ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

মেলায় বিদায়ের সুর

বাংলানিউজ টিম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪
মেলায় বিদায়ের সুর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা প্রাঙ্গণ থেকে: ফেব্রুয়ারি এলেই সারম্বরে শুরু হয় বাংলা সাহিত্যের সর্ব বৃহৎ উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মাসব্যাপী মেলায় এবার শুরুর দিকে কিছুটা ফাঁকা থাকলেও প্রথম সপ্তাহ পেরুতেই জমজমাট হয়ে ওঠে লেখক-পাঠকদের পদচারণায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ।



শুরুর দিকে বৃষ্টি কিছুটা বাঁধ সাধলেও দমিয়ে রাখতে পারেনি সাহিত্যপ্রেমীদের।

২১ ফেব্রুয়ারি এলেই পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে গ্রন্থমেলা। একুশের আগে বাঙালির ঐতিহ্য পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত রাঙিয়ে যায় বাঙালি লেখক-পাঠক-দর্শনার্থীদের প্রাণ।

‘যেতে নাহি দিব হায়!’ মাত্র চারদিন বাকি গ্রন্থমেলার। এর মাঝেই মেলায় শুরু হয়েছে ভাঙনের সুর। শেষ ভাগে এসে যেন বেশি প্রিয় হয়ে উঠছে বইমেলা। যে কারণে ২৪ তম দিনে মেলার প্রথম ভাগেই পাঠক সমাগম ছিল অন্যান্য সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।

সোমবারের নতুন বই
সোমবার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৪তম দিনে সাতটি গল্প, সাতটি উপন্যাস, ১০টি প্রবন্ধ, ২৩টি কবিতা, দুটি গবেষণা, ৪টি ছড়া, ৪টি শিশুসাহিত্য, ৬টি জীবনী, ১টি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক, ১টি বিজ্ঞান বিষয়ক, ৩টি ভ্রমণ বিষয়ক, ৪টি স্বাস্থ্য বিষয়ক, ৩টি রম্য/ধাঁধা, ২টি অনুবাদ এবং ১৪টি অন্যান্য বইসহ মোট ৯১টি নতুন বই এসেছে মেলায়।

চারুলিপি প্রকাশন থেকে প্রকাশিত সৈয়দ শামসুল হকের কাব্যগীতি  ‘চম্পাবতী’, আলপনা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত সুফিয়া কামালের প্রবন্ধ ‘নির্বাচিত প্রবন্ধ’, সুবর্ণ প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত লে. জে. মাহবুবুর রহমানের (অব.) প্রবন্ধ ‘সমকালীন ভাবনা’সহ ৯১টি নতুন বই পাওয়া যাচ্ছে মেলার স্টলগুলোতে।



নজরুল মঞ্চের আয়োজন

অ্যাডর্ন পাবলিকেশন থেকে প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি’র মোড়ক উন্মোচন করেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, সাইমন জাকারিয়ার নাট্যচিন্তা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-এর মোড়ক উন্মোচন করেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, কবি আসাদ মান্নান, কবি ফারুক মাহমুদ, অধ্যাপক হারুনুজ্জামান, জয়নাল হোসেন, শিল্পী সৈয়দ ইকবাল, এবিএম নূরুল হক, কবি মোহন রায়হান। এছাড়াও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নজরুল মঞ্চে মোট ৩৮টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

মূল মঞ্চের আয়োজন
বিকেল চারটায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বঙ্কিমচন্দ্র: পিঞ্জরের বয়ান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করে অধ্যাপক মাসুদুজ্জামান বলেন, বঙ্কিমচন্দ্র যথার্থই বুঝেছিলেন, আমাদের এই পৃথিবী সীমাবদ্ধ, মুক্ত নয়। মানুষকে এই পৃথিবীর সীমাবদ্ধতাকে বুঝতে হবে। আর এই পৃথিবীকে বুঝতে পারলেই মানুষ নিজের আত্মপরিচয়কে উপলব্ধি করতে পারবে।

তিনি বলেন, তার কালজয়ী উপন্যাসমূহে আত্মপরিচয়ের এমন উদ্বোধনের পাশাপাশি দেশকে তিনিই প্রথম মাতৃরূপে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। বাংলা ভাষা ও বিষয়ের পরিসরকে বঙ্কিম এতটাই বাড়িয়ে দিয়েছিলেন যে তার ওপর ভিত্তি করে রবীন্দ্রনাথের মতো চিরস্মরণীয় প্রতিভার আবির্ভাব সম্ভব হয়েছিল।

আলোচকগণ বলেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তার উপন্যাসের মধ্য দিয়ে আধুনিক বাংলা সাহিত্যের ভিত্তি রচনা করেছেন। উপন্যাসের আধুনিক রচনারীতির সঙ্গে ভাষার অনন্যতা যুক্ত হয়ে বঙ্কিমসাহিত্য আমাদের শিল্পভুবনকে করেছে সমৃদ্ধ। শুধু উপন্যাস নয়, চিন্তামূলক রচনার মধ্য দিয়েও তিনি আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিকতার জগতে যোগ করে নতুনতর মাত্রা।

আলোচকগণ বলেন, সাময়িক কিছু সীমাবদ্ধতা হয়তো তাকে বিচলিত করেছে কিন্তু চিরকালের বিচারে বঙ্কিমচন্দ্র এক অসামান্য শিল্পীর মার্যাদা পাবেন।

সভাপতির বক্তব্যে সৈয়দ শামসুল হকের সভাপতিত্বে  আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুব্রত বড়ুয়া, খালিকুজ্জামান ইলিয়াস, ইমানুল হক এবং জাকির তালুকদার।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে মানস করের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘একতাঙ্গন’ এবং সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সুরের আলো সংগীত একাডেমী’।

এছাড়া সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী রফিকুল আলম, আজিজুর রহমান তুহিন, বুলবুল ইসলাম, ফারহানা আক্তার শার্লি, জ্যোৎস্না জ্যোতি, স্বাতী সরকার, শামীমা পারভীন শিমু, শিমুল সাহা এবং ক্যামেলিয়া সিদ্দিকা।
যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন বিশ্বজিৎ সরকার (তবলা), মো. হাসান আলী (বাঁশি), আবু কামাল (বেহালা), নাজমুল আলম খান (মন্দিরা) এবং ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড) ।

মঙ্গলবারের আয়োজন 
মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘আবদুশ শাকুর’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপনে মফিদুল হক এবং আলোচনায়  করুণাময় গোস্বামী, মাহবুব আলম, রাশেদ রউফ এবং আহমাদ মাযহারের অংশগ্রহণ করার কথা রয়েছে। সভাপতি হিসেবে দ্বিজেন শর্মার অংশ গ্রহণেরও কথা রয়েছে। সন্ধ্যায় যথারীতি পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।  

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।