শিরোপা অন্যতম দাবিদার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে এসে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছে পাকিস্তান। এমন ফলাফলের কারণে তোপের মুখে পড়েছেন পাকিস্তানি খেলোয়াড়রা।
আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিশ্চিত হওয়ার একদিন পর এ নিয়ে মুখ খুলেছেন পাকিস্তানের অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিম। নিজের মুখেই স্বীকার করলেন, টি-টোয়েন্টিতে দিন দিন আরও পিছিয়ে যাচ্ছে পাকিস্তান দল। তবে এবারের যা হলো, এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারে না, এমনটাই মত তার।
আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আজ রাতে গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ও বিদায়ী ম্যাচ খেলবে পাকিস্তান। বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় এই ম্যাচ থেকে কিছু পাওয়ার নেই তাদের। তবে শেষটা অন্তত জয়ের মাধ্যমে শেষ করতে চান বলে জানালেন ইমাদ। ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'হ্যাঁ, এটাই শেষ সীমানা। এর নিচে আর নামা যায় না। এটাই ফ্যাক্ট। '
'আমি জানি টুর্নামেন্ট থেকে আমাদের বিদায় নিশ্চিত হয়ে গেছে এবং এটা দলের জন্য খুব কঠিন পরিস্থিতি। কিন্তু দিন শেষে এটাও (আয়ারল্যান্ড ম্যাচ) একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ, একটি বিশ্বকাপ ম্যাচ; তাই আমরা সহজভাবে নিচ্ছি না। আমরা দেশের জন্য এবং দেশের সম্মান রক্ষার জন্য খেলবো, যা আমরা আগেও করেছি; কিন্তু ফলাফল আমাদের পক্ষে আসেনই। এতে আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে আমরা এটাকে বিশ্বকাপের ম্যাচ হিসেবেই খেলবো। '
যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের কাছে হেরে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া পাকিস্তানের জন্য আজকের ম্যাচটি হতে পারতো সুপার এইটের ওঠার সুযোগ। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র-আয়ারল্যান্ড ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় সেই স্বপ্ন ভেঙে গেছে তাদের। যুক্তরাষ্ট্রের পয়েন্ট হয়ে গেছে ৫। ফলে কানাডাকে হারিয়ে ২ পয়েন্ট পাওয়া পাকিস্তান আজ আয়ারল্যান্ডকে হারালেও লাভ হবে না। এভাবে বিদায় নিতে হওয়ায় ভেঙে পড়েছে পাকিস্তান দলের সদস্যরাও।
তবে ইমাদ মনে করেন, দলের মানসিকতা ঠিক করতে পারলে, আবার শক্তিশালী হবে উঠবে পাকিস্তান। এজন্য ব্যাটিং, ফিল্ডিং ও বোলিং- তিন বিভাগেই পরিবর্তন আনার দিকে জোর দিতে বলছেন তিনি, 'আমরা বিশ্বের সেরা দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের মানসিকতা বদলে গেছে। অথচ একসময় টি-টোয়েন্টিতে আমাদের আধিপত্য ছিল। '
'আমার মনে হয়, সেখান থেকে আমরা কিছুটা পিছিয়ে পড়েছি। হয়তো তিন বিভাগেই আমাদের মানসিকতা বদলাতে হবে। খেলোয়াড়দের মানসিকতা বদলাতে পারলে অনেক কিছু অর্জন করা সম্ভব। অনেক কথাই বলা যায়- কিন্তু সত্য হলো এখন আমরা টুর্নামেন্টের বাইরে ছিটকে গেছি। পরের বিশ্বকাপে কী হবে জানি না। তবে সঠিক পন্থা অবলম্বন করলে আরও ভালো ফল আসবে...। আমি মনে করি, পরিবর্তন দরকার, যাতে আমরা এগিয়ে যেতে পারি এবং এখন যেভাবে খেলা হচ্ছে সেভাবে খেলতে পারি। '
এই বিশ্বকাপের আগে ইমাদ ওয়াসিম ও মোহাম্মদ আমিরকে অবসর থেকে ফেরায় পিসিবি। দলে বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শাহিন শাহ আফ্রিদির মতো তারকা ক্রিকেটার রয়েছেন। তারপরও এমন ফলাফল কেন? এর ব্যাখায় ইমাদ বলেন, 'সমস্যা হলো, আমাদের দলটা খুবই ভালো। যেকোনো ধরনের ক্রিকেট খেলার জন্য আমরা যথেষ্ট ভালো দল। আমরা সেটাই চেষ্টা করিনি। কিন্তু বিষয় হলো, সেটাই চেষ্টা করবে হবে। হারার ভয় দূর করতে হবে। একজনের পরিবর্তনে কিছু হবে না। একই বলে ছক্কা, চার কিংবা সিঙ্গেল হতে পারে এবং একই বল আবার উইকেট নিতে পারে, আবার ডটও হতে পারে। '
এবারের আসরে পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় লজ্জার দুটি হার এসেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের বিপক্ষে। আইসিসির সহযোগী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র সহজেই হারিয়ে দিয়েছে পাকিস্তানকে। আর ভারতের বিপক্ষে মাত্র ১২০ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৬ রানে হেরেছেন বাবর-রিজওয়ানরা। রান তাড়ায় নেমে তাদের রক্ষণাত্মক ব্যাটিংকেই হারের প্রধান কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে।
তবে হারের জন্য একজন বা দুজন নয়, পুরো দলেরই দায় রয়েছে বলে মত ইমাদের, 'আমরা নিজেদের দোষেই প্রথম দুই ম্যাচ হেরেছি। কোনো একজনের জন্য নয়, পুরো দলীয়ভাবেই হেরেছি। এটার পক্ষে কোনো যুক্তি চলে না। যদিও খেলায় হার-জিত থাকেই; তবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হেরে যাওয়া উচিত হয়নি। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটাও আমাদের হাতেই ছিল। তবে কোনো অজুহাত নেই। আমরা দল হিসেবেই হেরেছি...। আমরা খুবই হতাশ এবং দুঃখিত। কিন্তু এটাও বলবো, আমরা মানুষ এবং আমরাও ভুল করতে পারি। এসব আমাদেরও কষ্ট দেয়। '
অবসর ভেঙে ফেরা আমিরের মতোই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন ইমাদ। যে কারণে আজ রাতেই আরও একবার অবসরের পথে হাঁটতে যাচ্ছেন তারা, এমনটাই শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে ইমাদ বললেন, 'আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে- আমরা বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবো। আমি গোপনে কিছু করি না। এর আগে সবাইকে জানিয়েই অবসর নিয়েছিলাম। যদি কিছু ঘটে আমি সবার সামনেই বলবো। '
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৭ ঘণ্টা, জুন ১৬, ২০২৪
এমএইচএম