ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

কুমিল্লার সাফল্যের পথে বাধা এবার ‘ম্যাশ-ম্যাজিক’

মাহমুদুল হাসান বাপ্পি, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
কুমিল্লার সাফল্যের পথে বাধা এবার ‘ম্যাশ-ম্যাজিক’ ছবি: শোয়েব মিথুন

‘মাশরাফির ভাই ফাইনালে উঠেছে, তার ম্যাজিক দেখতেই হবে...’ রাত তখন প্রায় বারোটা, কেবলই দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ার ম্যাচ শেষ হয়েছে। রাস্তায় গিয়ে একটু থমকেই যেতে হলো।

টাঙ্গাইল থেকে চার বন্ধু এসেছেন ফাইনালের টিকিটের খোঁজে। সিলেট স্ট্রাইকার্স ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের তখনও দুই রাত বাকি। টিকিটের জন্য এত বেশি হাহাকারও নেই। চার বন্ধুকে বলেও বোঝানো গেল না। বলতে শুরু করলেন, ‘ভাই, এসেছি সেই সীমান্ত পাড় থেকে...ম্যাজিক না দেখে যাচ্ছি না!’ 

সকালেও মিরপুরের স্টেডিয়ামের সামনে দেখা গেল লম্বা লাইন। কাউন্টার থেকে লাইন ছাড়িয়েছিল দুই নম্বর গেট অবধি। বিপিএলের ফাইনাল নিয়ে হাইপটা বেশ স্পষ্টই। ম্যাচের আগের দিন অবশ্য মিরপুর সরব হলো না খুব একটা। আনুষ্ঠানিক ফটোসেশন হয়েছে মেট্রোরেলে।  

দুই দলের অনুশীলন থাকলেও সিলেটের সময় কেটেছে কেবল ফুটবলে। দুই ভাগ হয়ে পুরো টুর্নামেন্টেই তারা খেলেছেন, বুধবার হয়তো হয়ে গেল ফুটবল ম্যাচের ফাইনালও। অনুশীলনে একটা ব্যাপারও খুব স্পষ্ট হলো, সুখী পরিবারের মূল মন্ত্রে এসেছে সিলেটের সাফল্য।  

আরও একটা ব্যাপারও বোধ হয় ছিল বেশ খোলামেলা- নেতা হিসেবে মাশরাফি বিন মুর্তজা। রাজনীতির মাঠের নেতৃত্বে চলে যাওয়া এই ক্রিকেটার এখনও অধিনায়কত্বে একই রকম ক্ষুরধার। দলকে সামলে রাখতে পারা, আগলে রাখার কৌশলে সাফল্য পেয়েছেন বারবার। তার ওই গুণের কথাই বৃহস্পতিবার বলছিলেন প্রতিপক্ষ অধিনায়ক ইমরুল কায়েস, তিনি নিজেও প্রথম বিপিএল শিরোপা পেয়েছিলেন মাশরাফির নেতৃত্বে খেলেই।  

‘ক্রিকেট খেলাটা আসলে দলগত খেলা, এখানে ম্যাজিক বলে কোনো কথা নেই। দলের একতা যদি ভালো থাকে, আপনার দল যদি ভালো খেলতে থাকে তাহলে দলের ফলাফল সম্ভব। অনেকে অনেক বড় মাপের দল করে কিন্তু ফলাফল আসে না। কারণ দলের ভেতরের পরিবেশ ভালো থাকে না। মাঠে গিয়ে শুধু খেলতে হয়... দলের যে বন্ডিংটা এগুলো ঠিক থাকে না। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে এই জিনিসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ’

‘মাশরাফি ভাই যে দলেই খেলুক না কেন এই জিনিসটা খুব ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করে। দলের সবাইকে নিয়ে থাকে, দলের একতাটা ভালো রাখে। আমরা চেষ্টা করি আমাদের দলের একতাটা ভালো রাখার। এটাই উনার হয়তো ম্যাজিক বলা যায়। উনি সবসময় তাদের তরুণ বা বিদেশি ক্রিকেটারদের নিয়ে থাকে। এই জিনিসটা উনি উপভোগ করেন। এটা হয়তো ভালো করার ম্যাজিক। ’

মাশরাফির নেতৃত্ব, তার ব্যাটিং, বোলিং; ইমরুল কায়েস ও নাজমুল হোসেন শান্তর সংবাদ সম্মেলনে ঘুরেফিরে এলো বারবার। যথাযথ কারণেই অবশ্য। এ নিয়ে চার দলের হয়ে পঞ্চমবার বিপিএলের ফাইনালে পা রেখেছেন মাশরাফি। ঢাকা, কুমিল্লা ও রংপুরের হয়ে আগে যে চারবার খেলেছেন, কোনোবারই শিরোপা না নিয়ে ফেরেননি।  

