ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

অনলাইনেই ভাটা লিটলম্যাগে

আদিত্য আরাফাত, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫
অনলাইনেই ভাটা লিটলম্যাগে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বইমেলা থেকে: বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ ও পুরনো ভবনের মাঝের জায়গায় নজরে পড়বে বিশাল এক বহেড়া গাছ। এই গাছটি কেন্দ্র করেই নির্মিত হয়েছে ‘লিটল ম্যাগ চত্বর’।



গেল কয়েক বছর ধরেই বইমেলাস্থল বাংলা একাডেমির বহেড়া তলায় বসছে লিটল ম্যাগ চত্বর। যদিও এর কেতাবি নাম ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চত্বর’। কিন্তু একে সবাই লিটল ম্যাগ চত্বর বলেই সম্বোধন করে।

লিটল ম্যাগ মানেই প্রথাবিরোধী অবস্থান। এ অবস্থানে রয়েছেন একশ্রেণীর লেখক। প্রাতিষ্ঠানিক ধারার বাইরে যারা নিজের মতো করে কেবল ছোট কাগজে সাহিত্য চর্চা করেন। মূলত পাঠকই লিটল ম্যাগের লেখক; লেখকই এর পাঠক। বাংলাদেশে যেহেতু লেখকের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, তাই মেলায় এসব কাগজের বিক্রিও কম হতো না। তবে বিক্রির সেই চিত্র এখন আর নেই। বিক্রিবাট্টায় ভাটা পড়ায় মেলা ঘিরে বিগত বছরগুলোর মতো এখন আর প্রকাশও হচ্ছে না এসব ম্যাগাজিন।

মেলার ১২দিন পর্যন্ত লিটল ম্যাগ প্রাঙ্গণ ঘুরে বিক্রির যে চিত্র পাওয়া গেছে তা অনেকটা হতাশাজনক। কয়েকটি স্টলে মেলার ১২ দিনে ১২টি সাহিত্য পত্রিকা বিক্রি না হওয়ার রেকর্ডও রয়েছে।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা হরতাল অবরোধে জমলেও জমেনি লিটলম্যাগ চত্বর। এর কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, লিটলম্যাগকেন্ত্রিক যারা সাহিত্য চর্চা করতেন তারা এখন অনলাইনে সাহিত্য চর্চা করছেন। ফেসবুক, ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখে পাঠকের সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়। তাই অনেকেই অনলাইনকেই লেখালেখির মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছেন।

এসব বিষয়ে কথা হয় লিটলম্যাগ আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত কবি শাবিহ মাহমুদের সঙ্গে। অনলাইনের কারণে লিটলম্যাগ কেন্দ্রিক সাহিত্য চর্চা কমে গেছে এমনটা স্বীকার করে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এটা আসলে খুব পীড়া দেয়। অনলাইনের বড় একটা প্রভাব রয়েছে লিটলম্যাগের পাঠক কমার ক্ষেত্রে। একসময় মেলা ঘিরে অসংখ্য ছোট কাগজ বের হতো। এখন হচ্ছে না। ’

লিটলম্যাগ চত্বরে কথা হয় তরুণ সাহিত্যিক নেহরু পালের সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘হতাশার কিছু নেই। যারা লিটলম্যাগে লিখতেন তারা কেউ কেউ ভার্চুয়াল লিটলম্যাগ করেছেন। সেখানে লিখছেন কেউ কেউ। এছাড়া বিভিন্ন অনলাইন সংবাদ মাধ্যমের সাহিত্য বিভাগেও একসময়ের লিটলম্যাগে লিখিয়েরা লিখছেন। ’

লিটলম্যাগ চত্বরে বিক্রিতে মন্দাভাব থাকলেও সন্ধ্যায় এ প্রাঙ্গণ তরুণ সাহিত্যকর্মীদের পদচারণায় মুখর হয়।

মেলাপ্রাঙ্গণ ধূমপানমুক্ত হলেও এ জায়গাটিতে আর নিয়ম মানা সম্ভব হয় না। তাই তো একটু পরপর চা আর সিগারেটের ধোঁয়ায় চলছে আড্ডা। বিকাল তিনটার সময় মেলা শুরু হওয়ার সময় থেকে রাতে নিরাপত্তাকর্মীরা বাইরে যাওয়ার অনুরোধের আগ পর্যন্ত চলতে থাকে জম্পেশ এ আড্ডা।

এবার ৫৪টি লিটলম্যাগ স্টল দিয়ে সাজানো হয়েছে লিটলম্যাগ চত্বর। এবার এ চত্বরে অবস্থিত স্টলগুলোর মধ্যে আছে বেহুলা বাংলা, শব্দতরী, নির্মাণ, চারবাক, জংশন, শুদ্ধস্বর, উডুঙ, দাঁড়কাক, বনপাংশুল, একবিংশ, স্বপ্নবর্ণ, মেঘফুল, কৃষাণ, দোলফ, চন্দ্রছাপ, মেঘ, লোক, চৈতন্য, চিহ্ন, অবাক, চালচিত্র, কবিতাচর্চা, প্রান্তস্বর, আগুনমুখা, উন্মুক্ত, ধমনি, ম, কবি, ভিন্নচোখ, শব্দগুচ্ছ, দ্রষ্টব্য, কবিতাবাংলা, শালুক, চর্যাপদ, মত ও পথ, থিয়েটার, গল্পকথা, তৃতীয়চোখ, নন্দন, সুন্দরম, শাহবাগ, প্রতিবুদ্ধিজীবী, নিসর্গ, গাণ্ডীব, ঊষালোক, কালেরধ্বনি, সাম্প্রতিক, খেয়া, দিগন্ত, অনুপ্রাণ, হুচ, কবিতাপত্র, শিরদাঁড়া এবং মাঝখানে গোল করে একটি উন্মুক্ত স্টল রাখা হয়েছে। সেখানে যে কেউ বিক্রির জন্য লিটলম্যাগ রাখতে পারেন।

