ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

উপকূল থেকে উপকূল

সেতু ভাঙা, তাই ডিঙিতে পারাপার

সুমন সিকদার, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩১৯ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
সেতু ভাঙা, তাই ডিঙিতে পারাপার ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরগুনা: ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে আমতলী উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের বাশবুনিয়া খালের সেতুটির মাঝের অংশ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ৬ গ্রামের মানুষের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে।

 

বর্তমানে খালটিতে পারাপারের জন্য স্থানীয়দের উদ্যোগে একটি ছোট ডিঙি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

কিন্তু নৌকা পারাপার করতে গিয়েও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে এখানকার অধিবাসীদের। নৌকার আকার এতই ছোট যে ৪-৫ জনের বেশি উঠলেই মধ্য খালে ডুবে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা! ইতোমধ্যে কমপক্ষে ৭/৮ বার নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে এখানে।

 

স্থানীয় অধিবাসীদের সূত্রে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে ২১ মে দিনভর হলুদিয়া ইউনিয়নে বৃষ্টিপাত হয়। দিনের শেষ ভাগে সেতু দিয়ে লোকজন পারপারের সময় বিকেল ৫টার দিকে হঠাৎ করে ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য সেতুর মাঝের অংশ ভেঙে খালে পড়ে যায়। এসময় সেতুর ওপরের অংশে থাকা স্থানীয় বাসিন্দা দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের নাসিম ফকির, সোহেল মোল্লা ও জাহিদুল মৃধা খালে পরে গুরুতর আহত হন। তাদের ডাক চিৎকার শুনে স্থানীয় অধিবাসীরা এসে উদ্ধার করে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।

সেতুটি ভেঙে পড়ায় আমতলী উপজেলা সদরের সঙ্গে ৬টি গ্রামের সব ধরনের পরিবহন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। গ্রামগুলো হচ্ছে- জগৎ চাঁদ, মধ্য টেপুরা, উত্তর টেপুরা, দক্ষিণ টেপুরা, পূর্ব টেপুরা ও দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া। এসব গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ প্রতিদিন জীবন ও জীবিকার তাগিদে আমতলী উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করেন।

এছাড়া এই সেতুর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে জেবি সেনের হাট সরকারি প্রাথিমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই সেতু পার হয়ে পূর্বপাড় থেকে দুটি বিদ্যালয়ে প্রায় এক থেকে দেড়শ শিক্ষার্থী প্রতিদিন আসা যাওয়া করে। সেতুটি ধসে পড়ায় উল্লেখিত গ্রামসহ দুটি বিদ্যালয়ের ছোট ছোট কোমল মতি শিশুদের পারাপারে মারাত্মক ভোগান্তি দেখা দিয়েছে।

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া গ্রামের আবজাল, হারুন মোল্লা ও মাহতাব বাংলানিউজকে বলেন, প্রতিদিন এই সেতু পার হয়ে তাদের উপজেলা সদরে যেতে হয়। কিন্তু সেতুটি ভেঙে পড়ায় এখন কাজে যেতে তাদের নাকানিচুবানি খেতে হচ্ছে। একসঙ্গে ৪/৫ জনের বেশি পারাপার হতে গেলেই নৌকাটি ডুবে যায়। ভাটার সময় তো কাদার বিড়ম্বনা রয়েছেই। এখন বাসা থেকে সঙ্গে গামছা নিয়ে বের হই।

খেয়া ঘাটে এসে পরণের জামা কাপড় খুলে গামছা পরে নৌকা পারাপার হই। তারপর এপার উঠে আবার হাতমুখ ধুয়ে পোশাক পরে কাজে রওনা হই। এটা যে কি বিড়ম্বনা আপনারা না করলে বুঝতে পারবেন না।

জেবি সেনের হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশিষ কান্তি হালদার বাংলানিউজকে বলেন, খেয়া পারাপার হতে গিয়ে গত কয়েকদিনে ৩-৪ বার নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটেছে। নৌকা ডুবির ফলে পঞ্চম শ্রেণির লামিয়া, দ্বিতীয় শেণির নাসির, চতুর্থ শেণির দিশারী ও শিশু শ্রেণির ইমরান নামে চার শিশু পানিতে ডুবে মারাত্মক ভাবে আহত হন। তারা এখন নৌকার কথা শুনলেই ভয়ে আঁতকে ওঠে।

দক্ষিণ তক্তাবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবিএম ছোবাহান বাংলানিউজকে বলেন, সেতুর অভাবে খেয়া নৌকায় বিদ্যালয়ের শিশুরা পারপার হতে গিয়ে কাঁদায় জামা কাপর নষ্ট করে ফেলেন এ নিয়ে সারাদিন তাদের ক্লাস করতে হয়ে। এতে তাদের মানসিক প্রশান্তি নষ্ট হয়ে যায় ফলে লেখা পড়ায় মন বসে না। যতদ্রুত সম্ভব বিদ্যালয়ের শিশুদের কথা বিবেচনা করে সেতুটি নির্মাণ করা প্রয়োজন।

বরগুনা জেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের(এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, রোয়ানুর সময় ক্ষতিগ্রস্ত সব তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ পেলে সেতুটির কাজ শুরু করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৩১৫ ঘণ্টা, জুন ২৭, ২০১৬
পিসি/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।