ধর্মীয় বই, উপন্যাস, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্য, রাজনীতি, অর্থনীতি যে বিষয়ের ওপরই লেখা হোক না কেন, সংশ্লিষ্ট পাঠক কিন্তু ঠিক আনন্দ খুঁজে নেন প্রথমে আগ্রহের বইটি হাতে নিয়ে। এরপর সে আনন্দের রেশ ধরে যায় কেনায়।
তাই তো অমর একুশে গ্রন্থমেলা এলেই ছেলে, বুড়ো, গৃহিণী, শিক্ষক, ছাত্র, পেশাজীবীর বাজেট হয় আলাদা। এরপর নিয়ম করে বা আয়োজন করে বাংলা একাডেমির প্রাঙ্গণ ঘুরে কিংবা মেলার সোহরাওয়ার্দী প্রাঙ্গণ চষে পছন্দের বই খুঁজে বের করাটাই আনন্দের উপলক্ষ হয়।
বইয়ের আনন্দ দেওয়ার এতো ক্ষমতা আছে বলেই কবি বলেছেন- বইয়ের পাতায় প্রদীপ জ্বলে/ বইয়ের পাতা স্বপ্ন বলে।
অমর একুশে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, শেষদিনে পাঠকরা পছন্দের বইগুলো বেছে বেছেই নিচ্ছেন। বেলা ১১টায় শুরু হওয়া মেলায় বিকেল গড়াতেই উপচে পড়ে ভিড়। কেউ নিজের জন্য, কেউ উপহার দিতে কেউবা অন্যকে বই কিনে দিতেও এসেছেন। ছোটরাও বাদ যায়নি, এ আনন্দের পরশ থেকে। বাবা-মার হাত ধরে মেলা প্রাঙ্গণন দাপিয়ে বেরিয়েছে ওরাও।
বইমেলার এ উপস্থিতিই জানান দেয়, এটা সার্বজনীন আনন্দ উৎসবের। এখানে কেবল কেনা-বেচাই হয়না। লেখক-পাঠকের মিলনমেলাও গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ। সবাই তালিকা ধরে বই কিনছেন। এ যেন কবির কথারই প্রতিফলন। কবি বলেছেন-যে-বই জুড়ে সূর্য ওঠে/পাতায় পাতায় গোলাপ ফোটে/সে-বই তুমি পড়বে। যে-বই জ্বালে ভিন্ন আলো/তোমাকে শেখায় বাসতে ভালো/সে-বই তুমি পড়বে।
বই কিনে ব্যাগ ভর্তি করে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরছেন। ঠিক বই নয়, এ যেন ব্যাগ ভর্তি আনন্দ। মুঠোয় মুঠোয় সুখ। তাদের অভিব্যক্তিতে যে তৃপ্তি, সুখের চিহ্ন এঁকে যাচ্ছে তা ওই ব্যাগ ভর্তি আনন্দেরই এটা ঠাহর করতে খুব বেগ পেতে হয় না।
এদিকে কোনো বিরতি নেই। মেলায় একদল বেরুচ্ছেন, আরেক দল ঢুকছেন। প্রবেশ ও বর্হিগমন পথে এ দৃশ্যটিও উৎসবের আমেজ দিয়েছে। প্রবেশ পথে সদা তৎপর পুলিশ সদস্যরা নিরাপত্তা নিশ্চিতে দায়িত্ব পালন করছেন ক্লান্তিহীন।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে আটটায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার বাতি নিভবে। তাই শেষ মুহূর্তের বইমেলায় এসেছেন অনেকে। এক বছর পর আবার বসবে এ আসর। সবমিলিয়ে বিদায়ের সুর সবার মাঝে। তবে এ সুরে কোনো বিষাদ নেই, দুঃখ নেই। এ সুরে আছে আরো ভালো ভালো বই কেনার ইচ্ছা নিয়ে সমৃদ্ধ হওয়ার সুর। এ বিদায়ে আছে আরেকটি উৎসবে শামিল হওয়ার সুর।
সুষমা পারভীন নামের এক পাঠক বাংলানিউজকে বলেন, শেষদিনে কিছু নির্দিষ্ট বই কেনার জন্যই এসেছি। এর মধ্যে কিছু তরুণ লেখকদের বইও আছে।
চারুলিপি প্রকাশনের প্রকাশক হুমায়ুন কবীর বাংলানিউজকে বলেন, শেষদিনে সবাই পছন্দের বইটাই নিয়েছেন। বিক্রি ভালো।
বাংলা একাডেমির পরিচালক (জনসংযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রশিক্ষণ বিভাগ) অপরেশ কুমার ব্যানার্জী জানিয়েছেন, গত সাতাশ দিনে মোট বই প্রকাশ হয়েছে ৩ হাজার ৪৬৬টি। এর মধ্যে গল্পের বই ৪৭৮টি, উপন্যাস ৫৪৬টি, প্রবন্ধ ১৫৮টি, কবিতা ১ হাজার ৫৮টি, গবেষণাধর্মী ৭৭টি, ছড়ার ১১১টি, শিশুতোষ ১১৬টি, জীবনী ৬৯টি, রচনাবলী ৭টি ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ৯৬টি।
এছাড়া নাটক ১৭টি, বিজ্ঞান ৩৬টি, ভ্রমণ ৬৬টি, ইতিহাস ৩৯টি, রাজনীতি ১৭টি, চিকিৎসা/স্বাস্থ্য বিষয়ক ২৮টি, কম্পিউটার বিষয়ক ৬টি, রম্য/ধাঁধার বই ১৫টি, ধর্মীয় ৯টি, অনুবাদ ১৮টি, অভিধান ২টি, সায়েন্স ফিকশন/ গোয়েন্দা ৩৪টি ও অন্যান্য ৪৬৩টি বই বেরিয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৮, ২০১৭
ইইউডি/জেডএস