মিরপুরের গ্যালারি দুই ভাগ হয়ে গেল শুরু থেকেই। লড়াই চললো লাল ও গোলাপির।
নাজমুল হোসেন শান্ত মাইলফলক ছুঁলেন, দলকে নিয়ে গেলেন ভালো অবস্থানে। অভিজ্ঞতার দাম বুঝিয়ে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকালেন মুশফিকুর রহিমও। আলাদা হয়ে থাকলো কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের ব্যাটিং। সিলেটের হয়ে প্রথম তিন ওভারে দারুণ করা রুবেল হোসেন ১৭তম ওভারে দিলেন ২৩ রান। ‘ফাইনালে মাশরাফি হারে না’, কথাটা বদলে গেল। কুমিল্লা পেলো চতুর্থ শিরোপার দেখা।
বৃহস্পতিবার মিরপুরের শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ফাইনালে সিলেট স্ট্রাইকার্সকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৫ রানের সংগ্রহ পায় সিলেট। জবাব দিতে নেমে ৪ বল হাতে রেখেই জয় পায় কুমিল্লা।
টস হেরে শুরুতে ব্যাট করতে নামে সিলেট স্ট্রাইকার্স। তাদের দারুণ শুরু এনে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আন্দ্রে রাসেলের করা প্রথম ওভারে ১৮ রান তোলে সিলেট। কিন্তু পরের ওভারেই খেয়ে যায় ধাক্কা। রানের খাতা না খোলা তৌহিদ হৃদয়কে প্রথম বলেই বোল্ড করেন তানভীর ইসলাম। গত কয়েক ম্যাচের মতো এবারও উপরে ব্যাট করতে নামেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলে এটি ছিল তার শততম ম্যাচ। কিন্তু গত ম্যাচের মতো এবার ব্যাট ঝড় তুলতে পারেননি সিলেট অধিনায়ক, ফেরেন কেবল এক রানেই। রাসেলের বলে কাভারে থাকা ইমরুল কায়েসের হাতে ক্যাচ দেন তিনি।
২৬ রানে দুই উইকেট হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে সিলেট। কিন্তু নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে ফের ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে তারা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৭৯ রান আসে তাদের ব্যাট থেকে। এর মাঝে শান্ত ছুঁয়ে ফেলেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এক আসরে ৫০০ রানের মাইলফলক।
ফাইনালের আগে তার দরকার ছিল ৪৮ রান। ৩৮ বলে হাফ সেঞ্চুরিও তুলে নেন শান্ত। কিন্তু ৪৫ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৬৪ রানেই থামতে হয় তাকে। ইনিংসটি খেলার পথে দুইবার জীবনও পান শান্ত। অষ্টম ওভারে তানভীর ইসলামের বলে ক্যাচ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন শর্ট মিডউইকেটে থাকা ইমরুল কায়েস।
কিন্তু শান্তর শটের জোর এতটাই ছিল যে তা তালুবন্দী করতে ব্যর্থ হন কুমিল্লা অধিনায়ক। তাতে ৫১৬ রান নিয়ে আসর শেষ করেছেন শান্ত। বাঁহাতি এই ওপেনারের পর মুশফিক যোগ্যসঙ্গী হিসেবে কাউকে পাননি। একে একে বিদায় নেন রায়ান বার্ল, থিসারা পেরেরা, জর্জ লিন্ডা ও জাকির হাসান। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৩ রান করেন বার্ল। মুস্তাফিজের শিকার হওয়ার আগে দুইবার জীবন পান লিন্ডা।
পরপর দুই বলে তার ক্যাচ ছাড়েন মঈন আলী ও লিটন দাস। পুরো ইনিংসজুড়েই কুমিল্লার ফিল্ডিং ছিল অবিশ্বাস্য বাজে। তবে মুশফিক অপরাজিত থাকেন শেষ পর্যন্ত। ৪৮ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৭৪ রান করেন তিনি। রাসেলের করা শেষ ওভার থেকে একাই তোলেন ১০ রান। তাতে ৭ উইকেটে ১৭৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় সিলেট। কুমিল্লার হয়ে মোস্তাফিজ দুটি, রাসেল, নারাইন, তানভীর ও মঈন নেন একটি করে উইকেট।
জবাব দিতে নেমে কুমিল্লাকে উড়ন্ত শুরু এনে দেন লিটন দাস। প্রথম দুই ওভারে কুমিল্লা পায় ২৬ রান। এর মধ্যে ৮ বলে ১৫ রান আসে লিটনের ব্যাট থেকে। তাদের প্রথম ধাক্কা দেন রুবেল হোসেন। ৫ বলে ১০ রান করা সুনীল নারাইনকে তিনি বানান জর্জ লিন্ডার ক্যাচ।
ইনিংসের চতুর্থ ওভারে দারুণ করেন লিন্ডা। ইমরুল কায়েসের উইকেট নিয়ে তিনি দেন মেডেন। এরপর দলকে ধীরে ধীরে এগিয়ে নেন জনসন চার্লস ও লিটন দাস। এ দুজনের জুটি থেকে আসে ৭০ রান। রুবেলের বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৩৯ বলে ৫৫ রান করা লিটনের ক্যাচ শান্ত দারুণভাবে নিলে ভেঙে যায় এই জুটি।
এরপর ম্যাচ কিছুটা হলেও হেলে পড়েছিল সিলেটের দিকে। ২৪ বলে কুমিল্লার দরকার ছিল ৫২ রান। এমন সময়ই নিজের শেষ ওভারে ২৩ রান দেন রুবেল হোসেন, হজম করেন ৩ ছক্কা ও ১ চার। এরপর আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি সিলেট। চার্লস ব্যাট চালান তলোয়ারের মতো। ৭ চার ও ৫ ছক্কায় ৫২ বলে ৭৯ রানে অপরাজিত থাকেন এই ক্যারিবিয়ান। অপর প্রান্তে মঈন আলি ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ বলে ২৫ রান করে ম্যাচ শেষ করে আসেন।
বাংলাদেশ সময় : ২২১১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২৩
এমএইচবি