বৃহস্পতিবারের বইমেলা
মাঘের শেষ ও বইমেলার ১২তম দিনে লেখক-পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলা ঘটেছিলো। জনপ্রিয় লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ইমদাদুল হক মিলন, কবি আসাদ চৌধুরীসহ অনেক সাহিত্যিক এসে মেলাকে প্রাণবন্ত করেছেন। এই সময় মেলায় অটোগ্রাফ দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন মুহম্মদ জাফর ইকবাল। মেলার প্রবেশদ্বার পার হওয়ার পরই মুহম্মদ জাফর ইকবালকে ঘিরে ধরে ভক্তরা। দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে অগণিত ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের অটোগ্রাফ দেন তিনি। এসময় তার পাশে ছিলেন লেখকের সহধর্মিণী।

অন্যদিকে অনন্যা প্রকাশনের প্যাভিলিয়নে বসে জনপ্রিয় লেখক ও দৈনিক কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলনকেও দেখা গেছে অটোগ্রাফ দিতে।

এদিন মেলায় এসেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম।

শত বই
অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১২তম দিনে মোট ১০০টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে উপন্যাস ১৩টি, গল্প ২২টি, কবিতা ৩১টি, প্রবন্ধ ৩টি, গবেষণা ৪টি, ছড়া ২টি, জীবনী ৫টি, নাটক একটি, ভ্রমণকাহিনি একটি, ইতিহাস বিষয়ক একটি, রাজনীতি বিষয়ক ২টি, স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি, সায়েন্স ফিকশন ৩টি এবং অন্যান্য ১১টি।

উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে- মহাকাল থেকে আবদুল গাফফার চৌধুরীর গল্পগ্রন্থ ‘মেয়ে’, শাহজী প্রকাশনী থেকে নির্মলেন্দু গুণের ‘দূর হ দুঃশাসন’, অন্যপ্রকাশ থেকে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের ‘মেঘশিকারি’, অনন্যা থেকে হাবীবুল্লাহ সিরাজীর ‘শ্রেষ্ঠ কবিতা’, দি রয়েল পাবলিশার্স থেকে সৈয়দ ইকবালের ‘নাচে টরেন্টো’, আগামী প্রকাশনী থেকে শামসেত তাবরেজীর ‘অশ্রু মোবারক’, শুদ্ধস্বর থেকে ওয়াসি আহমেদের ‘নির্বাচিত গল্প’, শাহাবুদ্দীন নাগরীর ‘ফুলশার্ট’, সময় প্রকাশন থেকে জাহানারা পারভীনের ‘স্কুল বলতে তোমাকেই বুঝি’, পাঠসূত্র থেকে শোয়ায়েব মুহামদের ‘ঘুড়িযাত্রা’ প্রভৃতি।

মোড়ক উন্মোচন
বৃহস্পতিবার নজরুল মঞ্চে মোট চারটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে। এছাড়া চারুলিপি থেকে প্রকাশিত শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের ‘শিক্ষা : লক্ষ্য অর্জনে যেতে হবে বহুদূর’ বইট বাংলা একাডেমির শামসুর রাহমান হলে মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এসময় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, শামসুজ্জামান খানসহ অনেকেই উপস্থিত ছিল।

মূলমঞ্চের আয়োজন
গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় শিশু সংগঠক রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে  প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন খালেক বিন জয়েনউদদীন। আলোচনায় অংশ নেন মাহবুব তালুকদার, আলী ইমাম, লুৎফর রহমান রিটন এবং প্রত্যয় জসীম। সভাপতিত্ব করেন শিল্পী হাশেম খান।


শুক্রবার শিশুপ্রহর
শুক্রবার মেলার তৃতীয় শিশুপ্রহর। সকাল ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত চলবে বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিশু প্রহর। শিশুদের বইকেনায় উৎসাহ দেওয়ার জন্য শিশু প্রহর ঘোষণা করলেও এদিন সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্য্যন্ত মেলার দুয়ার খোলা থাকবে।

আলোচনা অনুষ্ঠান
বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে কবি আবুল হোসেন শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন ড. তারেক রেজা। আলোচনায় অংশ নেবেন বায়তুল্লাহ কাদেরী, অনু হোসেন এবং হিমেল বরকত। সভাপতিত্ব করবেন মনজুরে মওলা।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৫

** মেলায় শিক্ষামন্ত্রীর ‘শিক্ষা: লক্ষ্য অর্জনে যেতে হবে বহুদূর’
** ‘মেলা বলতে এখনো বাংলা একাডেমি চত্বরকেই বুঝি’

** মেলায় এলে অতীতে ফিরে যাই
** উৎস প্রকাশনীর পুরস্কার প্রদান

** পাইরেটেড বইয়ের বিরুদ্ধে টাস্কফোর্সের অভিযান

** মেলায় এত্ত মানুষ!

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।