বিশ্লেষকরা বলেছেন, বাজেটে তিন কোটি নতুন কর্মসংস্থান, গ্রামকে শহরে রুপান্তরে কথা বলা হয়েছে। এটা কিভাবে হবে তার কোনো রূপরেখা দেওয়া হয়নি।
এবার বাজেটে যে ঘাটতি অর্থায়নের কথা বলা হয়েছে, সেখানে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৪৭ হাজার কোটি টাকা নেওয়া হবে। ব্যাংক এ টাকা কোথায় পাবে। ব্যাংক ব্যবস্থা আরও চাপের মধ্যে পড়বে। যেখানে এ মুহুর্তে ব্যাংকের সব থেকে বড় সমস্যা অনাদায়ী ঋণ এবং তারল্য সংকট।
তারা আরও বলেন, প্রস্তাবিত চিরাচরিত ধারাবাহিক বাজেট এটি। বাজেটের বড় ঝুঁকি হলো বাস্তবায়নে অযোগ্যতা। এজন্য বিরাট বাজেট দিলে হবে না। বাস্তবায়নের জন্য বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের আলোকে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাবনা নেই। সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতিগুলো উল্লেখ করে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তার উল্লেখ নেই। ২০৩০ সালের মধ্যে তিন কোটি নতুন কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এটা কোন খাতে হবে? সরকারি খাতে না বেসরকারি খাতে, গ্রামে হবে না শহরে হবে, এ ধরনের সুনির্দিষ্ট কোনো প্রস্তাব কৌশল দেখা যায়নি।
ড. দেবপ্রিয় আরও বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন দেখেন, সেখানেও আপনারা দেখবেন যেটা আশা করা হচ্ছে শেষ তিন মাসে হবে, সেটা অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবসম্মত নয়। ফলে আগামী বছরের প্রাক্কলনগুলো বাস্তবতার ভিত্তিতে রচিত হলো না। এটা আমাদের বড় সমস্যার জায়গা।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট অধ্যাপক হারাধন গাঙ্গুলী বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিবার বাজেট ঘোষণার আগে চমকের কথা বলা হলেও নতুন বাজেট, পুরোনো কাঠামো হওয়ায় বাজেট প্রস্তাবের পর কোনো চমক দেখা যায় না। দেশে এমনিতে অর্থনীতির আকার বাড়ছে। বাজেটের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সম্পদের পুনর্বণ্টন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং আয় বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি। এই লক্ষ্য পূরণে প্রতি অর্থবছরে বাজেটের অাকার বাড়ছে। কিন্তু কাঠামোগত দুর্বলতার কারণে বাজেট পুরোপুরি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। তাই বলা যায়, প্রস্তাবিত চিরাচরিত ধারাবাহিক বাজেট এটি। বাজেটের বড় ঝুঁকি হলো বাস্তবায়নে অযোগ্যতা। এজন্য বিরাট বাজেট দিলে হবে না। বাস্তবায়নের জন্য বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে। এখানে কোনো শৈথল্য করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, দেশে ঋণখেলাপি দিন দিন বাড়ছে। যারা ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি তাদের কঠোর ও দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। আর অনিইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের সহায়তা দিতে হবে।
বাজেটের আকার: প্রাথমিকভাবে সাম্ভাব্য বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটের আকার চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। আসন্ন বাজেটে ব্যয়ের পরিমাণ বাড়ছে ৫৮ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা। সে হিসেবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার থেকে নতুন বাজেট ১২ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
বাংলাদেশ সময়: ০২১৫ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০১৯
জিসিজি/এমইউএম/এসআরএস