মেলা প্রাঙ্গণ থেকে: দেখতে দেখতে ২৫তম দিন পার করলো বাঙালির প্রাণের অমর একুশে গ্রন্থমেলা। আর মাত্র তিনদিন বাংলা একাডেমি-সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণে থাকবে বইপ্রেমীদের পদচারণা।
মঙ্গলবার গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে দেখা যায়, বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলার দুই অংশের প্রায় সব স্টলেই পাঠক-দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। পছন্দের বইটি যে প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে তার স্টল থেকে কার আগে কে কিনবে তা নিয়ে পাঠক-দর্শনার্থীদের মধ্যে ছিল প্রতিযোগিতা। স্টলের সামনে কাউকে ভিড় ঠেলে হুড়োহুড়ি করে আবার কাউকে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে বই কিনতে দেখা যায়।
অপরদিকে প্রকাশক ও বিক্রেতাদের ব্যস্ত দেখা যায় পাঠকদের চাহিদা অনুযায়ী তাদের হাতে পছন্দের বই তুলে দিতে। একটু যেন পাশ ফিরে তাকানোরও ফুসরত নেই তাদের।
বিক্রেতারা বলছেন, সাধারণত প্রতি বছরই মেলার শেষ সময় পাঠক-ক্রেতার ভিড় লক্ষ্য করা যায়। কারণ মেলার শুরুতে যারা ক্যাটালগ সংগ্রহ করে বই পছন্দ করে রাখেন তারা মেলার শেষ সময়ে সেসব বই কিনতে মেলায় আসেন। আর এখন যারা মেলায় আসছেন তাদের সবাই ক্রেতা। তাই শেষ সময়ে বিক্রিও বেশ ভালো।
মেলায় বই কিনতে এসেছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা শবনম জাহান। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এবারের মেলায় এর আগেও একবার এসেছিলাম। তবে সেদিন অল্প কয়েকটি বই কিনেছিলাম এবং নতুন বইয়ের ক্যাটালগ সংগ্রহ করেছিলাম। এছাড়া পত্রিকা থেকেও কিছু বই পছন্দ করে তার একটি তালিকা করেছি। আজ সে তালিকা ধরেই বই কিনতে মেলায় এসেছি।
জোনাকি প্রকাশনীর প্রকাশক মঞ্জুর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, আজ মেলায় বিক্রি অনেক ভালো। শেষ সময় হওয়ায় এখন যারা মেলায় আসছেন তারা সবাই বইয়ের ক্রেতা। তারা স্টলে স্টলে ঘুরে বই দেখছেন এবং কিনছেন।
মঙ্গলবার মেলায় ১৩৪টি বই
অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৫তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৩৪টি। আজ প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক বইগুলো হচ্ছে গল্প ২০টি, উপন্যাস ২১টি, প্রবন্ধ ৮টি, কাব্যগ্রন্থ ৩২টি, ছড়া ১১টি, শিশুসাহিত্য ২টি, জীবনী ১টি, রচনাবলী ১টি, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ৩টি, নাটক ৩টি, বিজ্ঞান বিষয়ক ১টি, ভ্রমণ বিষয়ক ২টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য ১টি, কম্পিউটার বিয়সক ১টি, রম্য/ধাঁধা ৩টি, ধর্মীয় ১টি, অনুবাদ ৩টি ও অন্যান্য ১৮টি।
এছাড়া আজ মেলার নজরুল মঞ্চে ২৫টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
মেলামঞ্চের আয়োজন
আজ বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে ‘আবদুশ শাকুর: তাহার কথা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মফিদুল হক। আলোচনায় অংশ নেন করুণাময় গোস্বামী, মাহবুব আলম, রাশেদ রউফ ও আহমাদ মাযহার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দ্বিজেন শর্মা।
প্রাবন্ধিক মফিদুল হক বলেন, বহুধা-বিস্তারি আবদুশ শাকুর বাংলাদেশের সাহিত্যধারায় যোগ করেছেন আলাদা বিষয়, ভাষা নির্মাণে ছিলেন যথেষ্ট আলাদা, সক্রিয় হয়েছেন শব্দসম্ভার বর্ধনে। স্থূল লোকপ্রিয়তার পথ বর্জন করে তিনি বেছে নিয়েছিলেন গভীরতর সাধনার পথ। তার এই পথ চলা মোটেও কুসুমাস্তীর্ণ ছিলো না; নিবিষ্ট থেকে আবদুশ শাকুর কথাসাহিত্য, রসরচনা, রবীন্দ্রগবেষণা, নিসর্গসাধনাসহ বিচিত্র ক্ষেত্রে যোগ করেছেন বিশিষ্ট মাত্রা। আমাদের সাহিত্যের এক বিরল বহুমুখী ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবদুশ শাকুর স্মরণীয় হয়ে থাকবেন চিরদিন।
আলোচকরা বলেন, আবদুশ শাকুর ব্যতিক্রমের ব্যতিক্রম। সোজা পথে সাফল্য অর্জনের বাসনা তার ছিল না তাই শিল্পের বিচিত্রবিধ মাধ্যমে বিচরণ করেছেন, সংযোগ ঘটিয়েছেন অকল্পনীয় শ্রম ও মেধার। প্রথাগত বাঙালির আলস্য ও শ্রমবিমুখতার নেতিবাচক ঐতিহ্যকে গুঁড়িয়ে দিয়ে তিনি অগ্রসর হয়েছেন তার সৃজনপথে। প্রচারবিমুখ শাকুর সমকালে তার যোগ্য প্রাপ্য পান নি। কিন্তু মননশীল পাঠকের মাঝে দিন দিন তার রচনার প্রতি যে আগ্রহ তৈরি হচ্ছে তা সত্যি আশাব্যঞ্জক।
সভাপতির বক্তব্যে নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মা বলেন, আবদুশ শাকুর এক বিরলতম বাঙালি প্রতিভা। নিসর্গ-গবেষণা তার কোন সৌখিন কাজ ছিল না বরং নিসর্গের মতো জীবনকে সবুজ করার ব্রত নিয়েই তিনি তার জীবনসাধনার পথ নির্ধারণ করেছিলেন। বাংলা একাডেমি এই গুণী শিল্পজনকে স্মরণ করে গুরুদায়িত্ব পালন করেছে।
এছাড়া সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে শেখ উজ্জ্বলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাঙালি ফাউন্ডেশন, শামীমা পারভীনের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘সরকারী সংগীত কলেজ, ঢাকা, সালাউদ্দীন বাদলের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ আওয়ামী শিল্পীগোষ্ঠী’ এবং অনিক বোসের পরিচালনায় স্পন্দন সাংস্কৃতিক সংগঠন-এর নৃত্যশিল্পীরা বিভিন্ন গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেন।
বুধবারের আয়োজন
বুধবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে জামদানি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. ফিরোজ মাহমুদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন রুবী গজনবী, বিবি রাসেল ও শাওন আকন্দ। সভাপতিত্ব করবেন ড. নিয়াজ জামান।
সন্ধ্যায় পরিবেশিত হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলা একাডেমিতে দুষ্প্রাপ্য বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি
বুধবার বেলা আড়াইটায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির আওতায় বিশ্বের মহাবিপন্ন তালিপাম বৃক্ষের দুটো চারা এবং দুষ্প্রাপ্য নাগলিঙ্গম বৃক্ষের চারা রোপণ করবেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকবেন বিপন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণী সংরক্ষণ ফাউন্ডেশন-বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আখতারুজ্জামান চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ২১১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৪