ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

তাপপ্রবাহ: স্বস্তির খোঁজে জয়নুল আবেদিন পার্কে নগরবাসী

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
তাপপ্রবাহ: স্বস্তির খোঁজে জয়নুল আবেদিন পার্কে নগরবাসী

ময়মনসিংহ: তীব্র তাপপ্রবাহে সারাদেশের ন্যায় ময়মনসিংহেও চলছে হিট অ্যালার্ট। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবসহ নানা কারণে সৃষ্ট বৈশাখের এই তাপপ্রবাহে ওষ্ঠাগত নগরবাসীর জনজীবন।

বাসাবাড়ি থেকে কর্মক্ষেত্র, পথঘাট বা অফিস-আদালতে একই অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে দিশেহারা মানুষ গরমে স্বস্তি খুঁজতে ছুটছেন ব্রহ্মপুত্র নদের তীরঘেঁষে গড়ে উঠা নগরীর একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের শীতল ছায়ায়।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বেলা সোয়া ১১টায় ময়মনসিংহের তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে দুপুর গড়িয়ে বিকেলে সর্বোচ্চ এই তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. আহাম্মদ হোসেন।  

তিনি বাংলানিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত ময়মনসিংহ অঞ্চলে বৃষ্টির কোনো আভাস নেই। ফলে চলমান তাপদাহ আরও কয়েকদিন অব‍্যাহত থাকতে পারে। এর আগে বিগত কয়েকদিন ময়মনসিংহ অঞ্চলের তাপপ্রবাহ ৩৪ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠানামা ছিল।

 সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সকালের দিকে নগরীর সড়কগুলোতে কর্মজীবীদের মানুষদের নিজ নিজ কর্মস্থলে ছুটতে দেখা গেলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যান ও মানুষ চলাচল অনেকটাই কমে গেছে। এ সময় গরমে স্বস্তি পেতে অনেককেই ছায়ায় আশ্রয় নিতে দেখা গেছে। এতে চাহিদা বেড়েছে কোমল পানীয়, আখের রস ও ডাবের পানির। এ সুযোগে প্রতিটি ডাব বিক্রি হচ্ছে একশ থেকে দেড়শত টাকা এবং প্রতি গ্লাস আখের রস বিক্রি হচ্ছে বিশ টাকা করে জানান নগরীর কাচারি এলাকার ব্যবসায়ী মো. হীরা মিয়া (৫০)।  

এই অবস্থায় প্রয়োজন ছাড়া তাপদাহ এড়িয়ে চলতে মাইকিং করে নগরবাসীদের সতর্কবার্তা দিচ্ছেন জেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে তাপদাহে অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসাসেবায় হাসপাতালগুলোতেও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।  

এদিকে তীব্র তাপপ্রবাহে দিশেহারা মানুষদের স্বস্তির খোঁজে ময়মনসিংহের পুরোনো ব্রহ্মপুত্রের তীরে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন পার্কের ছায়া শীতল পরিবেশে বিশ্রাম নিতে দেখা গেছে। এদের মধ‍্যে তরুন-তরুণী ও শ্রমজীবী ছিল উল্লেখযোগ্য। সেখানে বসে ব্রহ্মপুত্রের বুকে আবহমান বাংলার নৈসর্গিক রূপ দেখার পাশাপাশি শিশু-কিশোরসহ নানান বয়সী মানুষের চিত্তবিনোদনের জন্য রয়েছে দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, মিনি চিড়িয়াখানা, দোলনা, ট্রেন, ম্যাজিক নৌকাসহ বিভিন্ন রাইড। উদ্যানের বাইরে নাগরদোলা, চরকি, ঘোড়ার গাড়ি টমটমসহ নানা বিনোদন উপকরণ রয়েছে।  

