রঙবাহার। শুনে মনে হবে কোনো পুরোনো ধাচের উপন্যাস বুঝি।
কিন্তু অধুনা সময়ের আরও অধুনা বিষয় ও প্রেক্ষাপট নিয়ে রচিত উপন্যাস এই রঙবাহার। আর উপন্যাসিকের এটি কোনো ছদ্মনাম নয়। বিক্রমাদিত্য রাজধানী ঢাকার একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। তার উপন্যাসে উঠে এসেছে কিশোর মনের কথকতা।
বইয়ের প্রচ্ছদে রঙের বাহার আছে। ফলে বাহারি রঙ খুঁজতে যারা মলাট উল্টে পড়তে শুরু করবেন তারা শুরুতে একটু হোঁচট খাবেন। রঙ কোথায়? এতো শুরুতেই মন খারাপ এক কিশোরের কথা! তার ব্যাজার মন ভালো করতে উঠেপড়ে লেগেছে কাছের বন্ধুটি। শুভ নামের এই কিশোরকে কেন্দ্র করেই রঙবাহার তার ডালপালা ছড়িয়েছে। তবে তা বয়সের সীমা ছাড়ায় নি। একটি কিশোর মনের ভাবনাই নানান রঙে ধরা দিয়েছে, উপস্থাপিত হয়েছে। স্কুল, খেলার মাঠ, পড়ার ঘর, পাঠের বই, মায়ের শাসন এসবই উপন্যাসের উপজীব্য কিন্তু সবকিছুতেই আধুনিক সময়ের ছোঁয়া। ফেসবুক, ইন্টারনেট, চ্যাটিং, পোকিং টানতে গিয়ে যৌনতার দিকটিও এসেছে মাত্রা মেনে। এ সময়ে তরুণদের মাঝে যে ভাষার ব্যবহার তারও ব্যবহার রয়েছে। আর বন্ধুরা বন্ধুরা এক হলে যা হয়, বন্ধুদের মধ্যে কেউ বোকা, কেউ নোংরা, কেউ বুদ্ধিমান, কেউ চালাক, কেউ বিরক্তিকর চরিত্র থাকে সেটাও উপস্থাপিত। তবে সব কিছুর মূলে উপন্যাসের থিম, যা মূলত কিশোরের কষ্টকাহিনীই উর্ধ্বে তুলে ধরেছে।
কিশোরদের জন্য লেখা আর কিশোরদের নিয়ে লেখার মধ্যে পার্থক্য থাকে। শিশু কিশোরদের জন্য লেখায় সচেতনতায় যেসব দিক লেখকরা এড়িয়ে থাকেন, কিশোরজীবন নিয়েই লেখা বলে এই উপন্যাসে সেসবও এসেছে।
সমাজ-রাজনীতি নিয়ে এখনকার কিশোর-তরুণরা খুব একটা ভাবে না এমন কথা প্রচলিত, কিন্তু বিক্রমাদিত্য জানাচ্ছে তার উপন্যাসের চরিত্রগুলো তেমন নয়, সমাজ রাজনীতি তাদের ভাবনাকে যেমন প্রভাবিত করে তেমনি কিছু কিছু বিষয়ে তাদের নিজস্ব মতও থাকে।
লেখকের বা উপন্যাসিকের ছায়ায় যে প্রধানচরিত্র রচিত হয়েছে সে আসলে স্বাভাবিকের চেয়ে ভিন্ন কিছুই। আর প্রেমের যে চিত্রটি তৈরি হয়েছে সেটি কিন্তু সত্যিকারের প্রেম, কিশোরদের প্রেমের মতো আজ আছে কাল নেই গোছের নয়। ফলে শুরুর ভাগেই যে বর্যার আবির্ভাব সে বর্ষার আলিঙ্গনেই শেষ হয়েছে উপন্যাস।
বইটির অভিনব দিকটি হচ্ছে একজন কিশোরই লিখছেন কিশোরদের কথা। ফ্ল্যাপে লেখা হয়েছে, কৈশরে দাঁড়িয়ে কৈশরকে তুলে ধরা বাংলা সাহিত্যে প্রায় বিরল ঘটনা। সত্যিই তাই, বিক্রমাদিত্য সেই বিরল ঘটনার স্রষ্টা।
এটি বিক্রমের তৃতীয় বই। এর আগে ভুতলজি কিংবা চিত্তশুদ্ধি ও অরূপকথা নামে তার দুটি গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছে। এই বিবেচনায় বলা যায় বিক্রমাদিত্য লেখক হয়ে উঠছে। তবে তাকে হাঁটতে হবে বহুদুর, আরও ভালো লিখতে হলে পড়তেও হবে বহু কিছু। ঘটনার কিংবা মনের ভাব বর্ণনাকে সাহিত্যরূপে প্রকাশ করতে হবে। বিক্রমাদিত্য সেই অর্জন নিশ্চিত করবে তার আরও আরও লেখালেখির মধ্য দিয়ে এমনটাই প্রত্যাশা।
একুশে বইমেলার ভাষাচিত্র স্টলে মিলছে বিক্রমাদিত্যের রঙবাহার।
বাংলাদেশ সময় ১৬৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৫