পিছিয়ে থাকা দলকে অনেকটা নিজের কাঁধে টেনে তুলে এনেছেন বিশ্বমঞ্চে। বুক চিতিয়ে লড়াই করতেও শিখিয়েছেন হাতে ধরেই।
আজ গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল নামিবিয়া। আগের বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় নামিবিয়ানদের জন্য এই ম্যাচ ছিল মর্যাদা রক্ষার। কিন্তু ইংলিশদের জন্য ছিল বাঁচা-মরার লড়াই। যে লড়াইয়ে জিতেছে তারা। অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে বৃষ্টি আইনে ১০ ওভারে ১২৬ রানের লক্ষ্য পেয়েছিল নামিবিয়া।
জবাব দিতে নেমে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারে স্বেচ্ছায় উঠে যান নামিবিয়ান ব্যাটার নিকোলাস ডেভিন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে প্রথম ও এই সংস্করণে মাত্র চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে রিটায়ার্ড আউট হন তিনি। এরপরই নামেন অলরাউন্ডার ভিসে। যদিও তিনি মিডল অর্ডারে ব্যাট করেন। কিন্তু বিশেষ পরিস্থিতিতে আজ তিনে নেমে পড়েন তিনি। দলের হার আটকাতে না পারলেও খেলেন ১২ বলে ২৭ রানের দারুণ ইনিংস। হাঁকিয়েছেন দুটি করে চার ও ছক্কা।
ম্যাচের ২ বল বাকি থাকতে ইংলিশ পেসার জফরা আর্চারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ভিসে। ইংল্যান্ডের কয়েকজন খেলোয়াড় এগিয়ে এসে ভিসের সঙ্গে হাত মেলান। কেউ কেউ জড়িয়েও ধরেন। নিজ দলের কাছ থেকেও অভিবাদন পান তিনি। বিদায়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল তখনই। ভিসে নিজেও মাঠ ছাড়ার সময় দর্শকদের অভিবাদনের জবাবে হেলমেট খুলে ধরেন। পরের ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়ে আনুষ্ঠানিকভাবেই বিদায়ের ঘোষণা দেন তিনি।
ভিসে বলেন, '(পরের বিশ্বকাপ খেলবেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে) পরের বিশ্বকাপ আরও দুই বছর পরের কথা। আমার বয়স এখন ৩৯ বছর। ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য আমার হাতে খুব বেশি অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না। অবশ্যই আরও কয়েক বছর খেলতে পারলে ভালো লাগবে। আমি মনে করি এখনও খেলে যেতে পারি। কিন্তু বিশেষ করে নামিবিয়ার হয়ে আমার ক্যারিয়ার শেষ করার জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা আর হতে পারে না। এই দলের হয়ে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছি এবং তাদের হয়ে বিশ্বকাপের মঞ্চে ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ খেলা- মনে হচ্ছে এটাই সঠিক সময়। '
ভিসের বিদায় নিয়ে পরে কথা বলেন নামিবিয়ার অধিনায়ক এরাসমাসও। নামিবিয়ার ক্রিকেটে ভিসের অবদানের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটা তার শেষ ম্যাচ ছিল। যে ম্যাচে তার এমন পারফরম্যান্স দারুণ ব্যাপার। (নামিবিয়া দলে) তার প্রভাব অনেক। বিশেষ করে যে লেভেলের ক্রিকেট তিনি উপহার দিয়েছেন আমাদের। পারফরম্যান্সের দিক থেকে তিনি দারুণ, কিন্তু মাঠের বাইরে তিনি এমন একজন; যার কাছ থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি এবং তিনি আমাদের এই পর্যায়ে আসতে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। '
দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাব ঘটেছিল ডেভিড ভিসের। ২০১৬ সালে প্রোটিয়াদের সঙ্গে কোলপ্যাক চুক্তিতে যান তিনি। এর পাঁচ বছর পর নামিবিয়ার হয়ে খেলার অনুমোদন পাওয়ার পর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে নতুন দলের জার্সিতে অভিষেক হয় তার। দলকে দুপার টুয়েলভ পর্বে তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। সবমিলিয়ে নামিবিয়ার জার্সিতে ৩টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছেন ভিসে। এবারের বিশ্বকাপে নামিবিয়ার একমাত্র জয়ের দিনেও নায়ক ছিলেন তিনিই। ওমানের বিপক্ষে ২৮ রানে ৩ উইকেট নেওয়ার পর সুপার ওভারে ব্যাট ও বল দুই ভূমিকাতেই ছিলেন এই অলরাউন্ডার।
নামিবিয়ার জার্সিতে সবমিলিয়ে ৩৪টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ভিসে। ব্যাট হাতে করেছেন ৫৩২ রান এবং উইকেট নিয়েছেন ৩৫টি। এছাড়া এই দলের হয়ে ৯টি ওয়ানডে খেলে ২২৮ রান করার পাশাপাশি ৬টি উইকেট নিয়েছেন। দক্ষিণ ও নামিবিয়া দুই দলের জার্সিতে সবমিলিয়ে ৫৪টি টি-টোয়েন্টি ও ১৫টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি।
জাতীয় দল ছাড়লেও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে দেখা যাবে ভিসেকে। গত ১২ মাসে সিএসএ টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ, পিএসএল, এসএ টি-টোয়েন্টি, দ্য হান্ড্রেড এবং ব্লাস্টে খেলেছেন তিনি। হান্ড্রেডের ফ্র্যাঞ্চাইজি নর্দার্ন সুপারচার্জার্স তাকে এবারও ধরে রেখেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৫ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৪
এমএইচএম