বইমেলা থেকে : বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে ফেরদৌস মাহমুদের চতুর্থ কবিতার বই ‘আগন্তুকের পাঠশালা’। তার মোট প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা পাঁচ।
কবি জানান, বইটিতে ৫৭টি কবিতা রয়েছে। কবিতার ভাব ও বিষয়কে সামনে রেখে বইটিকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
বইটি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে ফেরদৌস মাহমুদ বলেন, “এ বইয়ের কবিতাগুলোর একটি বৈশিষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ইমেজের ভেতর দিয়ে জীবন, ইতিহাস ও জগত সম্পর্কে নিজস্ব উপলব্ধিকে তুলে ধরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক অর্থহীন কথার মধ্য দিয়ে বড় কোনো অর্থকে ধারণ করার চেষ্টা।
এখানে যেমন হাওড়ের সৌন্দর্যের রূপ আছে, তেমনি আছে শূন্যতার উপলব্ধি। মৃত্যুকে নানাভাবে আবিষ্কারের চেষ্টা করা হয়েছে। ফ্রি-ভার্সের কবিতার পাশাপাশি বইটিতে আছে বিভিন্ন ছন্দ নিয়ে নিরীক্ষা। রয়েছে পুরান ঢাকার বাস্তবতা, শবেবরাত, লঞ্চ জার্নি, শাহবাগে দেখা একটি তালগাছ, জাফলংয়ে গিয়ে দূর থেকে ভারতের পাহাড় দর্শনের প্রতিক্রিয়ার মতো চলমান জীবনের খুব পরিচিত বিষয়কে কবিতা করে তোলার চেষ্টা। ”
তবে তার মতে, এসব চেষ্টা কতটা সফল হয়েছে তা পাঠকই ভালো বলতে পারবে।
আগের কবিতার বইগুলো থেকে এ বইয়ের পার্থক্য কী? জানতে চাইলে বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চিন্তুাজগত ও দৃষ্টিভঙ্গির অনেক বদল ঘটে। আগের বইগুলোর আমি আর আজকের আমির মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এই পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে মানুষ, প্রকৃতি ও জীবনকে দেখার ও বিশ্লেষণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। ”
তিনি বলেন, “আজ খুব সহজেই উপলব্ধি করতে পারি, দেখা জগতের কতখানি সত্যি আর কতখানি ছল। একটা সময়ে প্রকৃতির দিকে কেবল মুগ্ধ হয়ে তাকাতাম, আজ সুন্দর প্রকৃতির ভেতরকার বাস্তবতাকে উপলব্ধি করার চেষ্টা করি। কোনো বড় নদীর সামনে দাঁড়ালে এখন আর কেবল মুগ্ধ হই না, টের পাই নদীর ভাঙ্গন বহু বহু মানুষকে পথে বসিয়ে দেয়, নদীর ভাঙ্গন ঘর-বাড়ির সাথে সাথে বাপ-দাদার স্মৃতিচিহ্ন কবরও ভেঙে ফেলে। প্রকৃতিতে স্থায়ী বলে কোনো কিছু নেই, সমস্তই অস্থায়ী। ”
কবি হিসেবে মানুষ সম্পর্কে আপনার পর্যবেক্ষণ কী?
“দীর্ঘ দিন মানুষের সাথে মিশে এইটুকু উপলব্ধি করেছি—মানুষ বড় অসহায়, মানুষ বড় চতুর। মানুষের হাসি দুই প্রকার—সরল হাসি আর ডিপ্লোমেটিক হাসি। এই দুই হাসির ফারাক বুঝতে না পারলে পায়ে পায়ে বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়। ”
প্রসঙ্গটি ধরে পুনরায় নিজের বই সম্পর্কে বলেন, “প্রকৃতি ও মানুষ সম্পর্কে আমার চিন্তাগত পরিবর্তনের প্রতিফলনই আগের বইগুলির সঙ্গে এই বইয়ের বড় পার্থক্য তৈরি করে দিয়েছে। বইটিতে বিভিন্ন ছন্দ নিয়ে কিছু নিরীক্ষা করার চেষ্টা করেছি। হয়তো এই নিরীক্ষা সফল হয়েছে, হয়ত হয়নি। তবে এই কাজ আগের বইগুলোতে করিনি। ”
বইটি কিভাবে লিখলেন? কোন সময়ে লেখা?
“একজন লেখকের বড় প্রতিপক্ষ হচ্ছেন তিনি নিজে। লেখকের সারা জীবন ধরে লড়াই চলে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। তাই একটি বইয়ের পর যখন অপর একটি বই লেখা হতে থাকে, তখন একজন কবি বা সাহিত্যিকের নিজের সঙ্গে নিজের লড়াইয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়। পুরনো বইটি নতুন বইটির জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। নতুন বইটি লেখকের কাছে কাজের ভ্যারিয়েশন দাবি করে। এবার যখন পাণ্ডুলিপি তৈরি করি, আমার জন্য পুরনো বইগুলো, বিশেষত প্রথম বই ‘সাতশো ট্রেন এক যাত্রী’ একটি প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড়িয়েছিল।
আগন্তুকের পাঠশালার আগে আমার যে তিনটি কবিতার বই প্রকাশিত হয় তার মধ্যে ‘সাতশো ট্রেন এক যাত্রী’ হচ্ছে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত নাম। আমার যে স্বল্প সংখ্যক পাঠক রয়েছেন, তাদের মুখে যখন দশ বছর আগে প্রকাশিত এই বইটির কথা শুনি, তখন নিজের কাছেই প্রশ্ন জাগে, দশ বছরে কি আমি একটুও এগোইনি?
এই বইয়ের কবিতাগুলো ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সালের জানুয়ারির মধ্যে লেখা। তবে পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছি গত এক বছর ধরে। এ সময়টাতে আমি তিনটি চাকরিতে জয়েন করেছি এবং স্বল্প সময়ের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছি। অর্থাৎ এই এক বছর অধিকাংশ সময়ই আমি ছিলাম বেকার, এ সময়ই বেশিরভাগ কবিতা লেখা হয়। ২০০৬ সালের ‘সাতশো ট্রেন এক যাত্রী’র পর সম্ভবত এই পাণ্ডুলিপিটিই সবচেয়ে মনোযোগ দিয়ে তৈরি করতে পেরেছি। ”
বই প্রকাশের জন্য বইমেলার সময়টিকেই বেছে নিলেন কেন? জানতে চাইলে ফেরদৌস মাহমুদের জবাব, “আমরা যা বলি, আর যা বিশ্বাস করি বেশির ভাগ সময়েই তা করা সম্ভব হয় না। রাষ্ট্রীয়ভাবে সাধারণ মানুষের আবেগের চতুর ব্যবহার আর আমলাতান্ত্রিক জটিল সিস্টেমই হয়তো এর জন্য দায়ী। যেমন আমরা সব সময়েই বলি, সারা বছর ধরেই সৃজনশীল ও মননশীল বইয়ের প্রকাশ হওয়া উচিত। কিন্তু দেখা যায় বই করার সময় বইমেলাকেই বেছে নিই কিংবা অন্যভাবে বললে বেছে নিতে বাধ্য হই। এক্ষেত্রে আমিও ব্যতিক্রম নই। ”
৭২ পৃষ্ঠার বইটির প্রচ্ছদ করেছেন দেওয়ান আতিকুর রহমান। আগন্তুকের পাঠশালা-সহ ঘরে বসে বইমেলার যেকোন বই পেতে ভিজিট করুন rokomari.com-এ। অথবা কল করুন 16297 নম্বরে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬
টিকে/