ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

খুলনায় তিনশ রানই লিডের জন্য যথেষ্ট!

অঘোর মন্ডল, স্পেশালিস্ট স্পোর্টস রাইটার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৩১ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৫
খুলনায় তিনশ রানই লিডের জন্য যথেষ্ট! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল। কিন্তু বৃষ্টি হলো না।

তারপরও দিনের ৯০ ওভার পুরো ব্যাট করতে পারলো না বাংলাদেশ! এক বল বাকি থাকতেই দিনের খেলা শেষ হলো। কারণ, ৯০তম ওভারের পঞ্চম বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লেন মুমিনুল হক। বাঁহাতি স্পিনার জুলফিকার বাবরের বলে দাঁড়ি পড়ে গেলো তাঁর ৮০ রানের ইনিংসে। দিনশেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২৩৬ রান। আর দিনের সেরা পারফরমার বেছে নিতে হলে মুমিনুলের নামটা বসিয়ে দিতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই দিনশেষে বাংলাদেশ দলের প্রতিনিধি হিসেবে সংবাদ মাধ্যমের সামনে হাজির হলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু ম্যাচের আগামী দিনের পূর্বাভাস নিয়ে যা বললেন, তা শুনে বাংলাদেশ আবহাওয়া দপ্তরের কথা মনে পড়ছে। যা আভাস দেয়া হয়, তার বেশিরভাগই ভুল প্রমাণিত হয়! এবং মুমিনুল যদি বাংলাদেশের আবাহওয়াবিদদের মতো ভুল প্রমাণিত হন, তাহলে বেশি লাভবান (বেনিফিটেড) হতে পারে বাংলাদেশ দলই!

‘ খুলনার এই উইকেটে রান করা খুব কঠিন মনে হলো। এখানে প্রথম ইনিংসে ৩শ রান যথেষ্ট। ’ ---ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একাধিকবার কথাটা বললেন বাংলাদেশ দলের এই ওয়ান ডাউন ব্যাটসম্যান। প্রথম ইনিংসে তিনশ রান করলে পাকিস্তানের বিপক্ষে লিড পাওয়া যাবে এমন ধারণাই দিলেন তিনি। আর তিনশ রানের কোটা পেরুতে বাংলাদেশের দরকার আর মাত্র ৬৪টি রান। হাতে ৬ উইকেট। অপরাজিত ব্যাটসম্যান হিসেবে ১৯ রান নিয়ে উইকেটে আছেন সাকিব আল হাসান। সকালবেলায়  সাকিবের সঙ্গী হিসেবে ব্যাট করতে নামবেন মুশফিকুর রহিম। এরপরে নামগুলো শুভাগত হোম, সৌম্য সরকার, রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ শহীদ এবং তাইজুল ইসলাম। খুলনার উইকেটে রান করা যে সহজ হচ্ছে না এটা ঠিক। কিন্তু তিনশ রান করে লিড নেয়ার আশা একটু বাড়াবাড়িই শোনাচ্ছে। অন্তত স্কোর কার্ডের দিকে তাকালে। বাংলাদেশ ইনিংসে কমবেশি রান পেয়েছেন সবাই। তামিম(২৫), ইমরুল কায়েস( ৫১), মাহমুদউল্ল্যাহ (৪৯) ব্যাট করেছেন টেস্ট মেজাজেই। তাই ‘তিনশ রান লিড  নেয়ার জন্য যথেষ্ট’—একথা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে।

কিন্তু বক্তার নাম যখন মুমিনুল হক, তাঁর কথাকে গুরুত্ব দিতেই হবে। টানা দশটা টেস্টে পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংস খেলে যিনি টেন্ডুলকার, এডড্রিচদের সঙ্গে একই সরণিতে এসে দাঁড়ালেন। আর সামনে  এবিডি ভিলিয়ার্স, ভিভিয়ান রিচার্ডস, গৌতম গম্ভীর ও বীরেন্দ্র শেবাগ। এদের মধ্যে শেষ তিনজন টানা এগার ম্যাচে পঞ্চাশোর্ধ রানের ইনিংসে খেলেছেন। আর এবিডি কাজটা করেছেন টানা ১২ টেস্টে। সেই মুমিনুল  বললেন,  ‘ উইকেট এতো কঠিন যে, ৮০ রান করতে আমার মনে হচ্ছিলো একশ বছর লাগবে!’