শুরুতে ভক্তের মুখের ‘ম্যাশ-ম্যাজিক’ কথাটা তাই এসেছিল মাশরাফির সংবাদ সম্মেলনেও। মাশরাফি অবশ্য মানছেন না এসব, ‘কোনো ম্যাজিক নেই, সব আল্লাহর রহমত। হারিনি বলে যে হারব না, তা নয়। আবার হেরে যাওয়ার জন্যও নামব না। আগে যা হয়েছে, তা স্মরণ করে লাভ নাই। পরশু আমাদের একটা ফাইনাল আছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। ’

কুমিল্লা এবার বিপিএলে খারাপ আর ভালো সময় দুটোই দেখেছে। তিন ম্যাচ হেরে শুরু হয়েছিল তাদের পথচলা, প্রথমটির পর বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গেই কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘আমার দল তো প্রতিবারই প্রথম ম্যাচ হারে...। ’ তার বিশ্বাস শিষ্যরাও রেখেছেন, এরপর টানা দশ জয় নিয়ে কুমিল্লা এসেছে ফাইনালে।

তাতে অবশ্য তাদের কিছুটা অস্বস্তিও আছে পরিসংখ্যানে। গত বিপিএলেই ফরচুন বরিশাল বিপিএলে তখনকার রেকর্ড টানা সাত ম্যাচ জিতে এসেছিল ফাইনালে; এরপর তাদের হারতে হয়েছে কুমিল্লার কাছেই। এবার রেকর্ড টানা ১০ জয় নিয়ে বিপিএলের ফাইনালে এসেছে কুমিল্লা।

দলটি এমনিতেই বেশ ভালো দেশিদের নিয়ে গড়া। লিটন দাস-মোস্তাফিজুর রহমানদের মতো তারকারা ছিলেনই। তবে বাকিদের চেয়ে কুমিল্লাকে আলাদা করেছে নামি-দামি বিদেশিরা। মোটা অঙ্কের অর্থ খরচ করে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে নিয়ে এসেছিল তারা। তিনি যাওয়ার পর এসেছেন আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারিন, মঈন আলিরা। এসব নিয়ে অবশ্য ভাবতে চায় না সিলেট, তেমন বলছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত।  

‘যে দুইটা দল ফাইনালে উঠেছে আমার কাছে মনে হয় এই দুইটা দলই ভালো দেখে ফাইনালে উঠেছে। আমরা কার বিপক্ষে খেলছি এটা খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। আমাদের লক্ষ্য হলো আমাদের যে পরিকল্পনা সেগুলো কালকে কীভাবে প্রয়োগ করবো। অবশ্যই তারা ভালো দল। নির্দিষ্ট দিনে যারা ভালো খেলবে তারাই জিতবে। কার বিপক্ষে খেলছি, ওই দলে কত বড় খেলোয়াড় আছে ওগুলো নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত না। ’ 
 
সিলেটের শক্তির জায়গা এবার তরুণরা। তৌহিদ হৃদয়, নাজমুল হোসেন শান্ত, জাকির হাসানরা ব্যাটিংয়ের হাল ধরেছেন দুঃসময়ে। ইমাদ-ওয়াসিম চলে যাওয়ায় কিছুটা ভোগা সিলেটের আশার আলো হয়ে এসেছেন লুক উড, গত ম্যাচেই ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া তানজিম হাসান সাকিবও হবেন বোলিংয়ের বড় ভরসা।  

সিলেটের দেশিদের ফর্ম চিন্তায় ফেলছে কুমিল্লাকেও। দলটির অধিনায়ক যেমন বলছিলেন, ‘অনেক ভয়ংকর দল। তাদের দেশিরা যেভাবে খেলছে, আমাদের চিন্তার বিষয়। এটা টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট, যেকোনো সময় যে কেউ ভয়ঙ্কর হয়ে যেতে পারে। ’

কাল বিপিএল ফাইনাল শুরুর আগে আয়োজন আছে অনেক। গানে মাতবে মিরপুর, সন্ধ্যা নেমে এলে খেলা হবে রঙিন আলোরও। কিন্তু শেষ হাসি কে হাসবে? বলা কঠিন। তবে আপাতত কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের আরও একবার শিরোপা জেতার পথে বড় বাধা মনে হচ্ছে ‘ম্যাশ ম্যাজিককেই। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৭ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২৩
এমএইচবি/আরইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।