ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

টাইগারদের দৈত্য বধের গল্প

ওয়ার্ল্ডকাপ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫
টাইগারদের দৈত্য বধের গল্প

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শনিবার (২১ ফেব্রুয়ারি) অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। ক্রিকেটীয় বাস্তবতা বলছে দুই দলের মধ্যে রয়েছে যোজন-যোজন পার্থক্য।

কিন্তু মুশফিকুর রহিমের শোনালেন আশার কথা, তার হিসেবে অজিদের হারানো অসম্ভব কিছু নয়।  
 
মুশফিক তার আত্মবিশ্বাসের রসদ পেয়েছে টাইগারদের অতীত ইতিহাস থেকে। যখনি বাংলাদেশের পারফরম্যান্স নিয়ে কথা উঠেছে তখনই ক্রিকেটাররা ক্রিকেটের বড় শক্তিগুলোকে হারিয়ে তার জবাব দিয়েছে মাঠেই। পাঠক চলুন জেনে নিই টাইগারদের দৈত্য বধের গল্প।
 
এ পর্যন্ত বাংলাদেশ  ভারতকে হারিয়েছে তিনবার, পাকিস্তানকে একবার, শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে চার, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছয়বার, দক্ষিণ আফ্রিকাকে একবার, অস্ট্রেলিয়াকে একবার, ইংল্যান্ডকে দুইবার, নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে সাতবার।
 
বাঘের থাবায় কুপোকাত পাকিস্তান
বাংলাদেশের জন্ম শত্রু পাকিস্তান। আর সে পাকিস্তানকে ক্রিকেট মাঠে কুপোকাত করেই বাংলাদেশ প্রথম কোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হারালো। ১৯৯৯ ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে ৩১ মে ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে হট ফেভারিট পাকিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের বাংলাদেশ। ম্যাচ সেরা হয়েছিল খালেদ মাহমুদ সুজন। সেই ম্যাচে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ করেছিল ২২৩ রান। পাকিস্তান ১৬২ রানেই অল আউট হয়ে যায়।
 
পাঁচ বছর পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ
পাকিস্তানকে হারানোর পর টানা পাঁচ বছর জয়ের মুখ দেখেনি টাইগাররা। ২০০৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হারারেতে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আট রানের জয় পেলে ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসে টাইগাররা। সেই ম্যাচে ৩২ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচ সেরা পুরস্কার পেয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। বাংলাদেশের ২৩৯ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে জিম্বাবুয়ে নয় উইকেটে সংগ্রহ করে ২৩০ রান।
 
নিজ মাটিতে প্রথমবারের মতো ভারত বধ
২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ভারতকে প্রথমবারের মতো হারায় বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ১৫ রানে সৌরভ গাঙ্গুলির ভারতকে হারায় হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে আফতাব আহমেদের ৬৭ রান এবং মাশরাফি মর্তুজার ৩৯ বলে ৩১ রানের ইনিংস বাংলাদেশকে এনে দেয় ২২৯ রানের পুঁজি। ভারতের ইনিংসের তৃতীয় বলেই বীরেন্দর শেওয়াগ মাশরাফির বলে বোল্ড হয়ে ফিরে গেলে বড় ধাক্কায় ভারত। শেষ পর্যন্ত ৪৮.২ ওভারে ২১৪ রানে অল আউট হয়ে যায় ভারত। ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
 
কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়া বধ
২০০৫ সালের ১৮ জুন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে সবসময় জ্বল জ্বল করবেই। সেদিন ইংল্যান্ডের কার্ডিফে সে সময়ের বিশ্বের এক নম্বর দলকে পাঁচ উইকেটে হারিয়ে সাবালক হওয়ার পথে একধাপ এগিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। সেই ম্যাচে আগে ব্যাট করে অজিরা ২৫০ রানের টার্গেট দেয় টাইগারদের। মোহাম্মদ আশরাফুলের অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে চার বল হাতে রেখেই জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
 
বগুড়ায় এলো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম জয়
বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে ২২ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কাকে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে হারায় বাংলাদেশ। সেটিই ছিল লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম জয় টাইগারদের। সে ম্যাচে শ্রীলঙ্কা আগে ব্যাট করে ২১২ রানে অল আউট হয়ে যায়। তিন ওভার বাকি থাকতেই চার উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ২১ বলে ৩২ রানের ইনিংস খেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন আফতাব আহমেদ।
 
