ঢাকা: প্রত্যেক ব্যাংকে আসল (খাঁটি/বিশুদ্ধ) ও বৈধ উপায়ে আমদানি করা অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম) ব্যবহার নিশ্চিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
চার সপ্তাহের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
‘শুল্ক না দিয়ে অবৈধ উপায়ে আমদানি করা পাইরেটেড এটিএম মেশিন’, ‘পুরনো সফটওয়্যার ব্যবহারে গ্রাহকের অর্থ ঝুঁকির মধ্যে’- এসব প্রতিবেদন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইফুল হক রিট আবেদনটি করেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এম এ মুনতাকিম।
ব্যারিস্টার সৈয়দ সাইফুল হক বাংলানিউজকে বলেন, ‘এসব মেশিনে যে কারো টাকা ঝুঁকিতে রয়েছে। এ কারণে হাইকোর্টে রিট করেছি। হাইকোর্ট রুল জারি করেছেন। রুলে বাংলাদেশে জালিয়াত ও পাইরেটেড এটিএম মেশিন প্রতিরোধে পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত এটিএম মেশিনের মধ্যে পাইরেটেড মেশিন বন্ধে এবং অবৈধ আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সব এটিএম মেশিনের তথ্য সংগ্রহে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়েছেন আদালত। প্রত্যেক ব্যাংকে আসল ও বৈধ উপায়ে আমদানি করা মেশিন এবং সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যার ব্যবহারে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট’।
তিনি বলেন, ‘এটিএম আমদানিতে ১৮০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি!’ এ শীর্ষক প্রতিবেদন গত ২১ মার্চ একটি দৈনিকে প্রকাশিত হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘সরকারি, বেসরকারি এবং বিদেশি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর প্রায় সাত হাজার এটিএম চালু আছে। আইন অনুযায়ী বিদেশ থেকে আসা এসব মেশিনের আমদানি সংক্রান্ত তথ্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে থাকার কথা। কিন্তু বিস্ময়কর হচ্ছে, এনবিআরের কাছে মাত্র হাজারখানেক এটিএম আমদানির তথ্য আছে। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, তাহলে বাকি মেশিনগুলো ঢুকলো কোন পথে? সূত্র জানাচ্ছে, অবৈধভাবে এটিএম আমদানির মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ১৮০ কোটি টাকার বেশি’।
‘কিভাবে এতো বিপুল সংখ্যক এটিএম বিনা শুল্কে ঢুকল- সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এনবিআর কর্মকর্তারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। অবশেষে উত্তর খোঁজার দায়িত্ব পড়েছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের ঘাড়ে। যতোদূর জানা গেছে, তারা এ বিষয়ে অনেকদূর এগিয়েও গেছে। অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনুল খান জানান, কোনো ব্যাংকই সরাসরি এটিএম আমদানি করে না। বিশ্বের বিভিন্ন এটিএম উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠানের এ দেশীয় এজেন্টদের দিয়ে তারা এসব সংগ্রহ করে থাকে’।
মইনুল খান বলেন, ‘ইতোমধ্যে সব ব্যাংক এবং এটিএমের দেশীয় এজেন্টদের কাছে চিঠি দিয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। বেশ কিছু ব্যাংক এবং প্রতিষ্ঠান তাদের তথ্য জমা দিয়েছে। এসব তথ্যের ভিত্তিতে আমরা কিছু অনিয়মও বের করেছি। এসবের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।
‘জানা গেছে, এটিএম আমদানি করতে বর্তমানে শুল্ক দিতে হয় ৩১ শতাংশ। কিন্তু কিছু অসাধু আমদানিকারক শুল্ক ফাঁকি দিতে আনার সময় এটিএমকে কম্পিউটার যন্ত্রাংশ হিসেবে ঘোষণা দেন। কম্পিউটার যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক না থাকায় এটিএম এজেন্টরা এ বিষয়ে উত্সাহিত হয়েছেন। আর এর মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে ১৮০ কোটি টাকা’।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩০ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০১৬
ইএস/এএসআর