ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

নদী নয় যেন ময়লার ভাগাড়!

আব্দুর রহমান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
নদী নয় যেন ময়লার ভাগাড়! আগের মতন যৌবন নেই ধলাই নদীর। ছবি: বাংলানিউজ

নেত্রকোনা: নেত্রকোনা পৌরসভার মঈনপুর এলাকায় ধলাই নদীতে এক সময় পুরো যৌবন ছিল। তখন নদীতে উত্তাল ঢেউ ভরা ছিল।

নদীতে বয়ে যেতো ছোট-বড় নৌকা ও লঞ্চ। এখন আর সেই অপূর্ব দৃশ্য নেই। এখন ধলাই নদী ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরে গেছে। হঠাৎ দেখলে মনে হবে নদী নয় যেন ময়লার ভাগাড়!

অথচ ছোটবেলায় এই ধলাই নদীতে অনেকেই সাঁতার কেটেছেন। মাছ শিকার করে জীবন নির্বাহ করতেন। আজ কি হয়ে গেছে! এখন নদীটির দিকে তাকালেও বড্ড কষ্ট লাগে। এক সময় কি ছিল আর এখন কি! কালের আবর্তে দখলে-দূষণে ধলাই নদী আজ মৃতপ্রায়!

ওই এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা হয় ধলাই নদী নিয়ে। তারা বাংলানিউজকে বলেন, আগে তো নদীতে দলবল নিয়ে বড়-বড় আইড়, বাইম মাছ ধরতাম আমরা। নদীতে নৌকাবোঝাই করে ধান ও পাট নিয়ে বিক্রি করতাম হাট-বাজারে। আর এখন এই নদী মরার পথে।

শুধু এই কৃষকরাই নন, ধলাই নদীর মরণদশা নিয়ে এমন আক্ষেপ নদীর দুইপাড়ের অনেক কৃষকের মুখেই শোনা গেছে।

মঈনপুর এলাকার এক গৃহবধূ বাংলানিউজকে বলেন, আমরা অপারক হয়ে ধলাই নদীর পানি ব্যবহার করি। গোসলের পর শরীর চুলকায়। পোলাপানের অসুখ-বিসুখও ছাড়ে না।  

চকপাড়া এলাকার কৃষক আছিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, অনেক বাসা-বাড়ির পায়খানার পাইপ লাগানো নদীতে। পানি মুখে লওয়া তো দূরের কথা। কাছে গেলেই দুর্গগ্ধে বমি আসে।  

জানা যায়, খাল-বিল ও হাওরবেষ্টিত নেত্রকোনার একটি অন্যতম নদীর নাম ধলাই। এই নদীটি পূর্বধলা উপজেলার ত্রিমোহনী এলাকা দিয়ে ঢুকে সদর উপজেলার লালবুড়িয়া বিল হয়ে হাটখলা, মাহমুদপুর, কুনিয়া, উলুয়াটি, কয়রাটি, মনকান্দিয়া, বড়শিকুড়া, সাতপাই, মঈনপুর, চকপাড়া, রাজুরবাজার ও দেয়ালিয়া বিলের ওপর দিয়ে হরিখালি এলাকায় মগড়া নদীতে মিশেছে। এক সময় এ নদীর উত্তাল তরঙ্গ ভরা যৌবন ছিল। নদীর বুক চিরে চলতো পাল তোলা নৌকা। এই নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল নেত্রকোনা শহর। প্রসার ঘটেছিল জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য ও সভ্যতা। নৌকায় লোকজন যাতায়াতসহ কৃষকের উৎপাদিত পণ্যও বিক্রির জন্য বড় মোকামে নিয়ে যেতো এই নদী পথে। দুই পাড়ের বাসিন্দাদের গোসল, গৃহস্থালির কাজ চলতো এই নদীর পানি দিয়ে। এখন দখলে-দূষণে ধলাই আজ মৃতপ্রায়!

মঙ্গলবার (২৮ ডিসেম্বর) সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, নেত্রকোনা শহরের উত্তর-পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত এই নদীটি বেদখল হয়ে যাচ্ছে। নদীর তীরে অবৈধভাবে দখল করা জায়গায় গড়ে উঠছে বাসা-বাড়িসহ নানা স্থাপনা। মইনপুর, চকপাড়া এলাকায় বাসা-বাড়ির পয়ঃনিষ্কাশনের শতাধিক পাইপ নদীতে দেওয়া। ময়লা আর কচুরিপনায় ভরা নদী। রাজুর বাজার এলাকায় নদীর তলায় জমে থাকা পানি ময়লা আবর্জনায় নীল হয়ে গেছে। দূষণ আর দখলের কারণে নদীর অস্তিত্ব এখন হুমকির মুখে। তবে, আশার কথা হলো নেত্রকোনা শহর অংশে নদীর সাড়ে ছয় কিলোমিটার এলাকা খননের জন্য দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকার একটি প্রাক্কলন পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নেত্রকোনা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত বাংলানিউজকে বলেন, ধলাই নদী খননের জন্য দুই কোটি ৮৫ লাখ টাকার একটি প্রাক্কলন তৈরি করে পরিকল্পনা কমিশনে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদন হলে আগামী জানুয়ারি খনন কাজ শুরু করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।  

নদীটি খনন করলে আগের মতো শহরের পরিবেশ আরও সুন্দর হবে বলে তিনি আশাবাদী।

বাংলাদেশ সময়: ১২৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৩, ২০২১
এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।