প্রস্তুতিই এখানে মূখ্য ব্যাপার। ম্যাচে খুব বেশি সিরিয়াস থাকেন না ক্রিকেটাররাও।
শনিবার নাসাউ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের কাছে ৬০ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। শুরুতে ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৮২ রান করে ভারত। ওই রান তাড়া করতে নেমে ৯ উইকেট হারিয়ে ১২২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।
টস জিতে ব্যাট করতে নামা ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওভারটা বেশ ভালো করেন মাহেদী হাসান। তিনি কেবল ৫ রান দেন। পরের ওভারে এসে উইকেট নিয়ে নেন শরিফুল ইসলাম। তার করা ওভারের পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন সাঞ্জু স্যামসান। ৬ বল খেলে এক রান করেন তিনি।
তিনে খেলতে নেমে শুরুতে কিছুটা রয়েসয়ে ছিলেন ঋষভ পান্ত। আরেকদিকে বাউন্ডারিতে রানের চাকা সচল রাখেন রোহিত শর্মা। ৫ ওভারে ৩৩ রান করা ভারতের হয়ে বিধ্বংসী হয়ে উঠেন পান্ত।
সাকিবের করা পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে তিনটি ছক্কা হাঁকিয়ে ২২ রান নেন তিনি। পরের ওভারে এসে অবশ্য সাফল্য পান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সপ্তম ওভারে তার বলে রিশাদ হোসেনের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান রোহিত।
আরেক প্রান্তে অবশ্য ঠিকই মারমুখী ছিলেন পান্ত। ১০ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৯২ রান করে ভারত। তবে ৩২ বলে ৫৩ রান করে রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে যান পান্ত। তার বিদায়ের পর উইকেটে এসে খুব বড় কিছু করতে পারেননি শিভাম দুবে। একবার তার ক্যাচ ছেড়ে দেন রিশাদ হোসেন, বল পড়ে নো ম্যানস ল্যান্ডেও।
সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি দুবে। মাহেদী হাসানের বলে লং অনে দাঁড়িয়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাউন্ডারির সামনে থেকে ধরে ভারসম্য রক্ষা করতে না পেরে বল হাওয়ায় ভাসিয়ে বাইরে গিয়ে আবার ফিরে সেটিকে ধরেন তিনি। ১৬ বল খেলে ১৪ রান করে সাজঘরে ফেরত যান দুবে।
এরপর ভারতের ইনিংসের হাল ধরেন হার্দিক পান্ডিয়া। গত কয়েকমাস ধরে খারাপ সময় কাটানো এই অলরাউন্ডার বার্তা দেন ফিরে আসারও। তানভীর ইসলামকে টানা তিনটি ছক্কা হাঁকান। ওই ওভারেই অবশ্য ১৮ বলে ৩১ রান করা সূর্যকুমার যাদবকে আউট করেন তানভীর। শেষ অবধি অপরাজিত থেকে হার্দিক ২৩ বলে দুটি চার ও চারটি ছক্কায় ৪০ রান করেন।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছেন মাহেদী হাসান। ৪ ওভারে ২২ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ইনিংসের শেষদিকে গিয়ে একটি অস্বস্তিও সঙ্গী হয়েছে বাংলাদেশের। তার করা পঞ্চম বলে হার্দিক পান্ডিয়ার শট থামাতে গিয়ে হাতের তালুতে ব্যথা পেয়েছেন তিনি। ৩ ওভার ৫ বলে ২৬ রান দিয়ে ১ উইকেট নিয়েছেন শরিফুল।
৪ ওভারে ৪৭ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন সাকিব আল হাসান। এই ম্যাচে বাংলাদেশ বিশ্রামে রেখেছে মূল পেসার মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদকে। স্পিনারদের মধ্যে রিশাদ হোসেন ২ ওভার করে দিয়েছেন ১৯ রান। সমান ওভারে ২৯ রান দিয়ে একটি উইকেট জুটেছে তানভীরের।
রান তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই বাংলাদেশ ছিল দিশেহারা। ইনিংসের চতুর্থ বলে প্রথম উইকেট হারায় তারা। ২ বলে কোনো রান করার আগেই সৌম্য সরকার সাজঘরে ফেরেন আর্শ্বদ্বীপ সিংয়ের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। তিনে নেমে লিটন দাসও ফেরেন দ্রুতই।
আর্শ্বদ্বীপের লেট সুইং করা বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান লিটন। ৮ বলে ৬ রান করা এই ব্যাটার বলই বুঝে উঠতে পারেননি। ওপেনার নাজমুল হোসেন শান্ত প্রথম পাঁচ বলে কোনো রান করতে পারেননি। ষষ্ঠ বলে তুলে মারতে গিয়ে মিড অনে হার্দিক পান্ডিয়ার হাতে ক্যাচ দেন মোহাম্মদ সিরাজের বলে।
এরপর ২৯ রানের জুটিতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন তানজিদ হাসান তামিম ও তাওহীদ হৃদয়। কিন্তু ছয় বলের ব্যবধানে তারা দুজনেই ফিরে যান। অক্ষর প্যাটেলকে তুলে মারতে গিয়ে মিড উইকেটে বাউন্ডারির কাছে রবীন্দ্র জাদেজাকে ক্যাচ দেন হৃদয়, ১৪ বল খেলে ১৩ রান করেন তিনি। হার্দিকের বলে ঠিকঠাক টাইমিং না হওয়ায় ১৮ বলে ১৭ রান করা তানজিদের ক্যাচ যায় আর্শ্বদ্বীপের কাছে।
এরপরই শুরু হয় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও সাকিব আল হাসানের লড়াই। শুরুতে উপরের ব্যাটারদের ব্যর্থতা ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করেন তারা। পরে অবশ্য হাতও খোলেন। হার্দিক পান্ডিয়ার ১৬তম ওভার থেকে ২১ রান করেন তারা।
৫ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ বলে ৪৫ রান করার পর রিটায়ার্ড হার্ট হন মাহমুদউল্লাহ। তার সঙ্গে সাকিবের জুটি ছিল ৭৫ রানের। ৩৪ বল খেলে ২৮ রান করার পর বুমরাহর বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান সাকিবও।
এ দুজনের ফেরার আবার সেই ব্যাটিংয়ের হতাশা। শেষ ওভার করতে এসে টানা দুই বলে রিশাদ ও জাকের আলি অনিককে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন শিভাম দুবে। শেষ অবধি অবশ্য হয়নি সেটি। ৩ বলে ৩ রান করে অপরাজিত ছিলেন মাহেদী।
বাংলাদেশ সময় : ১২০৫ ঘণ্টা, ২ জুন, ২০২৪
এমএইচবি