দাম বাড়ানোর কারণ ৩টি হলো- বিশ্বব্যাপী ধূমপানবিরোধী রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান, তামাকজাত পণ্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে এর ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বাজেট পেশ অধিবেশনের বক্তব্যে এসব পণ্যের কর বা শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী ধূমপানবিরোধী রাষ্ট্রীয় নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান, তামকজাত পণ্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে এর ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এ তিনটি বিষয়ে সমন্বয়ে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ক্ষেত্রে কর কাঠামো বাড়ানো হয়েছে।
সিগারেট নিম্নস্তরের ১০ শলাকার দাম ৩৭ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৫৫ শতাংশ, মধ্যম স্তরের ১০ শলাকার দাম ৬৩ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ, উচ্চ স্তরের দশ শলাকার দাম ৯৩ টাকা ও ১২৩ টাকা এবং সম্পূরক শুল্ক ৬৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। যন্ত্রের সাহায্য ছাড়া হাতে তৈরি ফিল্টারবিহীন বিড়ির ২৫ শলাকার দাম ১৪ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৩৫ শতাংশ এবং ফিল্টার সংযুক্ত বিড়ির শলাকার দাম ১৭ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৪০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে ওই ৩ কারণ বিবেচনায় দাম বাড়াবোর প্রস্তাব রাখা হয়েছে অন্যান্য তামাকজাত পণ্য জর্দা ও গুলের।
এ সম্পর্কে প্রস্তাবিত বাজেটে আরো বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিড়ি-সিগারেটের মত ভয়াবহ আরেকটি পণ্য হলো জর্দা ও গুল। এগুলো ব্যবহার সরাসরি হওয়ায় শরীরের ওপর এর বিরূপ প্রভাবও বেশি। তাই এর ব্যবহার কমানোর জন্য প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার দাম ৩০ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৫০ শতাংশ এবং প্রতি ১০ গ্রাম গুলের দাম ১৫ টাকা ও সম্পূরক শুল্ক ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
বাজেট পেশের অনুমতি নিয়ে প্রথমে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন আ হ ম মুস্তফা কামাল। এরপর শুরু করেন ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ: সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শীর্ষক ১০০ পৃষ্ঠার ২০১৯-২০ সালের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন। কিন্তু অসুস্থ্য থাকায় কিছুক্ষণ পর থেকে বাজেট উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই।
সংসদে উপস্থাপনের আগে মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত হয় প্রস্তাবিত বাজেটটি। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদের ক্যাবিনেট কক্ষে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেটটি অনুমোদন করা হয়।
এবারের বাজেটের আকার ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। এবারের বাজেটে পরিচালনসহ অন্যান্য খাতে মোট বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার ৪৬৯ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকা।
বাজেটে ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণ ৬৮ হাজার ১৬ কোটি টাকা, অভ্যন্তরীণ উৎস হতে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক থেকে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে নেওয়া হবে ৩০ হাজার কোটি টাকা।
এবারের বাজেটে বড় আকারের ব্যয় মেটাতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশের সমান।
এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আদায় করবে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, এনবিআর বহির্ভূত কর আদায় ধরা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কর ছাড়া আদায় বা প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৯
এমএএম/এসএইচ