ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

বাজেট নিয়ে বিমা খাতের ৯ প্রস্তাব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৬ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৯
বাজেট নিয়ে বিমা খাতের ৯ প্রস্তাব সংবাদ সম্মেলনে বিআইএ- এর সভাপতি শেখ কবির হোসেন। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: বিমা সেক্টরের উন্নয়নের লক্ষ্যে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে নয়টি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন (বিআইএ)।

মঙ্গলবার (২১ মে) সকালে রাজধানীর বিআইএ’র কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রস্তাব দেন সংগঠনের সভাপতি শেখ কবির হোসেন।

লিখিত বক্তব্যে কবির বলেন, লাইফ এবং নন লাইফ ইন্স্যুরেন্স দেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

বিশেষ করে বেকারত্ব নিরসন, বিনিয়োগ, শেয়ারবাজার, সম্পদ পুঞ্জিভূতকরণ, সরকারি কোষাগারে কর দেওয়া এবং একত্রিতকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি এ শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। কিন্তু কিছু সমস্যার কারণে এ খাতের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে।

বাজেটে বিমা খাতে উন্নয়নে প্রস্তাবনা গুলো তুলে ধরে কবির বলেন, পুনঃবিমা প্রিমিয়ামের কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের কোনো সুযোগ নেই। সেহেতু বিবেচনাপূর্বক পুনঃবিমা প্রিমিয়ামের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেওয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে। পুনঃবিমা চুক্তি অনুযায়ী প্রিমিয়াম দেওয়া না গেলে দেশীয় বিমা কোম্পানিগুলো ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে বিমা কোম্পানিগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে বিমা দাবি দিতে পারবে না। এতে করে বিমা গ্রহীতারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাবে এবং দেশে অর্থনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করবে। তাই বিমা কোম্পানিগুলো প্রিমিয়ামের ওপর ১৫ শতাংশ মূসক দিয়ে থাকে সেহেতু পুনঃবিমা কমিশনের ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপের সুযোগ নেই। এ ধরনের ভ্যাট ধার্য্য করা হলে বিষয়টিকে দ্বৈত কর বলে বিবেচিত হবে বলে তিনি মনে করেন।

নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃক গৃহীত স্বাস্থ্য বিমার ওপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট মওকুফ করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, হেলথ পলিসির ওপর থেকে ভ্যাট মওকুফ করা হলে অনেক গ্রাহকই হেলথ পলিসির আওতায় আসবে। নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে হেলথ ইন্স্যুরেন্স পলিসির জন্য লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর মতো ভ্যাট দেওয়া থেকে অব্যাহতি দেওয়া যেতে পারে। এতে নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোর হেলথ পলিসি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হবে।

পাঁচ শতাংশ গেইন ট্যাক্স প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ক্ষুদ্র পলিসি হোল্ডারদের পলিসি বোনাসের ওপর পাঁচ শতাংশ গেইন ট্যাক্সের যে বিধান চালু করা হয়েছে। তা যদি উঠিয়ে নেওয়া না হয় তাহলে দেশে লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবসা প্রতিনিয়ত কমতে থাকবে এবং কোম্পানিগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হবে।

বিমা এজেন্টদের উৎসে কর কর্তন করতে হবে। বিদ্যমান আয়কর আইন অনুযায়ী ব্যক্তি করদাতাদের ক্ষেত্রে করমুক্ত আয়ের সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা। এ প্রেক্ষিতে বিমা শিল্পে কর্মরত স্বল্প আয়ের এজেন্টদের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যক্তি শ্রেণির করদাতাদের ন্যূনতম করমুক্ত আয় সীমা পর্যন্ত উৎসে কর কর্তন থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করেন  বিআইএ’র সভাপতি কবির।
 
তিনি বলেন, পুনঃবিমার ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ হারে কর আরোপিত হলে বিমা কোম্পানিগুলোর ব্যবসায়িক ব্যয় ব্যাপক হারে বেড়ে যাবে। এই শিল্পে একটি সংকটময় পরিস্থিতি উদ্ভব হবে। এতে কোম্পানি তার অর্জিত মুনাফা হতে বঞ্চিত হইবে এবং সরকারও রাজস্ব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই আমাদের মতে প্রচলিত আয়কর আইন অনুযায়ী পুনঃবিমার ওপর উৎসে কর কর্তন করার জন্য প্রস্তাব করেন তিনি।

করপোরেট করের হার কামানো প্রসঙ্গে বিআইএ’র সভাপতি বলেন, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ওপর কর হার ব্যাংকিং কোম্পানির সমান যা কখনো কাম্য হতে পারে না। এদিকে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের করের হার ২৫ শতাংশ অথবা তার চেয়ে কম হারে কর দিয়ে থাকে। যদিও তাদের ব্যবসায়ের পরিধি ব্যাপক। কিন্তু ইন্স্যুরেন্স ব্যবসায় ব্যাংক এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মতো ব্যাপকভাবে প্রসার লাভ করতে পারেনি। তাই ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির করপোরেট কর ব্যাংকিং কোম্পানির সমান না রেখে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় ৩৫ শতাংশ করার জন্য প্রস্তাব করছি।

এছাড়া  নতুন সামাজিক পণ্য ট্যাক্স এবং ভ্যাট ছাড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন,  যেসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে ও জীবনযাত্রার মানে যতো উন্নত এসব দেশে সামাজিক বিমার অবদান ততো বেশি। সামাজিক মূল্যবোধ এবং সচেতনতার অভাবে এ শিল্পের বিকাশে মূল বাধা। একটি সচেতন বিকাশকারী দেশ হিসাবে আমরা নন লাইফ বিমা কোম্পানিগুলো এ সেক্টরের বিকাশে অবদান রাখতে পারি। যদিও এটি অত্যন্ত ব্যয় বহুল সেক্টর। আমরা সামাজিক জীবন যাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব বিষয়কে বিমা শিল্পের আওতায় আনার জন্য যে বিশাল বিনিয়োগের প্রয়োজন তার জন্য বিমা কোম্পানি গুলোকে এবং গ্রাহকদের কর অবকাশের অথবা ক্যাশ ইনসেনটিভের সুযোগ দিলে আমরা উৎসাহিত হবো বলেও জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১৯
এসএমএকে/আরআইএস/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।