ঢাকা: মেলায় এখনও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাতের ক্ষতচিহ্ন রয়ে গেছে। ধকল কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছেন প্রকাশকরা।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকরা দাবি জানিয়েছিলেন মেলার সময় বাড়ানোর। বাংলা একাডেমি প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা না করে সময় বাড়িয়েছে। তবে প্রতিদিন মেলা শুরুর সময়। বাংলা একাডেমির এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি।
সময় বেড়েছে কেবল শুরুর দিকে
ঝড়-বৃষ্টিতে বুধবার মেলা পণ্ড হওয়ায় প্রকাশকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মেলার সময় কেবল শুরুর দিকে বাড়িয়েছে বাংলা একাডেমি। একাডেমির পরিচালক ও মেলার সদস্য সচিব ড. জালাল আহমেদ বিকেলে বাংলানিউজকে জানান, ছুটির দু’দিন শুক্র-শনিবার মেলা শুরু হবে আধা ঘণ্টা আগে সকাল সাড়ে ১০টায়। চলবে রাত ৮টা পর্যন্তই। আর রোববার ও সোমবার মেলা শুরু হবে একঘণ্টা আগে দুপুর ২টায়, চলবে যথারীতি রাত ৮টা পর্যন্ত।
প্রকাশকদের প্রত্যাখ্যান
বাংলা একাডেমির সময় বাড়ানোর এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি। সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক কামরুল হাসান শায়ক বাংলানিউজকে বলেন, প্রকাশকদের সঙ্গে আলোচনা না করে শুক্র ও শনিবার শুরুর দিকে মেলার সময় আধা ঘণ্টা এবং এর পরের দু’দিন একঘণ্টা বাড়িয়েছে বাংলা একাডেমি। আমাদের দাবি বাকি দিনগুলো মেলার সময় রাত ৮টার বদলে যেনো ৯টায় করা হয়।
শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৪টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বৃহস্পতিবারে মেলার চিত্র
অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৫তম দিনে দেখা গেলো মেলার কিছু কিছু অংশে তবুও তাণ্ডবের রেশ। কাদা-জলের রাস্তায় পড়েছে বালুর আস্তরণ, নতুন ইটে জেগেছে রাস্তা। বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বই অফিসে ফেরত পাঠিয়ে নতুন নতুন বই নিয়ে অনেক ভ্যান ও গাড়ির সমারহ। দেখা গেছে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক প্রকাশনীর কর্মীরা এদিন একটু আগেভাগে এসে স্বল্প ভেজা বইগুলো রোদে-বাতাসে শুকাতে দিয়েছেন।
দুই প্রাঙ্গণ জুড়েই দেখা গেলো ঝরা পাতার সমাহার। বুধবার সকালে প্রকৃতির বৈরী তাণ্ডবে প্রায় পাতাশূন্য হয়ে যায় উদ্যানের গাছ। সেই পাতার স্তূপ সরাতে বেশ বেগ পেতে দেখা যায় পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের।
শেষ শিশু প্রহর
অমর একুশে গ্রন্থমেলায় শিশুদের অভিভাবকসহ স্বাচ্ছন্দ্যে বই কেনার সুবিধার্থে শুক্রবার শেষ শিশুপ্রহর অনুষ্ঠিত হবে। শিশুপ্রহরটি সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে বেলা ১টা পর্যন্ত চলবে।
অভিজিৎ রায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী
শুক্রবার মুক্তচিন্তার লেখক অভিজিৎ রায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারির বইমেলা থেকে ফেরার পথে টিএসসি সংলগ্ন রাস্তায় নৃশংসভাবে খুন হন অভিজিৎ। তবে দিনটি উপলক্ষে শুক্রবার লেখক বা প্রকাশক কোনো পক্ষেরই কোনো আয়োজন নেই বলে জানা যায়।
নতুন বই
একাডেমির তথ্যমতে মেলার ২৫তম দিনে প্রকাশিত হয়েছে ৭৪টি নতুন বই। এর মধ্যে গল্প ১১, উপন্যাস ১১, প্রবন্ধ ৩, কবিতা ২৪, ছড়া ৩, মুক্তিযুদ্ধ ১, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ২, চিকিৎসা/ স্বাস্থ্য ২, রম্য ২, অনুবাদ ১, সায়েন্সফিকশন ২ ও অন্যান্য ১১।
উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে মোহিত কামালের ‘উড়াল বালক’ (অনিন্দ্যপ্রকাশ), সুজাত মনসুরের ‘সফল রাজনীতিক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’ (উৎস প্রকাশন), কাজী জাকির হোসেনের ‘স্রষ্টা ও শয়তান’ (পাঠসূত্র), ফারুক ওয়াসিফের ‘বাসনার রাজনীতি কল্পনার সীমা’, ফরহাদ মজহারের ‘অসময়ের নোটবই’, অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরীর ‘মুখই স্বাস্থ্যের প্রবেশপথ’ (আগামী), শরীফা বুলবুলের ’বীরাঙ্গনা নয় মুক্তিযোদ্ধা’ (বলাকা)।
মূলমঞ্চের আলোচনা
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশে নারী জাগরণ: সমস্যা ও সম্ভাবনা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড. মাসুদুজ্জামান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন সুলতানা কামাল এবং মুহম্মদ শহীদ উজ জামান। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।
সভাপতির বক্তব্যে শামসুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশে নারী জাগরণ এদেশের সার্বিক সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নকেই নির্দেশ করে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। তিনি মনে করেন, দেশের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় নারীর অংশগ্রহণকে আরো ব্যাপক ও কার্যকর করার মাধ্যমেই বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নে আরো গতি আনয়ন সম্ভব।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে নাজিয়া জাবীন-এর পরিচালনায় ফাউন্ডার সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘স্পর্শ’, উপেন্দ্রনাথ রায়-এর পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘আরশিনগর, লালমনিরহাট’ এবং ড. মোঃ জিয়াউর রহমানের পরিচালনায় হামিবা সাংস্কৃতিক একাডেমির শিল্পীরা।
শিশু-কিশোর প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান
অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আয়োজিত শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সংগীত, সাধারণজ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মাঝে শুক্রবার সকাল ১০টায় মেলার মূল মঞ্চে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার দেওয়া হবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। অনুষ্ঠান পরিচালনা করবেন একাডেমির উপপরিচালক রহিমা আখতার কল্পনা।
শুক্রবার বিকেলের মূলমঞ্চ
শুক্রবার বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ২০২১ সালের বাংলাদেশ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। আলোচনায় অংশ নেবেন ড. খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং রাশিদ আশকারী। সভাপতিত্ব করবেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
এডিএ/এএ