তন্ময় আলমগীরের বয়সে তারুণ্যের ঝিকিমিকি। তারুণ্য সৃষ্টির অনুকূল।
পোড়া ইটের দেহ-তে পাঁজর অর্থাৎ কবিতা রয়েছে ৪৩টি। কবিতাগুলোর পরতে পরতে শুয়ে রয়েছে ব্যক্তিগত ও অন্যান্য আবেগ, নানামুখী দুঃখবোধ আর রোমান্টিকতার চমৎকার বয়ান। আগে উদাহরণে যাই-
ক) আষাঢ়ের শুকিয়ে পড়া রোদে
মুঠোফোনের এপাশ-ওপাশ ভিজে যায়
অস্থির দুটো কূহকের তীব্র বর্ষায়
আষাঢ়ের কয়েকটা এলোমেলো পথ শুধু আমাদের
যেখানে ভিতরপোড়া কান্নার পূর্ণপাঠ
(আমরা কেবল আষাঢ়ের)
খ) যাই, যেতে যেতে পেয়ে যাই পথ
আমাদের পথ
ফিরি না, ভুলেও ফিরি না
প্রত্যাবর্তনের কলঙ্ক ঘষে ঘষে ক্ষয় করি না
উঠোনের পিঁড়িতে
(প্রত্যাবর্তনের কলঙ্ক)
গ) সম্ভবত জীবন এক সময় মইচাপা ঘাস হয়ে যায়
কেবল চোখজুড়ে চাষ হলে নোনতা পানি
এক সময় সবুজ ছিল, শিশির ছিল বোঝা যায়
(মরা ঘাস)
ঘ) ফুলের দিকে চোখ ফিরাতেই ফুলের গোছা পড়বে খসে
মাটি ছুঁয়েই বলে দিল-
‘ও পোড়া চোখ সমুদ্রে যাও’
(রাজকুমারী)
ঙ) রেখে এসেছি খুরভাঙা ঘোড়ার পিঠে তাচ্ছিল্য-চাবুক
জননীল জলে তৃষিত যুদ্ধ লয়ে তাড়িয়ে দেয়ার তাড়া
(স্বীকারুক্তি)
চ) হাতের কাছে হাত ছড়ানো হাত রাখিস না হাতে
হাত চলে যায় অন্য কারোর গরম বাড়া ভাতে
(মুনিয়া সিরিজ)
উল্লিখিত কবিতাংশগুলোতে মনোযোগের চোখ বোলালেই কবির ভাবনার গভীরতা লক্ষ্য করা যায়। বোঝা যায়, বাক্য বিন্যাসের পারঙ্গমতাও। চিন্তার দর্শন তেমন পরিপক্ক না হলেও দার্শনিক ভাষ্য নির্মাণের প্রাণান্ত চেষ্টার কিন্তু কমতি ছিলো না তার কবিতায়। বাণী প্রতিষ্ঠার চেষ্টাও অবশ্য তন্ময় করেনি। তাতে তার কবিতার তেমন ক্ষতি হয়নি। আধুনিকতাকে ছুঁয়ে গেছে, রহস্যময়তাকে আবেগ ও অভিমানে ভেঙে-চুরে গেছে তার কবিতার পংক্তিমালা। উপমা-উৎপ্রেক্ষার ব্যবহারেও যত্নশীলতা পরিলক্ষিত। ছন্দের বেশ সাবলীল নৃত্য রয়েছে- বিশেষত মুনিয়া সিরিজে। প্রাধান্য রয়েছে স্বরবৃত্তের। অন্ত্যমিলের ব্যাপারেও তন্ময় আগ্রহী বেশ, বোঝা যায়। কবিতার কোনো কোনো বক্তব্য তাই আমাদের ভেতরকে নাড়া দিয়ে যায়।
সত্যি কথা বলতে গেলে নিজের ভেতর দিয়েই সবার কথা বলতে চেয়েছে তন্ময়। নিজেকে ব্যবচ্ছেদ করে অন্যকে উন্মোচিত করতে চেয়েছে সে। তার চেষ্টা নিশ্চয়ই ব্যর্থ হবে না।
চার ফর্মার বইটি করেছে নতুন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘কালো’। ১২০ টাকা দাম রাখা বইটির প্রচ্ছদে আঁচড় কেটেছেন তানভীর এনায়েত।
তরুণ কবি তন্ময় আলমগীরের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘পোড়া ইটের দেহ’ পাঠকের মনোদেহে জড়িয়ে থাকুক চাদর হয়ে। এমনই শুভকামনা রইলো।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৭
এসএনএস