ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

বৃষ্টিভেজা কামিনীর হাসি

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, এনভায়রনমেন্ট স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯২৬ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৫
বৃষ্টিভেজা কামিনীর হাসি ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

শ্রীমঙ্গল: বৃষ্টি তখনও হয়নি শেষ। চলছে অশান্ত বর্ষণধারা।

বারান্দার কাছে দাঁড়াতেই চোখ গিয়ে ঠেকলো প্রিয় কামিনীর দিকে। দেখি, ফুল সমেত কামিনী ভিজে-সেজে একাকার। আমার দিকে কেমন মিষ্টি করে তাকিয়ে সে হাসছে!

আমাদের বাড়ির বহু পুরোনো সঙ্গী সে। সেই ১৯৮৭ সাল থেকে তার ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা। স্মৃতিময় দিনগুলোর উজ্জ্বল সাক্ষী হয়ে আজও ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রয়েছে কামিনী। বছরের পর বছর ধরে তার মতো করে কত শত-সহস্র ফুল সে ফুটিয়েছে। গন্ধ বিলিয়েছে নীরবে-নিভৃতে।

ইদানীং এ কামিনী গাছটির প্রতি গভীর মমতা টের পাচ্ছি। হয়তো আর কিছু দিন পরেই মৃত্যু এসে জাপটে ধরবে তাকে। ফুরোবে তার সব সজিবতা। তবু এতো বছর ধরে ফুল ফুটিয়ে যাওয়ার বিনিময়ে গভীর কৃতজ্ঞতাবশতও শুধু তাকে উদ্দেশ্য করে অন্তত দু’এক লাইন লিখতে না পাবার যন্ত্রণা হবে আমার সারাজীবনের সঙ্গী।

বর্ষা মৌসুম এলেই তার ব্যস্ততা বেড়ে যায় অনেকখানি। সবার আগে নিজেকে সবুজের মাঝে শ্বেতশুভ্র করে রাঙিয়ে তোলার সেই প্রাকৃতিক ব্যস্ততা। পুষ্পিত কামিনীর অসংখ্য ফুলের ভারে কখনো কখনো ডালগুলো কিছুটা নুয়ে পড়ে। কামিনীর ফলগুলো হয় ক্ষুদ্র ডিম্বাকৃতির। সেগুলো পাকলে লাল-কমলা রং ধারণ করে।

বহুদিন লক্ষ্য করেছি, সন্ধ্যা যখন গভীর হয়ে রাতের মিশে যেতে থাকে- তখন তার জেগে ওঠার প্রকৃত সময়। প্রতিটি ফুলের সুবাসকে সে বাতাসের ভেতর সুকৌশলে প্রবেশ করিয়ে দেয়। সুঘ্রাণ এসে হঠাৎ মনোযোগ কেড়ে নেয় নিমিষেই। আহা! কী মিষ্টি গন্ধ কামিনীর!

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ও নিসর্গবিদ বিপ্রদাশ বড়ুয়া এ প্রসঙ্গে বলেন, কামিনী হলো রাতের কুমারী ফুল; কারণ সে কমনীয়। কামের আধার ও উদ্রেককারী। তার সুগন্ধ মত্ততা রাতে। তাই তার সৌরভে রাত্রি হয় উতলা। কাম্য বলেই সে কামিনী।

তিনি আরও বলেন, গাছটির শরীর বা ডাল মোটেই মসৃণ-সুন্দর নয়। ফাটা ফাটা। কিন্তু মখমলের মতো প্রায় কমনীয়। পাতা আঙুলের মাথার মতো ছোট। কিন্তু ওষুধিগুণে ভরা তার পাতা, ছাল ও শেকড়।

কামিনীর বৈজ্ঞানিক নাম Murraya exotica। চার/পাঁচ মিটার পর্যন্ত হয় গাছের উচ্চতা। ফুল ফোটার মৌসুম প্রধানত বর্ষা। তবে অন্যান্য সময়েও দু’একবার ফোটে। তবে বর্তমানে এ গাছগুলো ফুল বিক্রেতাদের হিংস্রতার শিকার হচ্ছে। ফুলের ঝুড়ি সাজাতে ফুলবিক্রেতারা কামিনীর ডালপালা ব্যবহার করায় এ প্রজাতির গাছটি বর্তমানে হুমকির মুখে।

কামিনী একটি বৈশিষ্ট্য হলো বৃষ্টির আগেই সে ফুটে রয়। কিন্তু বৃষ্টিফোঁটার ধাক্কাগুলো সে কিছুতেই সহ্য করতে পারে না। বৃষ্টিধারায় তার পাপড়িগুলো সহজেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। গাছের নিচে পড়ে থাকা পাপড়িগুলোতে তখন নতুন এক সৌন্দর্য প্রকাশিত হয়। বৃষ্টিস্নাত রাত কামিনীর গন্ধে ভরে ওঠার জন্য চুপিচুপি বারবারই ফিরে আসে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২৬ ঘণ্টা, ২৬ জুন, ২০১৫
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।