চট্টগ্রাম: গণজাগরণ মঞ্চের উত্তাল দিনগুলোর কথাই মনে করিয়ে দেবে রমেন দাশগুপ্তের প্রথম উপন্যাস ‘একসঙ্গে’। প্রেমের ফ্রেমে ইতিহাসের গৌরবোজ্জ্বল একটি অধ্যায়, মধ্যবিত্ত পরিবারের তরুণ-তরুণীদের মননে তার প্রভাব, এমনকি মুক্তিযুদ্ধে হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে খুঁজে ফেরা চেরাগি মোড়ের পাগলি বুড়ির অজানা সব কাহিনিকে উপজীব্য করে লেখা হয়েছে উপন্যাসটি।
রমেন দাশগুপ্ত সাংবাদিক। অকপটে বলা যায়, দায়িত্ব পালনে তিনি সৎ ও সাহসী। জন্ম ১৯৮১ সালের ৩০ ডিসেম্বর। মা মিনা দাশগুপ্ত, বাবা পুতুল দাশগুপ্ত। পৈতৃক নিবাস চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। লেখালেখি তার নেশা। গল্পই লেখেন। ছাত্রজীবন থেকেই প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
১০৪ পৃষ্ঠার উপন্যাসে মূল চরিত্রে কয়েকজন তরুণ-তরুণী ও পোড়খাওয়া মানুষ। নানা টানাপোড়েন, প্রেম ও দ্বন্দ্বসংঘাতের মধ্য দিয়ে বয়ে চলে তাদের জীবন। তুলির আঁচড়ে রচিত হয় একেকটি মুহূর্ত। তবু চারপাশের মানুষের জীবনে যা ঘটে তার চেয়ে ভিন্ন বা ঘটনাবহুল নয় তাদের জীবন। কিন্তু একসময় তারা আবিষ্কার করে ১৯৭১ সালের অসমাপ্ত বীজগণিত। জীবনের সব হিসাব বাদ দিয়ে নিজেদের অজান্তেই তরুণেরা সেই অঙ্কের সূত্র মেলাতে শুরু করে। অনিবার্য এক গণজাগরণের মধ্য দিয়ে যে অঙ্ক নিজের নিয়মেই এগোতে থাকে। রায়হান, মুক্তাদির, অভি, পাভেলের মতো মানুষের চোখ দিয়ে ফিরে দেখার অবকাশ মিলবে গণজাগরণের সেই ফুটতে থাকা দিনগুলোর দিকে।
বাংলানিউজকে নিজের উপন্যাস প্রসঙ্গে রমেন দাশগুপ্ত বলেন, সময়ের প্রয়োজনে আমার উপন্যাসে সময়কে ধারণ করতে চেয়েছি। আমি মূলত গল্প লেখি। বন্ধু ও সহকর্মীদের তাগিদ ছিল বিভিন্ন দৈনিকের পাতায় ছড়িয়ে থাকা গল্পগুলো এক মলাটে আনার। নানা কারণে সেটি হয়নি। সাংবাদিকতার সুবাদে চট্টগ্রামে গণজাগরণ আন্দোলনকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তখনি উপন্যাসের প্লটটি মাথায় আসে। এক্ষেত্রে আমার কয়েকজন সাংবাদিক বন্ধু ও ছোট ভাইয়ের অনুপ্রেরণা ছিল। তারা উৎসাহ জুগিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা, বাতিঘরের মতো স্বনামধন্য একটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান প্রথম উপন্যাসটি বের করতে রাজি হয়েছে। বাতিঘরের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
উপন্যাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি নির্মোহ ইতিহাস রচনা নয়। এটি একটি নির্মোহ উপন্যাস। ইতিহাস লিখবেন ঐতিহাসিকরা। আমি সেই সময়গুলোকে যেভাবে দেখেছি তা-ই তুলে এনেছি। এটুকু বলতে পারেন, প্রেম আর বিপ্লব হাত ধরাধরি করে হেঁটেছে ‘একসঙ্গে’ উপন্যাসে।
বাতিঘর প্রকাশিত ‘একসঙ্গে’র ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ প্রচ্ছদ করেছেন রাজীব দত্ত। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদ ত্রিশ লক্ষ বীর সন্তানকে’। দাম রাখা হয়েছে মাত্র ১৫০ টাকা।
সাহিত্য সমালোচক, বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক সিদ্দিক আহমেদ ‘একসঙ্গে’র ভূমিকায় লিখেছেন, ‘‘গণজাগরণ মঞ্চ এদেশের রাজনীতির ইতিহাসে নতুন ঘটনা। রাজনৈতিক অভিধানে নতুন সংযোজিত একটি অসাধারণ শব্দবন্ধ। বিখ্যাত মার্কিন ঔপন্যাসিক নর্মান মেইলরের একটি বইয়ের নাম আর্মিজ অব দ্যা নাইট। উপন্যাসটির সাব-টাইটেল হলো ‘নভেল এজ হিস্টরি, হিস্টরি এজ নভেল’। ভিয়েতনামে মার্কিন যুদ্ধনীতি ও নৃশংসতার বিরুদ্ধে মার্কিন লেখক, বুদ্ধিজীবী ও গণমানুষের জাগরণের এবং সক্রিয় অংশগ্রহণের বাস্তব চিত্রটি চমৎকার বাঙ্ময় হয়ে প্রকাশ পেয়েছে পুলিৎজার-জয়ী এ গ্রন্থটিতে।
রমেনের উপন্যাসটিতে বাংলাদেশের সমকালীন রাজনৈতিক ঘটনাবলি উপস্থাপনের চেষ্টা আছে। সফল বা অসফল সেটা ভিন্ন প্রশ্ন। তবে বলতেই পারি, দেশপ্রেম অর্থাৎ দেশের প্রতি এদেশের যুবসমাজের ভালোবাসা ও দায়বোধের যে প্রকাশ ঘটেছে তার সত্য বিবরণ আমরা পাই। আসল ও ছদ্মনামের আড়ালে উপন্যাসটির চরিত্রগুলো চট্টগ্রাম শহরের সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সার্বক্ষণিক তৎপরতায় আমরা দেখি ও অনুভব করি। ’’
সিদ্দিক আহমেদের চমৎকার মূল্যায়নের পর এ উপন্যাস নিয়ে বাড়তি কিছু বলার অবকাশ নেই। শুধু এটুকু বলবো, উপন্যাসটি পাঠক হৃদয়ে যেমন আলোড়ন তুলবে তেমনি আবার ঝড়ও। সবকিছু নির্ভর করবে দৃষ্টিভঙ্গির ওপর, সময়-অসময়ের ওপর। কারণ উপন্যাসটিই তো সময়ের চালচিত্র।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
এআর/আইএসএ/টিসি