সেই সঙ্গে পার্ক সংলগ্ন এলাকার একাধিক ঘাটে আছে বাহারি ও রঙিন পালতোলা নৌকার সারি। এগুলো ভাড়া ঠিক করে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে ভেসে আসতে পারেন ভ্রমণপ্রেমীরা। তবে বর্তমানে নদ শুকিয়ে বেশিরভাগ স্থানে হাঁটু জল হয়ে যাওয়ায় এপার-ওপার পারাপার ছাড়া নৌ ভ্রমণের তেমন সুযোগ এখন আর নেই। তবুও তীরে বসে যৌবন তরঙ্গ হারা নদের দু’পারের নয়াভিরাম দৃশ্য ধুলা দেয় ভ্রমণপিপাসুদের মনে। এজন্য নগর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদমুখী করে স্থাপন করা হয়েছে টাইলস মোড়ানো অসংখ্য বসার স্থান।  

পার্কের ভেতরে আছে নামাজখানা, বৈশাখী মঞ্চ, ভাষা সৈনিক মোস্তফা মতিন পাঠাগার, পাকা টয়লেট ও ফ্রি ওয়াইফাইসহ নানান সুযোগ-সুবিধা। এছাড়াও পার্কের ভেতরে-বাইরে রয়েছে শতাধিক চটপটি, ফুসকা, ফাস্টফুড ও চা-কফির দোকান। রয়েছে শিশুদের খেলনাসহ নানা পণ্য সামগ্রীর পসরাও। নগরবাসীর সুস্থ বিনোদনের জন্য সিটি করপোরেশনের এমন আয়োজনে খুশি বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। বিষয়টিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন নগরীর বিশিষ্টজনেরাও।  

তবে পার্কের ভেতরে সারিসারি স্থায়ী ও অস্থায়ী দোকানপাট পার্কের নির্মল সৌন্দর্যকে নষ্ট করছে বলে অভিযোগ বিনোদনপ্রেমী নগরবাসীর। পার্কে ঘুরতে আসা একাধিক ভ্রমণপিপাসু ব্যক্তি বাংলানিউজকে জানান, এই পার্কটি নগরীর লাখো মানুষের একমাত্র স্বস্তির স্থল। অনেকে এই স্থানটিকে নগরীর ফুসফুস বলেও অভিহিত করেন। ফলে প্রতিদিন ভোর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত প্রাণের টানে গরমে অতিষ্ঠ মানুষ ছুটে আসে এখানে। সেই সঙ্গে ছুটির দিন কিংবা যে কোনো উৎসবের দিনে লাখো মানুষের ঢল নামে এই পার্কটিতে। এছাড়াও প্রতিদিন প্রাতভ্রমণে পার্কটিতে আসেন নগরীর স্বাস্থ্য সচেতন মানুষেরা। কিন্তু বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে এই পার্কটি তার নির্মল ও নিরব পরিবেশের ঐতিহ্য হারাচ্ছে স্থায়ী-অস্থায়ী খাবারের দোকানগুলোর কারণে।

প্রকৌশলী তানভীর আহম্মেদ নামের এক ভ্রমণপিপাসু বাংলানিউজকে বলেন, নগরবাসীর বিনোদনের একমাত্র স্থান এই পার্কটি এখন আর আগের মতো নেই। খাবারের দোকানপাট আর তাদের হৈ-হুল্লড়ে এবং উচ্চ শব্দের বেপরোয়া বাইক চালকদের কারণে নষ্ট হয়ে গেছে পার্কের নিরিবিলি পরিবেশ। ফলে বর্তমানে এই পার্কে বসে গরমের স্বস্তি পেলেও মনের শান্তি পাওয়া যায় না।  

ময়মনসিংহ পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শিব্বির আহমেদ লিটন বলেন, সম্প্রতি পার্কে বিপুলসংখ্যক দোকানপাট গড়ে ওঠার বিষয়টি নিয়ে অনেকে বিরক্ত। সাধারণত পার্কে ছোট পরিসরে কিছু দোকান থাকতে পারে কিন্তু বর্তমানে এই পার্কটি খাবারের বাজারে পরিণত হয়েছে।

এ বিষয়ে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী বলেন, পার্কটিকে দৃষ্টিনন্দন করতে নানা ধরনের সাজসজ্জার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সেইসঙ্গে পার্কের পরিবেশ স্বাস্থ্যকর রাখতে প্রতিরাতেই পার্কটিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২৪
এসএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।