সমাজ-সভ্যতা, সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতি, পরিবর্তন-জাগরণ, মানব মুক্তির সংগ্রাম নিয়ে যারা ভাবেন বা চিন্তা করেন তাদের কাছে রেনেসাঁ একটি আবশ্যিক, তাৎপর্যময় বিষয়ও বটে। কারণ রেনেসাঁর শক্তিই পারে মানুষের অধীত চিন্তা-ভাবনা-দর্শনকে আমূল বদলে দিয়ে একটা নতুন সমাজ, নতুন সংস্কৃতি, নতুন মানবমণ্ডলী গড়ে তুলতে।
আর সেই সমাজের মানুষেরা হবে সক্রেটিস-প্লেটো-দ্য ভিঞ্চি-মিকেলাঞ্জেলো-রাফায়েল-আলবের্তি-পের্ত্রাকা-গ্যেটে-ভলতেয়ার-টমাস পেইন-মার্কস-রামমোহন-রবীন্দ্রনাথ-মধুসূদন-বিদ্যাসাগর-নজরুল-কাজী ওদুদ বা আহমদ শরীফ, আহমদ ছফার মতো দ্রোহী, শুভার্থী, কৃতবিদ্য মানুষ। রেনেসাঁর সন্তানেরাই যুগে যুগে ছড়িয়েছে আলো-আশা-ভালোবাসা। গেয়েছে জীবনের জয়গান। তাদের হাতেই মানুষ ও সমাজের আলোক-অভিসার।
বঙ্গীয় রেনেসাঁর সমাপ্তি ঘটে মূলত বিশ শতকের প্রথমার্ধে। এর মধ্যে বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, রুশ বিপ্লব, স্বদেশি আন্দোলন, খেলাফত আন্দোলন, আজাদী আন্দোলন, দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দেশ ভাগ, ভাষা আন্দোলন, গণতান্ত্রিক আন্দোলন, প্রগতি আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিসত্তার এক আশ্চর্য বিকাশ ঘটে। এই বিকাশের মধ্য দিয়ে বাঙালি অর্জন করে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, সেক্যুলারিজম, সমাজ প্রগতি, শিল্প-সাহিত্য-সঙ্গীত-সংস্কৃতির নতুন প্রগতিশীলতা, আধুনিকতা, বিজ্ঞান-দর্শন-জ্ঞান চিন্তার উৎকর্ষতা, পাশ্চত্যের ভাব বিপ্লবের উত্তরঙ্গও।
এই বিশাল পরিবর্তন ও অর্জনতো রেনেসাঁরই শিক্ষা। যদিও এই অর্জনে পদে পদে বাধা ছিল, নিপীড়ন-নিগ্রহ ছিল, কিন্তু বাঙালি পিউরিটানিজম শত্রুকে পরাজিত করে জেগে ওঠে দশ দিগন্তে। তারা একে একে পরাজিত করে ধর্মাশ্রয়ী সমাজ, সাম্প্রদায়িক সমাজ পশ্চাৎপদ সমাজ, সংস্কারাচ্ছন্ন সমাজ এবং অন্ধ ও বদ্ধবিশ্বাসী সমাজকে। সেই আলোকমুখী সমাজ ইতিহাসকে বাংলার দ্বিতীয় রেনেসাঁ হিসেবে অভিহিত করেই এই বইয়ের অবতারণা।
বইটি পাওয়া যাচ্ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ কুটিরের ২৯৫-৯৬ নম্বর স্টলে। বইটির মূল্য ৫৬০ টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন ধ্রুব এষ।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৮ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৩, ২০১৮
এএ