না, ২৬৩ মিনিটেই ৮০ রান করলেন তিনি। এবং ৮বার বল সীমানার বাইরেও পাঠালেন। পাকিস্তান দলটার খুব ভাল সময় যাচ্ছে না এটা ঠিক। তারপরও মিসবাহ, ইউনিস খান, আজহার আলী, মোহাম্মদ হাফিজের মতো কয়েকজন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান এই দলে আছেন। এই দলটাকে প্রথম ইনিংসে তিনশ রানের নিচে আটকে রাখতে পারলে, বলতেই হবে শুধু ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি নয়, টেস্টেও বাংলাদেশ এখন দুর্দান্ত দল। এবং  তখন মুমিনুলের ব্যাটিংয়ের চেয়ে বেশি প্রশংসা করতে হবে তাঁর উইকেট এবং ম্যাচ রিডিং করার ক্ষমতার। কিন্তু আপাতত সেই শংসাবাক্য জমা রাখতে হচ্ছে ‘ভবিষতের লকারে। ’

কিন্তু যে ইনিংসটা মুমিনুল খেললেন তার প্রশংসা করতেই হবে। কঠিন উইকেটেও ঠাণ্ডা মাথায় নিজের স্বাভাবিক ব্যাটিংটাই করলেন এই বাঁহাতি। জুনায়েদ খান, ওয়াহব রিয়াজ, জুলফিকার বাবর, ইয়াসির শাহকে যেভাবে সামাল দিলেন তাতে ব্যাটসম্যান হিসেবে পরিণত হয়ে ওঠার চিত্রটাই ফুটে উঠেছে। ১৩ টেস্ট খেলে তাঁর গড় কেন ৬৩ দশমিক ৯, তারও একটা ডকুমেন্টারিই যেন দেখিয়ে গেলেন তিনি। খারাপ উইকেটে ভাল ব্যাট করাই বড় ব্যাটসম্যানের কাজ। পাকিস্তান দলেও যে ইউনিস খান, মিসবাহ-র মতো জনাকয়েক ব্যাটসম্যান আছেন! অতীতে যারা খারাপ সময়ে, খারাপ উইকেটও দলের জন্য বড় ইনিংস খেলেছেন। সেই দলটার বিপক্ষে তিনশ রান করে লিড পেতে হলে রুবেল, সাকিব, তাইজুলদের ভাল বোলিং-ই করতে হবে। তবে মুমিনুলের কথা বাংলাদেশ বোলারদের উপর বাড়তি কোনো চাপ তৈরি করলো নাকি তাদের অনুপ্রাণিত করলো, তার কিছুটা আভাস পেলেও পাওয়া যেতে পারে টেস্টের দ্বিতীয় দিন। বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন অবশ্য মনে করছেন,  ‘কতো রান হলে লিড পাওয়া যাবে সেটা ভাবার চেয়ে এই মুহূর্তে ভাবা উচিত দ্বিতীয় দিন আরো দুটো সেশন ব্যাট করা। ’

তবে প্রথম দিনে যা হলো, তাতে সব দ্বিধাদ্বন্দ্ব সরিয়েও লিখতে হচ্ছে, দিনটা পাকিস্তানের হতে দেয়নি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। আর মুমিনুলের ভাষায় ;‘ আমার উইকেটটা না হারালে বলতেই পারতাম দিনটা আমাদের। ’ কিন্তু দিনটা বাংলাদেশের না, তা-ই বা বলবেন কিভাবে? সারাদিনে পাকিস্তানের সাফল্য বলতে গোটা চারেক উইকেট। টেস্টের দ্বিতীয় দিনেও আবাহওয়ার যা পূর্বাভাস তাতে বৃষ্টি হতে পারে। তবে বৃষ্টির মতো টপাটপ যদি বাংলাদেশের উইকেট না পড়ে তাহলে তিনশ পেরিয়ে যাবে বাংলাদেশের ইনিংস তা বলাই যায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৫
সম্পাদনা: জেএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।