সর্বশেষ একটি প্রকাশনী বই ছাপাতে রাজি হয়, তবে ছাপানোর খরচ ১৫ হাজার টাকা কবিকেই দিতে হবে। বিনিময়ে ছাপানো বইয়ের অর্ধেক মানব কিনে নেবেন।
চলতি গ্রন্থমেলার প্রথম দিন থেকেই বইটি স্টলে আসে। পরিচিত বন্ধুদের মধ্যে ৮ থেকে ১০ জন বইটি কিনেছেন। এরপর আর বিক্রি হয়নি।
মানব চৌধুরী কিছুটা হতাশ হয়ে বাংলানিউজকে বলেন, কবিতার পাঠক কম এবং সুনির্দিষ্ট। কবিতার নতুন পাঠকরাও পুরনো কবিদের বই কিনেন। তবে আরো কিছু বিক্রি হবে বলে আশা করি।
মেলায় বেশ কয়েকজন তরুণ কবিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় সব নতুন কবি নিজের গাঁটের টাকা খরচ করেই কবিতার বই ছাপান। কিন্তু তা বিক্রি হচ্ছে না।
প্রকাশকরা কবিতার বইয়ের প্রচার কম করে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
মেলার ১৩ তম দিন- সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি)। এখন পর্যন্ত কবিতার নতুন বই বের হয়েছে ৪২৮টি। প্রতিদিনই নতুন প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সংখ্যা বেশি থাকছে। তবে বিক্রিতে সবচেয়ে পিছিয়ে কবিতার বই।
তবে প্রকাশকরা বলছেন, নতুন কবিদের বেশির ভাগই সাময়িকভাবের তাড়না থেকে কবিতা লিখছেন। ভালো ও বড় মানের প্রকাশনীগুলো না ছাপালে তারা ভুঁইফোড় প্রকাশনীতে যেয়ে টাকা খরচ করে বই ছাপাচ্ছেন। এতে লেখার মান যেমন কমছে, কবি হিসেবে তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখার সম্ভাবনাও কমে যাচ্ছে। অবশ্য ছোট প্রকাশনীগুলো থেকেই কবিতার বই আসছে বেশি।
ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে এবারে নতুন কবিতার বই এসেছে মাত্র ৪টি। তবে বিক্রি ভালো নয়, বলে জানান স্টলের বিক্রয় ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন খান কাজল।
তিনি বলেন, কবিতার বইগুলোর মান ভালো, দামও কম। ৯০ টাকা থেকে ১১০ টাকা। কিন্তু চলছে খুবই কম। এখনকার তরুণরা কবিতা পড়ছেন না বলেও মনে করেন তিনি।
চিত্রা প্রকাশনী থেকে এবার নতুন কবিতার বই এসেছে ৮টি। তবে লেখকের কাছ থেকেই বেশির ভাগ বই কেনা হয়েছে বলে জানা যায়।
লেখক পরিচিতি দেখেও বোঝা যায়, এই প্রকাশনীর দুই-তিনজন কবি একেবারেই নতুন এবং শখের বশে বই বের করেছেন।
কথা প্রকাশ থেকে কবিতার বই বের হয়েছে ৩টি। তবে বিক্রেতা ইউনূস বলেন, উপন্যাসের চাহিদাই বেশি। কবিতার বইগুলোর বিক্রি খুব কম।
অন্বেষা প্রকাশনীর প্রকাশক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, এখন নতুন লেখকদের ধৈর্য্য কম। আমরা যখন দেখি কারো লেখা ভালো। তাদের ওঠানোর চেষ্টা করি। কিন্তু দেখা যায়, কয়েক বছরের মধ্যে খেই হারিয়ে ফেলছে। এক্ষেত্রে কবিদের বিভিন্ন পুরস্কারকেও দোষারোপ করেন তিনি।
তিনি বলেন, যে লেখক একটু ভালো করেন। এক লাখ টাকার একটি পুরস্কার পাওয়ার পর আর লেখার হাত থাকছে না। নতুনদের মধ্যে এটি একটি সমস্যা।
এ বিষয়ে কথাসাহিত্যিক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, নতুনদের অনেক বেশি পড়তে হবে। শুধু ফেসবুকে পড়ে থাকলে হবে না। এরপর লেখার অভ্যাস বাড়াতে হবে। পত্রিকায় লিখতে হবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে লিখতে হবে। এরপর বই প্রকাশ করতে হবে। তবে কেউ যেন টাকা দিয়ে বই না ছাপায়।
বাংলাদেশ সময়: ২৩১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৭
এমএন/টিআই