ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

রঙের রহস্যভরা বর্ণচোরা শাহবুলবুলি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৯ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
রঙের রহস্যভরা বর্ণচোরা শাহবুলবুলি ছবি:রেজাউল হাফিজ রাহী / বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল: সৌন্দর্যে এ পাখিটি অপূর্ব! সব্বাইকে ছাড়িয়ে! এমন সৌন্দর্য খুব কম পাখির মধ্যেই খুঁজে পাওয়া যায়। বিশাল রঙিলা লেজ আর মাথার ঝুঁটিই তার মূল সৌন্দর্য-সম্পদ।

ঝুঁটি আর দীর্ঘ লেজে একক আধিপত্য বিস্তার তার পক্ষীরাজ্যে।

পাখিটির নাম এশীয় শাহবুলবুলি। তবে দুধরাজ নামেও এর পরিচিতি রয়েছে।   অঞ্চলভেদে সাহেব বুলবুলি, শাহবুলবুল, সুলতান বুলবুল প্রভৃতি নামেও লোকজন একে চেনে। এর ইংরেজি নাম Asian paradise flycatcher এবং বৈজ্ঞানিক নাম Terpsiphone paradisi। এরা ছোট আকারের পতঙ্গভুক পাখি। পৃথিবীতে তিন প্রজাতির মধ্যে বাংলাদেশে দু’প্রজাতির দেখা মেলে।

তবে সৌন্দর্যই শুধু নয়, এ পাখির রয়েছে রহস্যময় রঙের আধিপত্য। নিজের শরীরের রং পাল্টে ফেলার রয়েছে বিস্ময়কর এক ক্ষমতা! পুরুষ পাখিটি কেন রং পাল্টে ভিন্ন রঙের হয়ে যায় তা আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। অধিকাংশ পুরুষ-নারী উভয় পাখিই ‘লাল’ রঙেরই হয়ে থাকে। কোনো কোনো ছেলেপাখি আবার ধবধবে সাদা রঙেরও হয়। তবে সাদার সংখ্যা নগন্য।  

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে প্রথমবার পাখিটিকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। এ যেন স্বর্গীয় সৌন্দর্যে রাঙা! আত্মপ্রশ্নে জড়িয়ে পড়েছিলাম- এতো সুন্দর পাখি রয়েছে পৃথিবীতে? পাখিটি চোখে পড়লে সত্যিই নজর ফেরানো দায়। প্রথমবার দেখে পিছু নিয়েছিলাম তার। কিন্তু আর পেরে উঠতে পারিনি। মুহূর্তে আমাকে বোকা বানিয়ে সে হাওয়া হয়ে গেল।

পাখি পর্যবেক্ষক, গবেষক ও বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক অণু বাংলানিউজকে বলেন, শাহবুলবুলিরা সাধারণত লাল হয়ে থাকে। এর মধ্যে কয়েকটা পুরুষ পাখি লাল থেকে একসময় সাদা রঙে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু এটা কেন হয় এবং কখনো হয় আমাদের আজ পর্যন্ত জানা নেই।

তিনি বলেন, সাদা হলে সে বেশি করে নারী পাখিকে আকৃষ্ট করতে পারে। কিন্তু সাদা হলে সে আবার শিকারিদের চোখেও চট করে পড়ে। কিন্তু সে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নারী পাখিদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু এটা সে কেন করে তা আমাদের আজ পর্যন্ত জানা নেই। এটা নিয়ে গবেষণা চলছে।

তারেক অণু বলেন, কিছু দিন আগেও এটি আমি দেখেছি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তবর্তী এলাকায় অর্থাৎ, নদীর ওই পাশে। কুষ্টিয়া থেকে শুরু রাজশাহী, দিনাজপুর, পঞ্চগড় এসব অঞ্চলগুলোতে বেশি দেখা যায়। বিশেষ করে আম বাগান প্রধান এলাকায় দেখা মেলে এদের। কারণ হতে পারে এরা আম গাছের পোকা খায়।

সবগুলো নয়, কিছু কিছু পুরুষ শাহবুলবুলি লাল থেকে সাদাতে পরিণত হয়। যারা সাদাতে পরিণত হয় এরা কিন্তু আর চেঞ্জ হয় না। ওই সাদা রঙই থাকে। তবে নারী পাখিটি সবসময় লালই হয়। পুরুষ পাখিটিও লাল হয়। কিন্তু এর মধ্যে কয়েকটা পুরুষ পাখি মাঝে মাঝে আবার রং পরিবর্তন করে সাদা হয়ে যায়।  

তারেক অণু আরও বলেন, এশীয় শাহবুলবুলি বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি। এদের লেজছাড়া দৈর্ঘ্য ২০ সেমি। ওজন প্রায় ২০ গ্রাম। লেজ ১০ সেমি। তবে পুরুষপাখির লেজের দৈর্ঘ্য ৩৫ সেমি। নারীপাখির চেয়ে পুরুষপাখির লেজ তিনগুণ বেশি লম্বা। এরা ঘাস, লতাপাতা, মাকড়সার জাল দিয়ে পেয়ালা আকৃতির খুব সুন্দর বাসা বানায়।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৮ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৫
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।