বিশ্বকাপ থেকে ভারতকে বিদায় করে দিল টাইগাররা
২০০৭ সালেরি ১৬ মার্চ পোর্ট অব স্পেনে বিশ্বকাপের নবম আসরে ভারতের অহং চুর্ন করে দিল টাইগাররা। সেই ম্যাচে ভারত আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯১ রানে অল আউট হয়ে যায়। এরপর পাঁচ উইকেট হাত রেখেই নয় বল বাকি থাকতেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় টাইগাররা। মাশরাফি বিন মুর্তজা ৩৮ রানে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান। মূলত সেই ম্যাচ হারের ফলে সুপার এইটে জায়গা পায়নি ভারত।
 
সুপার এইটে দক্ষিণ আফ্রিকাকে চমকে দিল টাইগাররা
সাত এপ্রিল ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপের সুপার এইট পর্বে বাংলাদেশ ৬৭ রানে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে। ভারতকে বিদায় করে সুপার এইটে জায়গা করে নেওয়ার পর কম সমালোচনা সহ্য করতে হয়নি টাইগারদের। টাইগাররা তার উত্তর দিল প্রোটিয়াদের বড় ব্যবধানে হারিয়ে। সেই ম্যাচে মোহাম্মদ আশরাফুলের ৮৭ রানের ইনিংস টাইগারদের এনে দেয় ২৫১ রানের পুঁজি। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৮৪ রানে অল আউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। মোহাম্মদ আশরাফুল হন ম্যাচ সেরা।
 
ক্যারিববীয়দের বিপক্ষে প্রথম জয়
২০০৯ সালে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে তাদের মাটিতেই হোয়াইট ওয়াশ করে বাংলাদেশ। তবে সে সময় দলীয় কোন্দলের কারণে ক্যারিবীয়দের মূল দল খেলেনি। নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি ইনজুরির কবলে পড়লে  অধিনায়কের দায়িত্ব পান সাকিব আল হাসান। সেই সিরিজেই প্রথম ম্যাচে ২৯ জুলাই রোসিওতে ৫২ রানে ক্যারিবীয়দের হারায় টাইগাররা। ৩৯ রানে চার উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন আব্দুর রাজ্জাক। আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ করেছিল ২৪৬ রান।
 
ব্রিস্টলে ইংলিশ বধ
২০১০ সালে পাঁচ জুলাই ইংল্যান্ডকে তাদের মাটিতেই পাঁচ রানে হারায় বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে  আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ ২৩৭ রানের টার্গেট দেয় ইংলিশদের।   ইংল্যান্ড ২৩১ রানে অল আউট হয়ে গেলে ক্রিকেটের জনকদের বিপক্ষে প্রথম জয় পায় টাইগাররা। মাশরাফি বিন মর্তুজা ২২ রান এবং ৪২ রানে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হন।
 
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয়
২০১০ সালে ৫ অক্টোবর মিরপুরে পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডকে নয় রানে হারায় বাংলাদেশ। সেটাই কিউইদের বিপক্ষে প্রথম আন্তর্জাতিক জয়। বৃষ্টি বিঘ্নিত সেই ম্যাচে বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে ২২৮ রানে অল আউট হয়ে যায়। এরপর বৃষ্টির কারণে নিউজিল্যান্ডের টার্গেট ৩৭ ওভারে ২১০ রান নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিউইদের ইনিংস আট উইকেটে ২০০ রানে থেমে যায়। ৪১ রানে চার উইকেট এবং ব্যাট হাতে ৫৬ রানের ইনিংসের জন্যে ম্যাচ সেরা হন সাকিব আল হাসান। সেই সিরিজেই ৪-০ ব্যবধানে কিউইদের হোয়াইট ওয়াশ করে টাইগাররা।
 
এছাড়া ২০১২ সালের এশিয়া কাপে ভারত এবং শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে জায়গা করে বাংলাদেশ। ২০১২ সালে  ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে  তিন দুই ব্যবধানে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ প্রথমবারের মতো জয় পায় টাইগাররা। সেই ম্যাচ তিন উইকেটে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ। ২০১৩ সালের নভেম্বরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে দ্বিতীয়বারের মতো কিউইদের হোয়াইট ওয়াশ করে টাইগাররা।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।