ঢাকা: বাংলাদেশের বোলিং পোস্টারবয় মুস্তাফিজুর রহমানে বুঁদ হয়ে আছে যেন পুরো আইপিএল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের হয়ে ধুমকেতুর মতো আভির্ভূত মুস্তাফিজুর আইপিএলেও সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের হয়ে দ্যুতি ছড়াতে থাকায় সাবেক-বর্তমান গ্রেটরা তাকে প্রশংসায় ভাসিয়ে চলেছেন।
রোববার (৮ মে) বিশাখাপত্তমে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের বিপক্ষে দারুণ ব্যাটিংয়ের পর বোলিং তাণ্ডব চালিয়ে ৮৫ রানের বিশাল জয় তুলে নেয় সানরাইজার্স। দুরন্ত বোলিংয়ের জন্য আশিস নেহরা ম্যান অব দ্য ম্যাচ হলেও খোদ নেহরার মুখেই লেগেছিল মুস্তাফিজুর রহমানের নাম।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার নিতে যাওয়ার পর ধারাভাষ্যকার যখন নেহরার কাছে ‘বুড়ো বয়সেও’ দারুণ বোলিংয়ের রহস্য জানতে চাইলেন তখন তিনি বললেন নিজের পরিশ্রমের কথা। একইসঙ্গে বললেন তিনি মুস্তাফিজুরের কাছ থেকেই বল গ্রিপ করা শিখছেন। ভারতের অন্যতম এ সেরা পেসার বলছিলেন, ‘ট্রায়িং, ট্রায়িং...মনে হচ্ছে আমি পারছি...!’
ম্যাচে সানরাইজার্সের বোলিং চলাকালে পুরো কমেন্ট্রি বক্সে যেন আলোচনার অনেকখানি দখলে রেখেছিলেন মুস্তাফিজুর। তার বোলিং দেখে খোদ ভারতীয় গ্রেট রবি শাস্ত্রীই প্রশংসা করতে করতে যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ছিলেন, একসময় শেষ করতে চাইলেন এই বলে, ‘আমার যতো প্রশংসাবাণী আছে, সব সে পাচ্ছে (হি হ্যাজ গট অল মাই ওয়ার্ডস)। ’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের দু’দুবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি বারবার বলছিলেন, এই মুস্তাফিজুর রহমান পুরো ক্রিকেটের জন্যই দারুণ এক আবিষ্কার। বাংলাদেশ তাকে পেয়েছে।
এর আগে ৬ মার্চ গুজরাট লায়ন্সের বিপক্ষে ম্যাচেও স্যামি প্রশংসায় ভাসিয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমানকে। তিনি সেদিন বলেন, মুস্তাফিজুর একটা আবিষ্কার। আমি বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) খেলেছি। আপনি ওর সাধারণ বল আর কাটার বলের মধ্যে পার্থক্য করতে পারবেন না।
কমেন্ট্রি বক্সে শাস্ত্রী-ড্যারেন স্যামিরা যখন মুস্তাফিজে বুঁদ হয়ে তাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছিলেন, তখন মাঠের বাইরেও মুস্তাফিজকে নিয়েই চলছিল আলোচনা। বোলিংয়ে প্রথমেই আঘাত হেনে মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের ব্যাটিংয়ের কোমর ভেঙে দেওয়া আশিস নেহরা, ভুবনেশ্বর কুমার, স্রান, হেনরিকরা যখন বল করে চলছিলেন ৯ ওভার পর্যন্ত, তখন মুস্তাফিজকে আক্রমণে আনতে না দেখে ইএসপিএনের নিরুপ নামে এক পাঠক বলতে থাকেন, ‘এটা ওয়ার্নারের দুরন্ত ক্যাপটেন্সি। এমনিতেই নেহরা-ভুবনেশ্বরদের চাপে মুম্বাইয়ের দশা বেহাল, এরপর তুরুপের তাস মুস্তাফিজকে স্টকে রেখে ক্যাপ্টেন প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের এই মনস্তাত্ত্বিক চাপ দিচ্ছেন যে, মুস্তাফিজের ৪টি ওভার কিন্তু রয়ে গেছে হে। ’
এ নিয়ে ফেসবুকে এক ক্রিকেটপ্রেমী বলেন, ‘পিস্তল দিয়ে কাজ হলে ব্যারাক থেকে মেশিনগান বের করার কী দরকার?
মুস্তাফিজ আক্রমণে না আসার পরও মুম্বাইয়ের ব্যাটিংয়ের রুগ্নদশা দেখে অভিষেক নামে ক্রিকইনফোর আরেক পাঠক মজা করে বলতে থাকেন, ‘সানরাইজার্সের দরকার এখন ফিজকে (মুস্তাফিজের আদুরে ডাকনাম) বোলিংয়ে এনে উইকেট তুলে নেওয়া। খেল এখানেই খতম করে দেওয়া উচিত। ’
খেলার পুরোভাগজুড়ে আলোচনার মধ্যমনি হয়ে থাকা মুস্তাফিজ ম্যাচ শেষে টিমের সংবাদ সম্মেলনেও ভাসলেন প্রশংসার জোয়ারে। সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন শিখর ধাওয়ান। তিনি বলেন, মুস্তাফিজ একজন গ্রেট বোলার। তার ক্রিকেট জ্ঞান অসাধারণ।
এই ‘অসাধারণ’ ক্রিকেটপ্রতিভা তার ব্যক্তিগত তৃতীয় ওভারের শেষ বলে যখন নিজের তৃতীয় (ম্যাকগ্লেনাঘানের) উইকেট তুলে নিলেন, তখন সানরাইজার্সের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে টুইট করা হয়, ‘আ রে এই ছেলেকে তো থামানো যাচ্ছে না!’
**মুস্তাফিজের ‘যত্ন’ নিতে বলছেন ‘মুগ্ধ’ মুরালিধরন
**জাদুকর মুস্তাফিজে অভিভূত আইপিএল
**মুস্তাফিজের সঙ্গে বল করতে পারা দারুণ ব্যাপার: ভুবনেশ্বর
**‘মিডিয়াম ফাস্ট স্লো অফ স্পিনার লেগ কাটার বোলার’ মুস্তাফিজুর!
**মুস্তাফিজের জন্য গুগলে বাংলা শিখছেন ওয়ার্নার
বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৬
এইচএ/