ঢাকা: বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরি করে ক্রিকেট বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। তার ব্যক্তিগত ১৪৫ রানে ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ৪০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করে বাংলাদেশ।
অভিষেক টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুল এখন ঢাকায়। আইসিসি’র এশিয়ান ডেভলপম্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত বুলবুল থিতু হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ায়। ছুটি কাটাতে দুই সপ্তাহের জন্য ঢাকায় এসেছেন তিনি। সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এসেছিলেন সাবেক এ ক্রিকেটার।
সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে কথা বলেন নিউজিল্যান্ড সিরিজে বাংলাদেশের প্রস্তুতি, সম্ভাবনা ও কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে। আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সঙ্গে কথোপকথনের চুম্বক অংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: আপনার দৃষ্টিতে নিউজিল্যান্ড সিরিজে বাংলাদেশের সম্ভবনাটা কেমন?
আমিনুল ইসলাম বুলবুল: আসলে প্রস্তুতিটা ভালো ছিল না আমাদের। প্রস্তুতি ভালো ছিল না এজন্য বলব যে, আমরা ওখানে (নিউজিল্যান্ডে) যে কন্ডিশনে খেলতে যাচ্ছি সেই কন্ডিশনের সঙ্গে এই (অস্ট্রেলিয়ার) কন্ডিশনের কোনো মিল নেই। তবে ভালো উদ্যোগ ছিল আমরা অস্ট্রেলিয়াতে একটা সংক্ষিপ্ত ক্যাম্প করেছি। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে আমরা টি-টোয়েন্টি খেলেছি। আমাদের খেলোয়াড়দের টেস্টে অপরিণত পারফরম্যান্সের কারণ এটা। মাথায় যে মানসিকতা রয়েছে সেটা অনেক বেশি টি-টোয়েন্টি নির্ভর। টি-টোয়েন্টিতে আমরা সাধারণত প্রত্যেকটা বল মেরে খেলি। টেস্ট আমরা বল ছাড়ি, দেখে খেলি আবার মেরে খেলি-তিনটা কাজ করি। সুবিধা দুটো আছে। আমাদের অনেক খেলোয়াড় আছেন, যারা এক’শ থেকে দুই’শ ওয়ানডে খেলেছেন এবং ৫০-৬০টি টেস্ট ম্যাচও খেলেছেন। তাদের সেই অভিজ্ঞতা আছে। গত দেড় বছরে আমরা যে ক্রিকেট খেলেছি, সেই আত্মবিশ্বাসটা তাদের মাঝে আছে। আরেকটা সুবিধা হলো, আমরা সিরিজটা শুরু করছি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে। টেস্ট সিরিজ শুরুর আগে আমাদের একটা ভালো প্রস্তুতি হয়ে যাবে। তবে নিউজিল্যান্ড কিন্তু টি-টোয়েন্টি ও টেস্টের পিচের সঙ্গে কোন সামঞ্জস্য রাখবে না। আমার মনে হয়, ওই জায়গাটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের বড় কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
প্রশ্ন: প্রথম টেস্ট ওয়েলিংটনে। ওখানকার কন্ডিশন কেমন?
