তখন গভীর বিস্ময় নিয়ে ভাবতেন, এতোসব মজাদার গল্প তারা কোথায় পান? কীভাবে তারা এমন ঘোরলাগা যাদুর জগৎ তৈরি করেন!
এরপর বয়স বেড়েছে। পেশাদার কর্মজীবনের পাশাপাশি শিল্প-সাহিত্যের নানা শাখায় কাজ ও চর্চা করেছেন।
উঠোন একটি সাহিত্য পত্রিকা। ভাষার মাসে বের হয়েছে এর ১ম বর্ষ, ১ম সংখ্যা। এটি গল্প লেখার গল্পের সংকলন। অর্থাৎ গল্পকারদের গল্পের পাশাপাশি থাকছে সেটি লেখার পেছনের গল্প।
সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলনের ভাষায় বললে, আজীবন মানুষ নানাভাবে গল্প শুনতে, পড়তে বা বলতেই ভালোবেসেছে। বাস্তব জীবনের কোনো একটি সত্যি ঘটনা একজন যখন অন্যজনকে বলে বোঝাতে চেয়েছে তখন মূল ঘটনার সঙ্গে আরও কিছু কিছু অনুপান যুক্ত হয়ে গল্প তৈরি হয়েছে। পথ চলতে চলতে সঙ্গী গল্প করেছে।
‘শিশুকে বইয়ের প্রতি আগ্রহী করতেও প্রথমেই স্বজনরা গল্প বলেই আকৃষ্ট করে। সাহিত্যের এই ধারাটিই সবচেয়ে বেশি মানুষের সঙ্গে মানুষকে সংযুক্ত করে। আর আমাদের ভূখণ্ডে গল্পের লিখিত রূপ তৈরি হওয়ারও রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। ’
অর্ধেকটা সেই শিশু বয়সের সারল্যমাখা বিস্ময়, বাকিটা সাহিত্যের বুদ্ধিবৃত্তিক তাড়না- বলা যায়, এ দুইই কাজ করেছে ব্যতিক্রমী এই আয়োজনকে বাস্তবে রূপ দিতে।
সংকলনের উঠোনে ছড়ানো রয়েছে ২৯ জন গল্পকারের গল্প ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প।
আদ্যাক্ষর অনুযায়ী সংকলনের গল্পকাররা হলেন- অদিতি ফাল্গুনী, অদ্বয় দত্ত, আনিসুল হক, আন্দালিব রাশদী, আ ন ম আবদুস সোবহান, আবুল বাশার, জাকির তালুকদার, তৃপ্তি বালা, নাসিমা আনিস, পাপড়ি রহমান, পারভেজ হোসেন, পিয়াস মজিদ, বদরুন নাহার, বুলবুল চৌধুরী, মহসীন হাবিব, মশিউল আলম, মঈনুল আহসান সাবের, মাহবুব আজীজ, প্রশান্ত মৃধা, ফারুক মঈনুদ্দীন, মোজাফ্ফর হোসেন, রুমা মোদক, শাকুর মজিদ, শাহনাজ মুন্নী, শাহীন আখতার, সাজ্জাদ কবীর, সাদিয়া মাহ্জাবীন ইমাম, স্বকৃত নোমান ও হুমায়ূন মালিক।
মাসুক হেলালের প্রচ্ছদে ৩০৮ পৃষ্ঠার সাহিত্য পত্রিকাটি সারাবছর পাওয়া যাবে পাঠক সমাবেশ ও প্রথমা গ্রন্থকেন্দ্রে। এছাড়া বইমেলায় (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশ) পাললিক সৌরভের (৪১২ নং স্টল) স্টলে উঠোন পাওয়া যাবে। বিনিময় মূল্য ২০০ টাকা।
সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলন জানান, উঠোনের পরবর্তী আয়োজন (২য় সংখ্যা) ‘তারেক মাসুদ সংখ্যা’। ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছেন লেখা সংগ্রহের কাজ। খুব শিগগিরই আসবে পাঠকদের হাতে।
বছরে উঠোনের অন্তত দু’টি সংখ্যা করার পরিকল্পনা রয়েছে, যোগ করেন মফিজ ইমাম।
ফিরে যাই গল্প লেখার গল্প সংখ্যায়। সংকলনটি করার পেছনে সম্পাদকের মূল উদ্দেশ্য ছিলো, পাঠক-লেখকের নৈকট্য স্থাপন। ২৯ জন প্রবীণ-নবীনের গল্প এক মলাটে হাজির করার মধ্য দিয়ে সেই উদ্দেশ্যের অনেকটাই তিনি পূরণ করেছেন। পাশাপাশি রেখেছেন ওই গল্পগুলো লেখার পেছনের গল্প। এতে পাঠক তার মতো করে লেখকের গল্প সংগ্রহের নিজস্ব দুনিয়া ঘুরে আসতে পারবেন। পরবর্তীতে যখন মূল গল্পটি পড়বেন, তখন বিষয় ও বস্তুর সঙ্গে তার নৈকট্য যে নিশ্চিত আরও বাড়বে, এটি বলাই বাহুল্য। এদিক দিয়েও তার উদ্দেশ্য সফল। বইমেলার স্টল ও দুই গ্রন্থকেন্দ্রে উঠোন নিয়ে পাঠকের আগ্রহ সেটিই নির্দেশ করে।
সম্পাদকীয়তে অনেক গুণী গাল্পিকের গল্প গ্রন্থিত করতে না পারার দায় স্বীকার রয়েছে। এরপরও যাদের গ্রন্থভুক্ত করা হয়েছে, তারা সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের গল্পকে কোনো অংশে কম প্রতিনিধিত্ব করেন না। কাজেই উঠোনের গল্প লেখার গল্প সংখ্যা দারুণ পাঠ অভিজ্ঞতা দেবে, এটি দায়িত্ব নিয়ে বলা যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৬২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
এসএনএস