রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) লিটলম্যাগ চত্বর ঘুরে দেখা যায়, অনেকটা ফাঁকা হয়েই আছে মেলার এই অংশটি। স্টল খোলা থাকলেও নেই পাঠক, অধিকাংশ লিটলম্যাগের প্রকাশক বা সম্পাদক।
এ প্রসঙ্গে এই চত্বরে কথা হয় লেখক অদিতি ফাল্গুনীর সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় সব সময়ই সার্বিকভাবে লিটলম্যাগের বিক্রি কম। এখন অনেক লিটলম্যাগ নিজেদের প্রকাশনায় বই আনছেন, এটি অনেক পাঠক জানেন না, ফলে তারাও এদিকে আসেন না।
লিটলম্যাগের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এই লেখক বলেন, বর্তমান সময়ে সবাই অনলাইনের উপরেই বেশি নির্ভরশীল। ফলে অনেক বড় পত্রিকাও হিমশিম খেয়ে যায় পাঠকদের কাছে পৌঁছাতে। আর লিটলম্যাগের আঙ্গিক তো এমনিতেই একটু ছোট। সেদিক থেকেও একটা সমস্যা রয়েছে।
লিটলম্যাগ 'রৌদ্রছায়া'র স্টলে কথা হয় বিক্রয়কর্মী সাহিদা আক্তার পাখির সঙ্গে। এবার লিটলম্যাগটি এনেছে তাদের নতুন সংখ্যা 'মা'। তবে বিক্রির পাশাপাশি দর্শনার্থীতেও এই চত্বরে মন্দা চলছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
'রৌদ্রছায়া'র বিক্রয়কর্মী বলেন, মেলার এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এই চত্বরে কাটেনি থমথমে পরিবেশ। গত শুক্রবার ও শনিবার কিছু মানুষ এলেও তা আশানুরূপ নয়। তবে শেষের দিকে লিটলম্যাগের অংশটা জমতে পারে।
লিটলম্যাগের পাঠক নিয়ে কথা হয় সাহিত্য সাময়িকী 'পরান কথা'র সম্পাদক ড. তাশরিক-ই-হাবিবের সঙ্গে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের সহযোগী এই অধ্যাপক গত দুই বছরে প্রকাশ করেছেন 'পরান কথা'র ১৩টি সংখ্যা। ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে কাজ করেন বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের নিয়ে। বর্তমানে দ্বি-মাসিক এ পত্রিকাটি আগে ছিল ত্রৈমাসিক। একই সঙ্গে এই সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয় লিটলম্যাগের আর্থিক সংকটের জায়গাটি নিয়েও।
ড. তাশরিক-ই-হাবিব বলেন, লিটলম্যাগের পাঠকরা একটু সিরিয়াস ধরনের পাঠক। তাই এই চত্বরে অন্য জায়গার তুলনায় পাঠক অনেক কম। একইসঙ্গে অনেকে আছেন যারা লিটলম্যাগে বিজ্ঞাপন প্রকাশ করতে চান না, তারা নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করে শুধু আর্থিক সমস্যা সমাধানের জন্য বিজ্ঞাপন ছাপতে পারেন। এতে নতুন ম্যাগাজিনগুলো যেমন আমরা পাবো, তেমনি উঠে আসবে নতুন লেখকও।
এদিকে লিটলম্যাগ চত্বরে বিক্রি একেবারেই কম বলে জানান লিটলম্যাগ 'কবিতা পত্র' এর বিক্রয়কর্মী এবং কবিতাভূমির সম্পাদক অনিরুদ্ধ দিলওয়ার। 'কবিতা পত্র' প্রকাশ করেছে তাদের নতুন সংখ্যা 'আবদুল মান্নান সৈয়দের কবিতা, কবিতায় আবদুল মান্নান সৈয়দ' সংখ্যা। তবে লিটলম্যাগের পাঠক একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির হওয়ায় বিক্রি কম বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অনিরুদ্ধ দিলওয়ার বলেন, অন্য বইয়ের পাঠকের তুলনায় লিটলম্যাগের পাঠক আলাদা। যারা লিটলম্যাগের সঙ্গে আছেন, যারা লিটলম্যাগ চর্চা করেন তারাই মূলত লিটলম্যাগের প্রকৃত পাঠক। এছাড়া আরো এক শ্রেণির পাঠক আছে যারা ঠিক পাঠক নয়, তারা সদ্য লেখালেখি শুরু করেছেন বা করবেন বলে ভাবছেন, তারা কিছু লিটলম্যাগ সংগ্রহ করেন। ফলে লিটলম্যাগের বিক্রি একদমই কম। বলা যায় পুরো মাসে এই পরিমাণ দাঁড়ায় মাত্র দুই থেকে তিন হাজার টাকা।
একই কথা জানান 'লেখমালা' স্টলের বিক্রয়কর্মী রাজেশ চাকমা। তিনি জানান, মেলা শুরু হওয়ার পর প্রথম আট দিনে বিক্রির পরিমাণ মাত্র ৩০০ টাকা।
তবে বিক্রি নয়, বরং আড্ডাবাজিই লিটলম্যাগ চত্বরের মূল উদ্দেশ্য বলে মনে করেন থিয়েটার বিষয়ক পত্রিকা 'ক্ষ্যাপা' এর সম্পাদক পাভেল রহমান। একইসঙ্গে লিটলম্যাগের নতুন সংখ্যা প্রকাশ না হওয়াও পাঠক না পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ বলেও মনে করেন তিনি। এবার ক্ষ্যাপা প্রকাশ করেছে থিয়েটার নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ের সমন্বয়ে তাদের পঞ্চম সংখ্যা।
তরুণ এই সম্পাদক বাংলানিউজকে বলেন, লিটলম্যাগের এই জায়গাটিতো বেচা বিক্রির জন্য নয়, বরং আড্ডার মাধ্যমে নিজেদের সমৃদ্ধ করার স্থান। সন্ধ্যার পর এই চত্বরটি জমে ওঠে আড্ডায়। তাই পাঠকের কাছে বিক্রি প্রধান বা মুখ্য নয়। তবে পাঠকের কাছে না পৌঁছালেও এর সার্থকতা নেই। আর সেই জায়গাটি আমরাই নষ্ট করছি।
তিনি বলেন, এবারে দেড় শতাধিক লিটলম্যাগ এই চত্বরে। কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে মাত্র ১৫ থেকে ২০টি লিটলম্যাগ তাদের নতুন সংখ্যা নিয়ে এসেছে। অধিকাংশই চলছে তাদের পুরনো সংখ্যা এবং নাম দিয়ে। পাঠকরা যদি নতুন সংখ্যা না পায়, তবে কেন আসবেন!
এবারে লিটলম্যাগ চত্বরে ঠাঁই পেয়েছে ১৫২টি স্টল এবং ৬টি উন্মুক্ত স্টল। এর আগে বাংলা একাডেমির বহেরাতলায় ছিল এই কর্নার যা লিটল ম্যাগাজিনের জন্য ঐতিহ্যস্বরূপ। তবে মূল মেলার সঙ্গে সংযুক্তির পর যতদিন বইমেলা হবে, ততদিনই ধীরে ধীরে এই চত্বরটা জমে উঠবে বলে মনে করছেন সবাই।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২০
এইচএমএস/এএ