আমিনুল ইসলাম বুলবুল: ওয়েলিংটনের আরেকটা নাম আছে ‘উইন্ডি সিটি’। আমরা ওখানে একটা টেস্ট ম্যাচ খেলেছিলাম। তবে ওয়েলিংটন বলুন আর যা-ই, কেবল নেপিয়ার বাদে সব জায়গায় বল অনেক মুভ করে। আরেকটা জিনিস দেখবেন ওখানকার উইকেটের যে চরিত্র, তাতে সব সফল দলই ব্যর্থ হয়ে আসে। এর কারণ হলো ওদের উইকেটগুলো অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের সম্মিলিত একটা উইকেট দেয়া হয়। ইংল্যান্ডের উইকেটে ঘাস থাকে এবং সুইং করে। আর অস্ট্রেলিয়ার উইকেটে বাউন্স করে। নিউজিল্যান্ডে সুইয়ের সঙ্গে বাউন্সও থাকে। আর আবহাওয়া যদি খারাপ থাকে, তাহলে তো কোনো কথাই নেই। সেক্ষেত্রে হোম কন্ডিশনে স্বাগতিকরা যে সুবিধাটা নিয়ে থাকে, নিউজিল্যান্ড আরো বেশি সুবিধা নেবে। কারণ, ওই কন্ডিশনে তারা অনেক বেশি ম্যাচ খেলে। ওই কন্ডিশনে আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে টেস্ট খেলার জন্য। ম্যাচে কতটা বল ছাড়ছি আমরা সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, টেস্টে বল ছাড়াটাও একটা বড় কৌশল হবে আমাদের জন্য।
প্রশ্ন: ওয়ানডে সিরিজে দুই-একটা ম্যাচ জেতার সম্ভবনা দেখছেন কিনা?
আমিনুল ইসলাম বুলবুল: অবশ্যই জেতার আশা রয়েছে। গত বিশ্বকাপে আমরা কিন্তু ওদের মাটিতে ওদের প্রায় হারিয়ে দিয়েছিলাম। আমাদের ওয়ানডে দলটা খুবই ভারসাম্যপূর্ন। মোস্তাফিজ যদি ফিট হয়ে যায়, আমাদের ব্যাটসম্যানরা ভালো ফর্মে আছে।
আমাদের আরেকটা সুবিধা রয়েছে, তা হলো অন্যান্য দলগুলো পাঁচটা ব্যাটসম্যান, একটা অলরাউন্ডার ও চারটা বোলার নিয়ে খেলে। আর আমাদের সুবিধা হলো সাতজন ব্যাটিং করতে পারে। এই অতিরিক্ত দুইজন ব্যাটসম্যানকে নিয়ে প্রতিপক্ষরা পরিকল্পনা করতে পারে না। সেই জায়গাটায় আমাদের একটা বড় সুযোগ থাকবে।
প্রশ্ন: তিনটি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়ন্টি, দুটি টেস্ট-এ তিন ফরম্যাটের খেলা পাঁচটা ভেন্যুতে। ভেন্যুর বৈচিত্র্য কি আরেক চ্যালেঞ্জ কিনা?
আমিনুল ইসলাম বুলবুল: এটা বেশ কিছু আচরণের ওপর নির্ভর করে। ওয়েলিংটন উচুঁ জায়গা, ক্রাইস্টচার্চ নিচু। নেপিয়ার আবার সমুদ্রের পাশে। তাই কোন দিক থেকে বাতাস আসছে এটা বড় ব্যাপার। তবে উইকেটের আচরণ বদলাতে কয়েক ঘণ্টা সময় লাগে। আশা করছি, অভিজ্ঞতা ও আত্মবিশ্বাস ওদের ভালো করতে সাহায্য করবে।
প্রশ্ন: কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চ্যালেঞ্জ তো থাকছেই। ভিন্ন কোনো চ্যালেঞ্জ দেখছেন কিনা?
আমিনুল ইসলাম বুলবুল: কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়া বলতে শুধু উইকেটের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াটা বড় বিষয় নয়। একটা হচ্ছে, উইকেটে সঙ্গে মানিয়ে নেয়া। আরেকটা হচ্ছে, দলের পারফরম্যান্সের কন্ডিশন। দল একটা ম্যাচ জিতলে কন্ডিশন একরকম থাকবে। আবার হারলে আরেক রকম। কেবল অভিজ্ঞ খেলোয়াড়রাই এসব কন্ডিশন সামাল দিতে পারে। আমি আশা করবো, আমাদের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের এসব পরিস্থিতিতে কাজে লাগানো হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৮ ঘণ্টা, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৬
এসকে/এমএমএস