মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুরে অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৮ সম্পর্কে বাংলা একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় মেলার বিস্তারিত তুলে ধরে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন একাডেমির সদস্য সচিব ড. জালাল।
তিনি বলেন, এবারের গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ অংশকে ১২টি চত্বরে বিন্যস্ত করা হয়েছে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৯২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩৬টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩৬৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫৮৩টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।
তবে পেমেন্ট বিকাশে করলে অতিরিক্ত আরো ১০ শতাংশ কমিশন পাওয়া যাবে বলে জানান বিকাশের সিইও কামাল কাদের। বইমেলার সব স্টলেই বিকাশে পেমেন্ট করা যাবে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
এবারও শিশুচত্বর থাকবে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এ কর্নারকে শিশুকিশোর বিনোদন ও শিক্ষামূলক অঙ্গসজ্জায় সজ্জিত করা হবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে। মেলায় আগত মানুষের বসার স্থানসহ নান্দনিক ফুলের বাগান নির্মাণ করা হয়েছে। থাকবে ওয়াই-ফাই সুবিধা।
মেলায় প্রবেশ ও নিরাপত্তা নিয়ে একাডেমির সদস্য সচিব ড. জালাল বলেন, গ্রন্থমেলায় টিএসসি, দোয়েল চত্বর দিয়ে দু’টো মূল প্রবেশপথ, বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তিনটি পথ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ ও বাইরের ৬টি পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশে থাকবে বিশেষ ব্যবস্থা।
বইমেলার তথ্য পাওয়া যাবে ওয়েবসাইট ও অ্যাপে
মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নিরাপত্তাকর্মীরা। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলা এলাকাজুড়ে ২৫০টি ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার (সিসি) ব্যবস্থা করা হয়েছে। গ্রন্থমেলা সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলা প্রাঙ্গণ ও পাশ্ববর্তী এলাকায় নিরাপত্তার স্বার্থে থাকবে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। এছাড়া ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অবস্থিত স্বাধীনতা স্তম্ভ ও এর পার্শ্ববর্তী স্থানকে নান্দনিকভাবে গ্রন্থমেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, এতে স্বাধীনতা স্তম্ভের আলোক-বিচ্ছুরণে মেলা প্রাঙ্গণ আলোকিত হবে।
মেলার সময়সূচি সম্পর্কে তিনি জানান, গ্রন্থমেলা ১ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১শে ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত মেলা চলবে। ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে সেমিনার। শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি-রাজনীতি-সমকালীন প্রসঙ্গ এবং বিশিষ্ট বাঙালি মনীষীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অমর একুশে গ্রন্থমেলা উপলক্ষে বাংলা একাডেমি শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, সাধারণ জ্ঞান ও উপস্থিত বক্তৃতা এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
এবারো গ্রন্থমেলা উপলক্ষে ২২-২৩ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সম্মেলনে বাংলাদেশ, ফ্রান্স, স্পেন, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ ৮টি দেশের ১৫ জন কবি-লেখক-বুদ্ধিজীবী অংশগ্রহণ করবেন।
মেলায় নতুন সংযোজন সম্পর্কে তিনি বলেন, এবারে গতবারের তুলনায় বড় ও দৃষ্টিনন্দন মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ থাকছে। শারীরিকভাবে অক্ষম ও প্রবীণ মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে হুইল চেয়ারের সংখ্যা গতবারের চেয়ে এবার বৃদ্ধি পাবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৩টি এবং বাংলা একাডেমি অংশে ২টি ক্যান্টিন চালু থাকবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে উদ্যান ও একাডেমি উভয় অংশের স্টলগুলোতে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। নারী ও পুরুষের জন্য আলাদা অজু ও টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
১ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় গ্রন্থমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে তিনি মেলা পরিদর্শনে যাবেন। গ্রন্থমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭ দেওয়া হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রীর হাতে বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ‘আলোকচিত্রে বাংলা একাডেমির ইতিহাস’ এবং ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ: বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গ্রন্থ তুলে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৮
এইচএমএস/জেডএস