। অন্যদিকে থ্রিলারের মধ্যে প্রেম, সাসপেন্স পাওয়া যায়। এজন্য থ্রিলার বই পছন্দ করছে।
তরুণ থ্রিলার লেখকদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, নিজেদের পড়তে হবে যেন অন্য মিডিয়া থেকে তাদের লেখা আকৃষ্ট হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে। যখন পাঠকদের আকৃষ্ট করবে তখন পাঠকদের ধরে রাখতে পারবে। আমরা দেখতে পাই, অল্পদিনে এসব লেখক হারিয়ে যান, লম্বা সময়ে না লেখার কারণে পাঠক ধরে রাখতে পারছে না।
অনিন্দ্য প্রকাশের প্রকাশক আফজাল হোসেন বলেন, গত কয়েক বছর থেকে থ্রিলারের প্রতি পাঠকদের আগ্রহ বেড়েছে। তরুণরাই এর প্রধান পাঠক। আমাদের স্টলে থ্রিলারধর্মী বই বেশি বিক্রি হচ্ছে।
দাঁড়িকমা প্রকাশনীর প্রকাশক আলমগীর রুমি বলেন, সম্প্রতি থ্রিলার বইয়ের প্রতি পাঠকদের অনেক আগ্রহ বেড়েছে। আমাদের প্রকাশনীর সবচেয়ে জনপ্রিয় বই থ্রিলার ঘরণার ‘বাজিগর’।
শেষ সময়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে বইমেলা। আর দুদিন পর পর্দা নামবে বইমেলার। এরই মধ্যে বিদায়ের সুর বাজতে শুরু করেছে। তবে শেষ সময়ে মেলায় লোকসমাগম বাড়ছে। একই সঙ্গে বইয়ের বিক্রিও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন বইয়ের দোকানিরা।
নন্দনের প্রকাশক সুব্রত চৌধুরী বলেন, এবার বইমেলা খুবই ভালো হয়েছে। শুরু থেকেই বেচাকেনা ভালো ছিল। আর যারা বলছেন, মেলায় সবাই বই কিনছেন না তার সাথে আমি একমত নই। কারণ বইমেলা ও বাণিজ্যমেলা এক হবে না। যারা পাঠক তারা ঠিকই বই কিনছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০২৪
এনবি/এমজেএফ