অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: বসন্তের দুপুর, তবু মাথার ওপর রাগী রোদ্দুরের উস্কানিতে তপ্ত হাওয়ার দাপট। সদলবলে আসা বইপ্রেমীরা বই দেখছেন, কিনছেন, আর এদিক-ওদিক একটু ছায়ার খোঁজও করছেন।
মেলার পরিসর এবার ব্যাপক। রোদে-গরমে ঘোরাঘুরি বন্ধ নেই। কেউ ছাতা মাথায়, কেউ আঁচলের আড়ালে চোখ লুকাচ্ছেন। কেউ আবার গাছের নিচে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন। বাংলা একাডেমির ভবনের নিচে, নজরুল মঞ্চের আশেপাশে, কোনো স্টলের কোণের ছায়াটুকু দেখে দেখে জটলা করছেন আগতরা।
ছাতা নিয়ে যারা এসেছেন, তাদের বেশি সুবিধা হয়েছে, থাকতে পারছেন বেশি সময়। মায়েদের দেখা গেলো, আঁচলখানি শিশুর মাথায় টেনে দিচ্ছেন।
যেসব স্টলে ছায়া বেশি সেখানে ভিড়টাও বেশি। বই দেখা, কেনা ও ছায়ার আশ্রয় সব একসঙ্গে পেতে চাইছেন তারা। তাম্রলিপি, কাকলী, সময় প্রকাশনের অবস্থান গাছের নিকটে বলে ভিড়। সিসিমপুরের বটগাছের নিচেও কিছুটা ছায়া, অবশ্য সেখানে ভিড় ছোটদের মঞ্চ ঘিরে। সোহরাওয়ার্দীর যেসব অংশে ছায়া ও বসার একটু ব্যবস্থা আছে, সেখানে লোক সমাগম বেশি দেখা গেলো।
সকালে মেলা শুরুর পর শিশুদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেলেও দুপুরের দিকে কমতে থাকে। আরেকটু বেশি বয়সী, বিশেষ করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের ভিড়টা দুপুরে বেশি চোখে পড়ে।
বাংলা একাডেমি অংশের ক্যান্টিনে পানীয় এবং আইসক্রিমের চাহিদাও বেড়েছে গরমে। যারা খেতে ঢুকছেন, তারা একটু বেশি সময় নিচ্ছেন বলে জানান বিক্রেতারা। কারণ, এখানে ছায়া রয়েছে।
সোহরাওয়ার্দীর বাংলা একাডেমির দিকের ফেরানো গেট দিয়ে ঢুকতেই বড় জটলা চোখে পড়ে। চেনা চিত্রই সে গাছের ছায়ায়। জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বসেছেন, অটোগ্রাফ শিকারিরা তার বই কিনে অটোগ্রাফ ও ফটোগ্রাফ সংগ্রহ করছেন।
সিসিমপুরের ছোট্ট সবুজ মঞ্চে শিশুদের জন্য গানটি বাজানো হচ্ছে, সেই তালে তারা নেচে চলেছে। কয়েকজন বয়স্ক গরমে কষ্ট পাচ্ছিলেন, তাদেরকে পুলিশ সদস্যরা কন্ট্রোল রুমের ধারে কাছে ছায়া দেখে বসার পরামর্শ দিলেন।
কোনো কোনো পরিবার গরমে ক্লান্ত হয়ে বসার জায়গা দিতে স্টলেই অনুরোধ করছেন। বাড়তি চেয়ার দেখলে সেদিকে এগোচ্ছেন।
অভিনেত্রী ত্রপা মজুমদার মেলা ঘুরে দেখছেন। কন্যাশিশুর জন্য বই কিনে নিচ্ছেন। মেলার আয়োজন তার বরাবরই ভালো লাগে বলে বাংলানিউজকে বললেন। শিশুকন্যাকে নিয়ে তিনিও একটু ছায়াঘেরা স্টলগুলোতে ঢুকছেন।
‘যেহেতু রোদ-গরম বেশি হচ্ছে এ দিনগুলোতে, বসার ব্যবস্থা, খাবার পানি সরবরাহ এবং ছায়ার ব্যবস্থা করলে ভালো হবে’- বলেন আজিমপুরের ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দা আবুল ফজল চৌধুরী।
অবসরপ্রাপ্ত এ মানুষটি বইমেলায় আসেন দু’টি কারণে- বই দেখা এবং হাঁটার সুযোগ নিতে। আগের যেকোনো বারের চেয়ে এবারের মেলা বেশি গোছানো হয়েছে বলে বাংলানিউজকে বলছিলেন তিনি। সেই সঙ্গে বাকি দিনগুলোতে রোদ-গরমের ভোগান্তি কমাতে আয়োজকদের মনোযোগও আশা করছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬
এসকেএস/জেডএস
** ছুটির সকালে মেলায় শিশুপ্রহরের আমেজ