ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

গড়পরতার বাজেট: সিপিডি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪৫ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৫
গড়পরতার বাজেট: সিপিডি ছবি : দীপু/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: বিদায়ী বছরের মূল্যায়ন এবং আগামী বছরের আয়ের উৎসগুলোর পরিস্কার ব্যাখা না থাকায় ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটকে ‘গড়পরতার বাজেট’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার পর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)।
 
শুক্রবার (০৫ জুন) রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে বাজেটের ওপর নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরে সিপিডি।


 
সংগঠনের পক্ষে বাজেটের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সিপিডি’র ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমরা লক্ষ্য করি, নতুন বাজেটে সবসময় নতুন নতুন সংস্কার বা পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হয়। কিন্ত গত বাজেটের পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়ন হয়েছে তার কোনো মূল্যায়ন থাকে না। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
 
তাছাড়া বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বাজেট আকার খুব একটা বড় না হলেও, আয়ের দিকগুলো পরিস্কার নয়। কোন খাত থেকে কোন উপায়ে অর্থ অর্জন করা হবে, তার কোনো পরিস্কার ব্যাখা অর্থমন্ত্রী দেননি। এসব দিক বিবেচনায়, এবার বাজেটকে গড়পরতার বাজেট হিসেবে দেখতে হচ্ছে, বলেন দেবপ্রিয়।  
 
বাজেটে স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা, মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনা, উন্নয়ন কাঠামো, বাজেটের পরীবিক্ষণ ও বাস্তবায়ন, জবাবদিহিতা, নজরদারি আছে কি-না? এ পাঁচটি কাঠামোর ওপর সিপিডি পর্যালোচনা করেছে বলেও জানান তিনি।  

দেবপ্রিয় বলেন, নতুন বাজেট নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করা হলেও, বিগত বাজেটের অর্জন নিয়ে তেমন আলোচনা  ও মূল্যায়ন অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতায় নেই। আমরা আশা করছি, আগামী বাজেট যিনি প্রণয়ন করবেন তিনি বিদায়ী বছরের বাজেট মূল্যায়ন ছক আকারে প্রকাশ করবেন।
 
প্রস্তাবিত বাজেটে আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ, ট্যাক্স আহরণ, রপ্তানি, বৈদেশিক ঋণের ব্যবহার ও রেমিট্যান্স দুর্বলতা নিয়ে বাজেট প্রণীত রয়েছে। তাছাড়া মধ্যমেয়াদী যে পরিকল্পনা করা হয়েছে তাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত থাকবে না।
 
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি সম্পর্কে দেবপ্রিয় বলেন, আগামী বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকা রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৩১ শতাংশ বেশি। এডিপিতে এবার স্বঅর্থায়িত বিভিন্ন প্রকল্পকে স্থান করে দেওয়া হয়েছে।
 
গতবারের তুলনায় এবার স্বঅর্থায়িত প্রকল্পের সংখ্যা কম। এসব প্রকল্পে ব্যয় পরিস্থিতি তেমন উন্নতি হয়নি-বলেন তিনি।
গতবছর ৯৯৯টি প্রকল্পের জায়গায় এবার ৭৬০টি প্রকল্প গ্রহণের বিষয়টিকে সিপিডি ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বলেও জানান সংগঠনটির ফেলো দেবপ্রিয়।
 
তবে প্রকল্প সংখ্যা কমলেও গুণগত পরিবর্তন হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকল্প অর্থায়ন, গতি বাড়ানো, সময়মত কাজ শেষ করা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা থাকা প্রয়োজন।
 
দেবপ্রিয় বলেন, সরকার রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকগুলোকে চালু রাখতে পুঁজিকরণের জন্য আবারও ৫ হাজার কোটি টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। এর আগেও এসব ব্যাংক সংস্কার, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধ না করে টাকা দেওয়া হয়েছে। বারবার এ টাকা দেওয়ায় তা অন্ধগলির মধ্যে চলে যাচ্ছে।
 
ঘাটতি অর্থায়ন সম্পর্কে তিনি বলেন, আগামী বাজেটে ঘাটতির ৪৫ শতাংশ আসবে ঋণ থেকে। ব্যয় সম্প্রসারণে রাজস্ব বড় ভূমিকা রাখছে না। ব্যাংক ঋণ বড় ধরনের দুর্বলতা।

রাজস্ব না বাড়াতে পারা ও বৈদেশিক সাহায্য ব্যবহার করতে না পারায়, সরকারের অভ্যন্তরীণ ব্যাংক ঋণের পরিমাণ বাড়ছে বলেও সিপিডির পক্ষ থেকে মত দেন দেবপ্রিয়।
 
অর্থায়নের ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ অব্যাহত রাখলে সরকারের বর্তমান রিজার্ভ’র মডেল এক সময় পর ধরে রাখা সম্ভব হবে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
নূন্যতম কর ৪ হাজার টাকা সিপিডি সমর্থন করে না জানিয়ে দেবপ্রিয় বলেন, নূন্যতম করের ক্ষেত্রে আগে জেলা, উপজেলা, সিটি কর্পোরেশন এলাকার করের মধ্যে পার্থক্য ছিল। এখন নূন্যতম কর ৪ হাজার টাকা করায় মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তরা অনেক বেশি সুযোগ পাবেন।
 
আয়ের ওপর যেভাবে কর আছে, সম্পদের ওপর সেভাবে বিজ্ঞানসম্মত কর নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্যাপিটাল গেইন ট্যাক্স, প্রপার্টি ট্যাক্স, উত্তরাধিকার ট্যাক্স একত্রিত করে একটি বিজ্ঞানসম্মত ট্যাক্স আরোপের প্রস্তাব করছে সিপিডি।
পোশাক রপ্তানিতে শুল্ক বাড়ানোর পক্ষে সমর্থন দিয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এটা স্থায়ী রাখা যেতে পারে। এর থেকে যে বর্ধিত কর আসবে তা নিয়ে রপ্তানিমুখী শিল্প পুর্নগঠন প্রক্রিয়া চলছে তাতে অর্থায়ন করা উচিত।
 
গ্রিন ট্যাক্স সম্পর্কে তিনি বলেন, ইকো ট্যাক্স, গ্রিন ট্যাক্স’র কথা গত অর্থবছর অর্থমন্ত্রী বললেও তা চালু এবং আদায় হয়েছে কি-না তা প্রকাশ করা হয়নি। তাছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি খাতে বরাদ্দ কমে যাওয়ায় সিডিপির উদ্বেগ রয়েছে।
 
শিশু বাজেট প্রণয়নের প্রশংসা করে সিপিডির ফেলো বলেন, এবার বাজেটের সবচেয়ে উজ্জ্বলতম দিক হলো শিশু বাজেট প্রণয়ন। আমরা আশা করছি, আগামীতে প্রবীণ বাজেট প্রণয়ন করা হবে।
 
তবে জেলা বাজেট বাদ দেওয়ার সমালোচনা করে দেবপ্রিয় বলেন, সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে জেলা বাজেট বাদ দেওয়া এবারের বাজেটের সবচেয়ে নিষ্প্রভতম দিক। আগামীতে জেলার জন্য আলাদা বাজেট সংযুক্ত করা হবে বলে আমরা আশা রাখি।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে সিপিডি’র নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গবেষণা ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৭৪১ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৫
এজেড/আরইউ/জেডএস

** বাজেট আকার নয়, রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে সংশয় সিপিডির

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।