বইমেলা থেকে: অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৫-য় অ্যাডর্ন থেকে বেরিয়েছে জয়শ্রী সরকারের প্রথম উপন্যাস ‘অম্বা আখ্যান’। উপন্যাসটির গল্প নেওয়া হয়েছে হিজরাদের ভেতরকার জীবন যাপন থেকে।
অম্বা আখ্যানের প্রচ্ছদ এঁকেছেন শিল্পী চারু পিন্টু। ১১০ পৃষ্ঠার এ উপন্যাসটি এ বছরই লেখা হয়েছে বলে জয়শ্রী সরকার জানান। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে অ্যাডর্নের স্টল থেকে বিনিময় মূল্য ২২০ টাকা দিয়ে বইটি সংগ্রহ করা যাবে। স্টল নাম্বার ২২২-২২৪।
হিজরাদের নিয়ে উপন্যাস লেখার ব্যাপারে জানতে চাইলে লেখক বলেন, ‘এটা লেখার প্রেরণা জুগিয়েছে আমার ছোটবেলার উঠোন, উঠোনে ঘুরে বেড়ানো সেই সকল অদ্ভুত রকম দেখতে মানুষগুলো। ছোটবেলায় উঠানে এসে উলু দিত একদল মানুষ। আমরা ছুটে গিয়ে দরজার আড়ালে দাঁড়াতাম।
মা খঞ্চা পেতে চাল আলু পয়সা, আর শিশি থেকে সরিষার তেল ঢেলে দিত। সেই থেকে বিস্ময় আর বিস্ময়। বড় হয়ে পূজার একটা ম্যাগাজিনে “এক অন্য মানুষের গল্প” নামে একটি প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে হিজরাদের কাছে গেলাম। সেই থেকে বিস্ময়ের অতলে তল অনুসন্ধান। সেই অনুসন্ধানের ফসল এই অম্বা আখ্যান।
এই অম্বা আখ্যানে শিখণ্ডি জীবনের সুখ দুঃখ প্রেম ভালোবাসা অর্থাৎ মানবজীবনের সকল চিত্র ফুটিয়ে তুলবার চেষ্টা করেছি আমি। জোনাকীর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের সকল ধাপে যে সংগ্রাম তা তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি। মূলত বারবার যেটি আমি বলতে চেয়েছি বৃহন্নলা, হিজরা, শিখন্ডি , খোঁজা, গুরমা যে নামেই বলি তারা মানুষ। শিখন্ডিদের শরীর পাল্টে. কিন্তু মন কখনও পাল্টে না। ’
হিজরাদের ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, তাদের বন্ধুর জন্যে মন কেমন করে, তাদের মা বাবার জন্যে মন কেমন করে, তাদের সংসার করতে ইচ্ছে করে, তাদের মন সোহাগ চায়, প্রেম চায়, তাদের মা হতে ইচ্ছে করে, বাবা হতে ইচ্ছে করে তাদের আমাদের মতই সুষ্ঠু সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে ইচ্ছে করে। ’
তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই একটি গবেষণা কাজে বাংলাদেশের কয়েকটি স্থানে হিজরাদের সঙ্গে নিয়মিত মিশতে ও থাকতে হয়েছে তাঁকে। ফলে তিনি ওই জীবনের অনেক কানাঘুপচি প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা দিয়ে জানেন। হিজরাদের ব্যাপারে বাইরে থেকে দৃশ্যমান নয়, এমন অনেক কিছুরই অনুসন্ধান এবং মানবিক মুক্তির দিকে উপন্যাসটির গন্তব্য নিহিত।
বইমেলা কেমন লাগছে, বই প্রকাশের আগের ও পরের অনুভূতি একজন লেখকের জন্য কেমন—জানতে চাইলে জয়শ্রী সরকার বলেন, ‘বইমেলায় তো প্রথমদিন থেকেই আসছি। এ বছরের প্রকাশিত বইটি যদিও প্রকাশ হয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি। এখন বই প্রকাশের আগের ও পরের অনুভূতি কিছুটা তো ভিন্নরকমই। ’
তিনি বলেন, বই তো শুধু কালি আর কাগজ নয়। বই দীর্ঘ সকাল, দুপুর রাতের ফসল। বই একটি জীবনের একদিনের গল্পও নয়। জীবনের দীর্ঘ জীবনের সুখ দুখ স্বপ্নের গল্প। সেই জীবন অক্ষরের বৃত্তে বাঁধতে হয়। সে অর্থে নবজাতকের আগমনে পরিবারের যেমন আনন্দ হয়, নতুন বইয়ের জন্যেই বোধকরি লেখকের তেমনই আনন্দ হয়। তাই অম্বা আখ্যান প্রকাশের পর ভিন্ন এক আনন্দ তো হয়েছেই। সেটা আগে আসার চেয়ে যথেষ্ট অন্যরকম। ’
দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও অব্যাহত হরতাল অবরোধ প্রসঙ্গের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এইবারের বইমেলায় সবচেয়ে দুঃখ লেগেছে দেশের পরিস্থিতি। গুপ্ত পেট্রোল বোমায় যখন দেশ পোড়ে তখন মেলায় মন যে আসলে তেমন ভাবে থাকে তা নয়। পোড়া মন নিয়ে কখনও কখনও মেলায় আসতে ক্লান্ত লেগেছে। অজানা আশঙ্কায় ভীতও থাকতে হয়েছে সারাক্ষণ।
প্রথম বইমেলায় আসার স্মৃতি জানতে চাইলে, ‘প্রথম বইমেলায় এসেছিলাম ২০০৬-এ। সেবারই আমার শূন্যতা বইটি আসে। প্রকাশ করেছিল ‘বইপত্র’। সেবার জলপাইগুড়িতে বেড়াতে গিয়েও বই বের হওয়ার আনন্দে জলদি ফিরে আসি। কিন্তু মেলায় এসে দেখি বইয়ের দোকানে তালা। কারণ ‘বইপত্র’ সেবার নাকি সরকার বিরোধী কী এক বই ছেপেছিল। পরে মন খারাপ নিয়ে ফিরে গিয়েছিলাম। ’
উপন্যাসটি সম্পর্কে একবাক্যে যদি কিছু বলবার থাকে:
‘অম্বা আখ্যান যদিও উপন্যাস কিন্তু এর ভেতরকার তথ্য উপাত্ত তত্ত্ব সবই গবেষণার আলোকে সংগৃহীত এবং বিশ্বাসযোগ্য। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৫