রাতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অন্য প্রকাশনের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগরে অধ্যাপক ড. সরওয়ার মুর্শেদ রতনের সঙ্গে। কুষ্টিয়া থেকে প্রাণের মেলায় ছুটে এসেছেন তিনি।
এদিন বেশিরভাগ পাঠকের হাতে ছিল বিভিন্ন প্রকাশনীর নতুন বইয়ের ক্যাটালগ। আগেভাগে সংগ্রহ করে রাখা সেসব ক্যাটালগ থেকে বেছে তৈরি করা তালিকা ধরে কেনাকাটা শুরু করেছেন বইপ্রেমীরা। প্রকাশকদের মতে, ২৮ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় মেলা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত বইপ্রেমী পাঠকদের এ ভিড় থাকবে।
রোববার অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৫তম দিনে মেলা চলে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। মেলায় এদিন নতুন বই এসেছে ১০৭টি।
বিকেলে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে ছিল ভাষাসংগ্রামী নাদেরা বেগম, ভাষাসংগ্রামী মমতাজ বেগম এবং একুশের শহিদ মিনারের অন্যতম রূপকার নভেরা আহমেদ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। ভাষাসংগ্রামী মমতাজ বেগম শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিউর রাব্বি এবং একুশের শহিদ মিনারের অন্যতম রূপকার নভেরা আহমেদ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজাউল করিম সুমন।
আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শফি আহমেদ এবং মালেকা বেগম। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।
ভাষাসংগ্রামী নাদেরা বেগম শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করে রামেন্দু মজুমদার বলেন, নাদেরা বেগম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সময় আত্মগোপনে থেকেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আমাদের ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্বের ইতিহাসে এক সাহসী ও সংগ্রামী নারী হিসেবে নাদেরা বেগমের নাম উজ্জ্বল হয়ে থাকবে। তবে এটা স্বীকার করতে হবে যে তার সে সময়ের অসাধারণ ভূমিকার কোনো স্বীকৃতি তিনি পাননি। বাংলা একাডেমিকে ধন্যবাদ বিস্মৃতি থেকে তাকে নতুন প্রজন্মের সামনে তুলে আনবার জন্যে।
আলোচক শফি আহমেদ বলেন, মমতাজ বেগম, নাদেরা বেগম এবং নভেরা আহমেদের মতো বীর নারীরা শুধু ভাষা আন্দোলনে নয়, একই সঙ্গে এই দেশের সব প্রগতিশীল আন্দোলনেই শক্তি যুগিয়েছেন।
আলোচক মালেকা বেগম বলেন, এই নারীরা শুধু ভাষা আন্দোলনের সময়পর্বেই নয় বরং বহু আগে থেকে ভাষার জন্য সংগ্রাম করেছেন। এরা শুধু ভাষা আন্দোলনে সভা-সমাবেশই করেননি; বিভিন্ন গঠনমূলক কাজের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন। মাতৃভাষা এবং দেশমাতৃকার জন্য সংগ্রামের শিক্ষা দিয়ে তারা আমাদের ইতিহাসে শিক্ষাব্রতীর ভূমিকায়ও আসীন হয়ে আছেন।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ভাষা আন্দোলনে নারী-পুরুষ সবারই গৌরবজনক অংশগ্রহণ ছিল। ইতিহাসের পূর্ণতার স্বার্থে সবার অবদান আলোচিত হওয়া প্রয়োজন। পঞ্চাশের দশকে যখন আমাদের সমাজে নারীদের বাইরে বেরুনোর ব্যাপারে কড়াকড়ি ছিল ঠিক সেই সময় এই নারীরা রাস্তায় শুধু বেরই হন নি, তারা ভাষার জন্য অসম সাহসে সংগ্রামও করেছেন।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল অধ্যাপক শফিউল আলমের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘গেন্ডারিয়া কিশলয় কচিকাঁচার মেলা’র পরিবেশনা। এতে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, রেজাউল করিম, মামুন সিদ্দিকী এবং মাহবুবা রহমান। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন কাজী ইমতিয়াজ সুলতান (তবলা), গাজী আবদুল হাকিম (বাঁশি) এবং ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড)।
২৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৬তম দিন। এদিন মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে রয়েছে বিজয় সরকার শীর্ষক আলোচনা পর্ব। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশ সময়: ২৩২৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৮
এইচএমএস/এসএইচ