ইডেন গার্ডেন্স থেকে (কলকাতা): আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে মূল পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে বুধবার (১৬ মার্চ) পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ। কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৩টায়।
বিশ্বকাপের এবারের মিশনটা দুর্দান্ত করেছে টিম বাংলাদেশ। বাছাই পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ রানে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচটি বৃষ্টি বাগড়ায় আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করতে হয়। শেষ ম্যাচে ওমানকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা পায় বাংলাদেশ।
ঠিক এমন জয়ে ধারায় থেকে বিশ্বকাপের মূল পর্বে টাইগাররা মোকাবেলা করবে টি-টোয়েন্টির শক্তিশালী দল পাকিস্তানকে। যেখানে জয় ভিন্ন আর কিছুই ভাবতে চাইছে না বাংলাদেশ।
তবে, আগের ম্যাচের জয় এবং টাইগারদের বর্তমান ফর্ম নাকি এ ম্যাচের জন্য ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়! এমনটাই মনে করেন টাইগার দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার কাছে টি-টোয়েন্টিতে ম্যাচের নির্ধারিত দিনটিই গুরুত্বপূর্ণ, আর সেই বিষয়টির উপরই তার দল ফোকাস করছে।
মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) ইডেন গার্ডেন্সে ম্যাচ পূর্ব সংবাদ সম্মেলনেও এমনটাই বলেন তিনি।
টি-টোয়েন্টিত এ পর্যন্ত পাকিস্তানের বিপক্ষ ৯টি ম্যাচ খেলে মাত্র ২টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আর ৭টিতেই পরাজয়।
এমন পরিসংখ্যান পাকিস্তানকে এগিয়ে রাখলেও আরেকটি পরিসংখ্যান ঠিকই বাংলঅদেশকে এগিয়ে রাখছে। আর সেটি হলো, দলটির বিপক্ষে গেল শেষ ৫টি ম্যাচে (ওয়ান ডে এবং টি-টোয়েন্টি) হারেনি মাশরাফি বাহিনী। যা এ ম্যাচ জয়ে তাদের বাড়তি প্রেরণা হিসেবেও কাজ করতে পারে।
এদিকে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়ে নিজেদের সেরা প্রস্তুতির ইঙ্গিত দিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘প্রস্তুতি অবশ্যই আমাদের সেরাটা নেবার চেস্টা করেছি। অবশ্যই আমরা জিততে চাই এবং ভাল খেলতে চাই। ’
তবে দু’দলের দ্বৈরথে পাকিস্তানকেই ফেবারিট হিসেবে মানছেন টাইগার দলপতি। পাকিস্তান সম্পর্কে বলতে গিয়ে মাশরাফি বললেন, ক্রিকেটে পাকিস্তানের অতীত ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। এ ম্যাচে আমার কাছে তারাই ফেবারিট। ’
ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশ খেলেছিল আজ থেকে ২৬ বছর আগে। সময় কম গড়ায়নি। দীর্ঘ দিনের অপরিচিত এ মাঠটির কন্ডিশন ও উইকেট সম্পর্কে তাদের ততটা ধারণা নেই যতটা পাকিস্তানের আছে।
তবে সাকিব আল হাসানকে এ মাঠের অভিজ্ঞ ও গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার হিসেবে আখ্যা দিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘সাকিব আমাদের জন্য এ ম্যাচে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্লেয়ার। গেল ৭-৮ বছর সে যেভাবে পারফর্ম করেছে সেটা আমাদের জন্য স্পেশাল। তার কাছে আমরা এ মাঠ সম্পর্কে অনেক তথ্য নিতে পারবো, কেননা ও আইপিএলে কেকেআর খেলার কারণে এটি ওর জন্য হোম গ্রাউন্ড। তাই ওর কাছ থেকে আমরা অনেক সাহায্য পাব বলে বিশ্বাস করি। ’
এদিকে ক্রিকেটে প্রতিটি ম্যাচেই টস বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই ধারাবাহিকতায় এ ম্যাচটিতেও টস গুরুত্বপূর্ণ হবে সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মাশরাফি বললেন অন্য কথা, ‘টস এ খেলায় ততটা গুরুত্বপূর্ণ না। এটা আসলে পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে। তবে ২০ ওভারের খেলায় টস ততটাগুরুত্বপূর্ণ নয়। ’
