প্রকাশকরা বলছেন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের পাঠক দিন দিন বাড়ছে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থের সবচেয়ে বড় ক্রেতা তরুণ ও কিশোররা।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই নিয়ে কথা হয় দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদারের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, শিল্প-সাহিত্যে বাঙালির মহান অর্জন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানামাত্রিক কাজ করতে হবে। তরুণ প্রজন্মের কাছে আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে গৌরবের এ ইতিহাস।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের প্রতি পাঠকদের রয়েছে অন্যরকম আগ্রহ। আমাদের উপন্যাস, গল্পের একটি বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। ফলে প্রকাশকরাও এসব বই প্রকাশে বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। সেই সূত্র ধরে প্রতিবছরই মেলায় আসছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক নতুন নতুন বই। তথ্যসংবলিত বইয়ের পাশাপাশি গল্প-উপন্যাস কিংবা কবিতার চরণেও উঠে আসছে একাত্তরের বীরত্বগাথা।
এ ব্যাপারে জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক ভালো ভালো উপন্যাস, গল্প লেখা হয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক, মাহমুদুল হক, সেলিনা হোসেন, হুমায়ূন আহমেদসহ আমারও মুক্তিযুদ্ধনির্ভর অনেক উপন্যাস রয়েছে উল্লেখ করার মতো। আমার লেখা ‘সাড়ে তিন হাত ভূমি’ ও ‘নয় মাস’ উপন্যাস দুটিই মুক্তিযুদ্ধনির্ভর। খুব খেয়াল করেছি তরুণ লেখকরাও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনেক গল্প উপন্যাস লিখছেন।
মেলা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি স্টলেই মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বই। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক বইয়ের প্রতি পাঠকের রয়েছে সহজাত আগ্রহ। তাম্রলিপি প্রকাশ করেছে ৬৪ খণ্ডে ৬৪ জেলার ‘কিশোর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’। এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, এটা খুবই আশার বিষয় যে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের বই মেলায় প্রকাশ পাচ্ছে।
কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারীফ অনির্বাণের সঙ্গে। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বেশ কয়েকটি বই কিনে ঘুরছিলেন মেলা প্রাঙ্গণে। এ বইয়ে তার আগ্রহের কথা জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ আমাদের বাঙালি জাতির সত্তা। তাই এ বিষয়টি আমরা জানতে চাই পুরোপুরিভাবে। সে জন্যেই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক এ বইগুলোর প্রতি আগ্রহ।
বাংলা একাডেমির দেয়া তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত নতুন বইয়ের মধ্যে ৪০টির অধিক মুক্তিযুদ্ধের বই বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে- একেএম শাহনাওয়াজের ‘মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ : হাজার বছরের উত্তরাধিকার’ (অবসর); আবুল মাল আবদুল মুহিতের ‘স্মৃতি অম্লান ১৯৭১’, সাজ্জাদ শরিফ সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধের মহানায়কের’ (প্রথমা); মোরশেদ শফিউল হাসানের ‘স্বাধীনতা পটভূমি : ১৯৬০ দশক’ ও সিদ্দিকুর রহমানের অনুবাদে বরার্ট পেইনের ‘সেই দুঃসময়’ (অনুপম); আন্দালীব রাশদীর ‘একাত্তরের দলিল’, সেলিনা হোসেনের মুক্তিযুদ্ধের কিশোর উপন্যাস’, শ্যামলী নাসরীন চৌধুরীর ‘ডা. আলীম চৌধুরী’ (আলোঘর); আরিফ রহমানের ‘মুক্তিযুদ্ধ ও যুদ্ধাপরাধ কিছু বিভ্রান্তির জবাব’ ও ‘একাত্তরের ঘাতকদের বিচারে মুসলিম আইডেন্টিটির অপব্যবহার’ (শব্দশৈলী); মোস্তফা কামালের ‘অগ্নিপুরুষ’, মাহবুবুল আলম বিপ্লবের ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১’, আহমেদ রিয়াজের ‘মুক্তিযুদ্ধের সাত বীর কিশোর’ (পার্ল পাবলিকেশন্স); সালেক খোকনের ‘যুদ্ধাহতের ভাষ্য’, শেখর কুমার সান্যালের ‘একাত্তরের পথে প্রান্তরে’ ও মনি হায়দারের ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর গল্প’ (কথাপ্রকাশ); বের্নোর অরি লভির 'বাংলাদেশ যখন স্বাধীন হচ্ছিলো' (আদর্শ); মুনতাসীর মামুন ও চৌধুরী শহীদ কাদেরের ‘গণমাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’, ড. আবু সাইয়িদের ‘গণহত্যা ১৯৭১’, হাবিব হাওলাদারের ‘মুক্তিযুদ্ধে ছয় ভাই’, কর্নেল মোহাম্মদ আবদুল সালামের ‘একাত্তরের একজন মুক্তিযোদ্ধা’ (অনন্যা); মেজর নাসিরউদ্দিনের ‘বাংলাদেশ : বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর’, মো. মোজাম্মেল হকের ‘১৯৭১ : উত্তাল মার্চের দিনগুলি’, আসাদুজ্জামান আসাদের ‘যুদ্ধজয়ের প্রস্তুতি’ (আগামী প্রকাশনী); হাবিবুর রহমানের ‘মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রতিরোধ’ ও ‘মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের ভূমিকা’ (পাঞ্জেরী) ইত্যাদি।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৭ ঘণ্টা; ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০১৮
এইচএমএস/এমজেএফ