বিকেল সাড়ে ৫টায় টিএসসি এলাকা দিয়ে মেলায় ঢুকতে গলদঘর্ম অবস্থা। মানুষের দীর্ঘ সারি টিএসসি এলাকায় দেওয়া নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়ে রাজু ভাস্কর্য পযর্ন্ত পৌঁছেছে।
বিপরীত দিকের লাইনটাও পৌঁছে গেছে দোয়েল চত্বর পযর্ন্ত। বড় এই দুই লাইন ছাড়াও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আরও ৬টি প্রবেশমুখে প্রায় সমান দৈর্ঘ্যের আরও ছয়টি লাইন। লাইনে নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতী, তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীসহ নানা বয়সী মানুষ। এরা সবাই ছুটির দিনের ‘সুযোগ’টা নিতে মেলায় এসছেন। এসেই পড়েছেন ভিড়বিড়ম্বনায়!
এবারের মেলায় এটি ছিল দ্বিতীয় শুক্রবার। প্রথম শুক্রবারটাও মেলায় লোক সমাগম হয়েছিল। তবে তা আজকের মতো নয়। মেলার দশম দিনের ভিড়টা ছিল একুশের ভিড়ের মতো!
দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ানো পাঠক, দর্শনার্থী, ক্রেতা, লেখক, প্রকাশক ও প্রকাশনা শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা প্রবেশ পথের আর্চওয়ে পেরিয়ে মেলায় ঢোকার পর রীতিমতো ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই’ অবস্থা। সুবিস্তৃত পরিসরে আয়োজিত মেলা প্রাঙ্গণের প্রতি ইঞ্চি জায়গা ছিল লোকে লোকারণ্য।
সম্ভবত এ রকম একটা দিনের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন লেখক ও প্রকাশকরা। আয়োজকরা তো বটেই! কারণ, কোনো আয়োজনই সাফল্যের মুখ দেখে না, যদি সে আয়োজনে কাঙ্ক্ষিত লোকের সাড়া না মেলে।
সাড়া মিলতে লাগলো ১০ দিন। নানা অব্যবস্থাপনা, পাঠক ও ক্রেতার কম উপস্থিতি যাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছিল, তাদের মুখে আজ হাসি। মুছে গেছে চিন্তার বলিরেখা। বাকি ক’দিন এ রকম গেলে আর কোনো চিন্তা থাকবে না তাদের।
বলছিলাম লেখক ও প্রকাশকদের কথা। লেখক যদি পাঠক না পান, তার লেখক হয়ে ওঠার স্বপ্ন পূরণ হবে না। প্রকাশক যদি ক্রেতা না পান, লগ্নি করা টাকা তুলতে পারবেন না। সুতরাং, এই দিনটার অপেক্ষায় ছিলেন তারা।
কথা হয় বিদ্যা প্রকাশের মার্কেটিং ম্যানেজার মো. আবদুস সালামের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, স্টল একটু পেছনের দিকে হওয়ায় গত ৯ দিনে আমাদের এখানে কেউ আসেননি। এমনকি আপনারাও। আজ সবাই আসছে, ভালো লাগছে।
কলি প্রকাশনীর আতিকুর রহমান বলেন, অন্যদিন তো এদিকে কেউ আসেই না। আজ আসছে। বিক্রিও হচ্ছে। এ রকম চলছে আর কোনো চিন্তা নেই। আশা করছি বাকি ১৮ দিন এ রকম থাকবে।
মিজান পাবলিশার্সসের প্রকাশক লায়ন আ ন ম মিজানুর রহমান পাটওয়ারী বাংলানিউজকে বলেন, এ ক’দিন ক্যাটালগ দেওয়ার-ই লোক পাইনি। আজ পাচ্ছি। বইও বিক্রি হচ্ছে। আমরা খুশি।
শুধু লেখক-প্রকাশক নয়, মেলা জমে উঠতে দেখায় পাঠক ও দর্শনার্থীরাও খুশি। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে মেলায় ঢুকতে হলেও জমজমাট মেলা দেখতে পেরে বইপ্রেমীদের মুখেও ফুটেছে হাসি। মেলা চত্বর ও রাস্তায় লোকের ভিড় তাদের মধ্যে আনন্দের সঞ্চার করেছে।
কথা হয় বনানী থেকে মেলায় আসা লাইজু আহমেদ লিসার সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, এ নিয়ে তৃতীয় দিনের মতো মেলায় এলাম। আগের দু’দিন খুব একটা ভালো লাগেনি। মেলা খালি খালি লেগেছে। আজ মনে হচ্ছে মেলা পূর্ণতা পেলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের ছাত্রী সুরভী রহমান বলেন, বিকেল হলেই মেলাই আসি। আজ জমজমাট মেলা দেখে ভালো লাগছে। লোক যত বাড়বে, মেলার আবেদনটাও ততো গাঢ় হবে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলার দশম দিন নতুন বই এসেছে ৩১৩টি। মোড়ক উন্মোচন হয়েছে ৪৩টি বইয়ের। বেলা ১১টায় শুরু হয়ে মেলা শেষ হয় রাত সাড়ে ৮টায়। শুক্রবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পযর্ন্ত ছিল শিশুপ্রহর।
অমর একুশে উদযাপন উপলক্ষে শুক্রবার সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা উদ্বোধন করেন সমরজিৎ রায় চৌধুরী। প্রতিযোগিতা ৬শ’ ৪০ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়।
বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের সূচনা ও ১১ই মার্চ ১৯৪৮’ শীর্ষক আলোচনা সভা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুছ। আলোচনায় অংশ নেন আহমাদ মাযহার, মো. মশিউর রহমান। সভাপতিত্ব করেন অর্থনীতিবিদ ড. আতিউর রহমান। সন্ধ্যায় মেলার মূল মঞ্চে ছিলো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শনিবার মেলা শুরু হবে বেলা ১১টায়। চলবে রাত সাড়ে ৮টা পযর্ন্ত। দুপুর ১টা পযর্ন্ত শিশুপ্রহর। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে হবে আবদুল গফুর হালী: জীবন ও কর্ম শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন নাসির উদ্দিন হায়দার। আলোচনায় অংশ নেবেন রাহমান নাসির উদ্দিন এবং সাইমন জাকারিয়া। সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
** ছুটির দিনে বইপ্রেমীদের পদচারণায় মুখর বইমেলা
** প্রিয় লেখকের বইয়ের সঙ্গে অটোগ্রাফ-ফটোগ্রাফ
বাংলাদেশ সময়: ২০০৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০১৭
এজেড/এএ