পাকিস্তানের বোলিং লাইনআপ সব সময়ই বিশ্বসেরা। তাদের দুর্ধর্ষ বোলারদের সামনে ব্যাট হাতে অনেক বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানেরাই দাঁড়াতে ভয় পান। তবে মাশরাফি মনে করেন, তামিম, সৌম্য ও সাব্বির তার তিন সতীর্থ টপ অর্ডার এ ম্যাচে দাঁড়াতে পারলে ম্যাচের ফলাফল নিজেদের করে নেয়া অসম্ভব হবে না।
গেল বেশ কয়েক মাস ধরে ফর্মে নেই মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসান। তাদের কাছে থেকে এ ম্যাচে কতটা প্রত্যাশা করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অধিনায়ক জানান, টি-টোয়েন্টিতে মিডল অর্ডারদের জন্য রান পাওয়া কঠিন। তাদের উইকেটে সেট হওয়ার সুযোগ থাকে। তারপরেও মুশফিক ও সাকিব দু’জনই চেস্টা করছে। তবে টপ অর্ডার ভাল করলে তাদের উপরর চাপ কম থাকবে’।
এদিকে, দুই টাইগার বোলার আরাফাত সানি ও তাসকিন আহমেদের অবৈধ বোলিং অ্যাকশন নিয়ে ইতোমধ্যেই তাদের দিকে সন্দেহের তীর তাঁক করা হয়েছে। তাই দু’জনই চেন্নাই থেকে বোলিং অ্যাকশন পরীক্ষা শেষ করে দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে তারা দু’জন থাকবেন কী না সে বিষয়টি এদিন সংবাদ সম্মেলনে পরিষ্কার করেননি মাশরাফি।
এদিকে, ইনজুরির কারণে এশিয়া কাপের মাঝপথ থেকে ছিটকে যাওয়া মুস্তাফিজ পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন বল হাতে অনুশীলন করেছেন। অনুশীলনের পর টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে ফিট মনে করলে তিনি এ ম্যাচে টাইগারদের সেরা ১১-তে থাকতে পারেন বলেও গণমাধ্যমকে জানালেন মাশরাফি।
সব কিছু ছাপিয়ে জয়ই এখন দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে টাইগার অধিনায়ক বলেন, আমরা আমাদের সেরা খেলাটি খেলেই এদিন জয় পেতে চেস্টা করবো।
এদিকে কম যাবেনা পাকিস্তানও। এশিয়া কাপে বাংলাদেশের কাছে টুর্নামেন্ট ছাড়া হওয়া দলটি জয়ের ধারায় ফিরতে চাইছে বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ দিয়েই। তাইতো পাক কোচ ওয়াকার ইউনুস বললেন, ‘এই ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেতে আমারা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করবো। ’
পাশাপাশি ওয়াকার এও মনে করেন যে, এশিয়া কাপে তার দল বাংলাদেশে যে উইকেটে হেরেছিল বিশ্বকাপে সুপার টেন-এ বাংলাদেশের বিপক্ষে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ভারতের উইকেটটি আলাদা হবে। তাই বাংলাদেশ যে এ ম্যাচেও তাদের বিপক্ষে জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পারবে সেটা তিনি এখনই বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না।
এদিকে উইকেটের কথা বিবেচনা করে তিন পেসার ও তিন স্পিনার খেলানোর কথা ভাবছেন পাক কোচ।
‘আপনি জানেন যে বাংলাদেশ ও ভারতের উইকেট ভিন্ন। এশিয়া কাপে তারা আমাদের বিপক্ষে জয় পেয়েছে তার মানে এই না যে, এখানেও তারা জিতবে। উইকেট ও কন্ডিশন বিবেচনা করে আমরা আমরা এ ম্যাচে তিন স্পিনার ও তিনজন পেসার নিয়ে খেলাবো।
শুধু বিশ্বসেরা বোলিং লাইনআপের জোরেই নয়, এদিন বাংলাদেশের বিপক্ষে দলটির ব্যাটসম্যানরাও ইতিবাচক ও সেরা খেলাটি খেলে জয় দিয়ে বিশ্বকাপ মিশন শুরু করবে বলেও জানান ওয়াকার।
এদিকে, বিশ্বকাপ দিয়েই নিজের বর্ণাঢ্য ক্রিকেট ক্যারিয়ার শেষ করবেন পাক অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি। তাই নিজের শেষ বিশ্বকাপে আফ্রিদি দলকে ভাল কিছু উপহার দিতে পারবেন বলেও বিশ্বাস করেন পাক হেড কোচ ওয়াকার ইউনুস।
এখন অপেক্ষার পালা ইডেন গাডেন্সের মহারণের শেষ হাসি কাদের মুখে ফুটে।
বাংলাদেশ সময়: ০১০৪ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১৬
এইচএল/এসএইচ