ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

আইসিসি সভাপতির শূন্যপদে বসছেন না কেউ!

মুশফিক পিয়াল, স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
আইসিসি সভাপতির শূন্যপদে বসছেন না কেউ! মুস্তফা কামাল

ঢাকা: বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে আম্পায়ারদের বেশকিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে ক্রিকাটাঙ্গনে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ম্যাচ পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় আইসিসি সভাপতি মুস্তফা কামাল আম্পায়ারিংয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।



আইসিসি সভাপতির ওই বক্তব্যের দোহাই দিয়ে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ফাইনালে বিজয়ী দলের অধিনায়কের হাতে বিশ্বকাপ ট্রফি তুলে দেন আইসিসির চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন।

এরপর দেশে ফিরে আইসিসির সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করে সংবাদ মাধ্যমের সামনে শ্রীনিবাসনের বিরুদ্ধে কামান দাগেন মুস্তফা কামাল। বিশ্ব মিডিয়াতেও ফলাও করে প্রচারিত হয় কামালের পদত্যাগ প্রসঙ্গ।

মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই আইসিসির সভাপতি পদ শূন্য হয়ে যাওয়ার পর গুঞ্জন ওঠে- অন্তবর্তীকালীন সময়ে আইসিসির সভাপতির দায়িত্ব নেবেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) সভাপতি নাজাম শেঠী।

আইসিসির দুবাই বোর্ডসভায় এ বিষয় নিয়ে আলোচনাও হয়। তবে অন্তবর্তীকালীন সময়ে এই দায়িত্ব অন্য কাউকে দেওয়া হবে না বলে গত শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) আইসিসির পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।

২০১২ সালে আইসিসি সহ-সভাপতি হওয়ার পালা ছিল বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে যেকোন এক দেশের। ওই বছর পিসিবি সমর্থন করেছিল মুস্তফা কামালকে। তারই ধারাবাহিকতায় কামাল পরবর্তীতে আইসিসির সভাপতি হন। তবে, কামাল পদত্যাগ করায় আইসিসির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বাংলাদেশ অথবা পাকিস্তান থেকেই ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট কেউ দায়িত্ব নিতে পারবেন বলে জানানো হয়।

সদ্য বিদায়ী সভাপতি কামালের পদত্যাগ পত্র আইসিসি’র বোর্ডসভায় সবাই মেনে নিয়েছেন বলেও জানান বোর্ডসভা শেষে দেশে ফেরা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।

পাপন জানিয়েছিলেন, আইসিসির পরবর্তী সভাপতি হিসেবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান নির্বাহী নাজাম শেঠীকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আগামী জুনে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে আইসিসি।

পাপন আরও জানান, শেঠী বর্তমানে পিসিবির চেয়ারম্যান পদেও রয়েছেন। তিনি যদি অন্তবর্তীকালীন সভাপতি হন তাহলে এ বছরের জুলাই পর্যন্ত মেয়াদ পাবেন। আইসিসি থেকে সভাপতি পদের জন্য বাংলাদেশ থেকে নাম চেয়ে টেলিফোন করেছিল। তবে, লিখিত কোনো কাগজপত্র বিসিবিকে পাঠায়নি আইসিসি। সব দিক বিবেচনা করে আইসিসির সভাপতি হওয়ার আগ্রহ এ মুহূর্তে নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের।

নাম না পাঠানোর কারণ প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি বলেন, নাম না পাঠানোর কারণ অনেকগুলো। সভাপতির মেয়াদ আছে মাত্র আড়াই মাস। তাছাড়া ১৫ অথবা ১৬ এপ্রিল আমরা নাম প্রস্তাব করলেও পরবর্তী মিটিং কিন্তু নতুন সভাপতি পাচ্ছেন না। যিনি প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি ফিজিক্যালি কোনো কিছু করতে পারবেন না। শুধু বার্বাডোজে একটা মিটিং আছে, সেখানে ১০ মিনিটের একটি বক্তৃতা দিতে পারবেন। এ কাজের জন্য কেউ প্রেসিডেন্ট হবে বলে মনে হয় না।

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের যৌথ নমিনেশনে মুস্তফা কামাল সভাপতি হয়েছিলেন জানিয়ে পাপন বলেন, এবারও হয়তো জয়েন্ট নমিনেশনে সভাপতি নির্বাচিত করা হবে। আমাদের এ সব নিয়ে এখন আগ্রহ নেই। বোর্ড থেকে আমরা মনে করছি, একটা মিটিংয়ে গিয়ে শুধু পেপার’স পড়বে- এ জন্য সভাপতি হওয়া গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়।

অন্যদিকে কপাল পুড়েতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ বিতর্কের মূল ক্রীড়নক শ্রীনিবাসনেরও। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইসিসি’র চেয়ারম্যান পদে থাকছেন বির্তকিত এই ক্রিকেট কর্মকর্তা। বিসিসিআই সচিব অনুরাগ ঠাকুর গত বৃহস্পতিবার (১৬ এপ্রিল) একথা নিশ্চিত করেন।

নিয়ম অনুযায়ী, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৬ জুলাই পর্যন্ত দুই বছর ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধিকে আইসিসির চেয়ারম্যান পদে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে চায়।

অনুরাগ ঠাকুরের বক্তব্যে পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড চাচ্ছে না বিতর্কিত শ্রীনিবাসনকে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধি হিসেবে রাখতে। তাই মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই বিশ্ব ক্রিকেটকে অপমান করা শ্রীনিবাসনকে সরিয়ে দিতে চায় বিসিসিআই। শ্রীনিবাসনের স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন কে, এমন কিছু জানাননি অনুরাগ ঠাকুর।

অনুরাগ ঠাকুর আরও জানান, সেপ্টেম্বরে বিসিসিআই’র বার্ষিক সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করা হবে৷

এর আগে সদ্য শেষ হওয়া বিশ্বকাপে বাংলাদেশ-ভারত কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচটির বিতর্কের জের ধরে আম্পয়ারিংয়ের কড়া সমালোচনা করেছিলেন কামাল। পরে ফাইনাল মঞ্চে তাকে অপসারণের কারণে সভাপতি পদ থেকে পদত্যাগ করেন বিসিবি’র সাবেক সভাপতি।

বিশ্বকাপ ট্রফি সভাপতিকে না দিয়ে নিজে চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে তুলে আইসিসি’র সংবিধান ভাঙেন শ্রীনিবাসন। দ্বন্দ্ব শুরু হয় সাবেক সভাপতি কামালের সঙ্গে। কামাল অনেক অভিযোগ করলেও মুখ খোলেননি বিতর্কিত শ্রীনিবাসন। সম্প্রতি নিজের সঙ্গে আইসিসি’কে যেভাবে বিতর্কে ঠেলে দিয়েছেন শ্রীনিবাসন, তা থেকে কিভাবে বের হন, তাই দেখার অপেক্ষায় ক্রিকেট বিশ্ব।


বাংলাদেশ সময়: ০০৫৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৫
এমআর/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।