ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

অথচ আউট না মেনে মাঠ ছেড়েছিলেন এই গাভাস্কারই!

স্পোর্টস ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৫৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৮
অথচ আউট না মেনে মাঠ ছেড়েছিলেন এই গাভাস্কারই! সাকিব আল হাসানের প্রতিবাদী রূপের সমালোচনা ঝরেছে সুনীল গাভাস্কারের মুখে

‘দ্বিমুখী আচরণের কাঠগড়া’য় দাঁড়াতে হলো ভারতের সাবেক ওপেনার সুনীল গাভাস্কারকে। কলম্বোর প্রেমাদাসায় বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচে উত্তেজনার মুহূর্তে টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের প্রতিবাদী রূপের বিরুদ্ধে গাভাস্কার সমালোচনা করায় তাকে ‘স্ববিরোধী আচরণে’ অভিযুক্ত করছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা।

কেমন স্ববিরোধী আচরণ? শুক্রবারের (১৬ মার্চ) ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শেষ ওভারে তুমুল উত্তেজনার মুহূর্তে আম্পায়াররা ‘নো’ ডেকেও তা অস্বীকার করায় ডাগ আউটে বসে থাকা সাকিব প্রতিবাদ করেন। তিনি আম্পায়ারদের সঙ্গেও উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় করেন, এক পর্যায়ে মাঠ ছেড়ে চলে আসার জন্যও ডাকেন ক্রিজে থাকা মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও রুবেল হোসেনকে।

গাভাস্কারের মতে, টাইগার অধিনায়কের এই আচরণ অগ্রহণযোগ্য। ম্যাচ শেষে একটি টেলিভিশনে তিনি বলেন, ‘ব্যাপারটা একদমই ভাল ছিল না। এ ধরনের বিষয়ে আরও কঠোর হতে হবে আইসিসিকে…। ’ গাভাস্কার এর ‘বিহিত’ও চান আইসিসির কাছে।

অথচ এই গাভাস্কারই আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত ‘আউট’ না মেনে মাঠ ছেড়ে গিয়েছিলেন একবার। ঘটনাটি ১৯৮১ সালের। মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে চলতে থাকা টেস্ট ম্যাচে ডেনিস লিলির এলবিডব্লিউর আবেদনে আউট দিয়ে দেন আম্পায়ার রেক্স হোয়াইট। কিন্তু গাভাস্কারের দাবি ছিল, বলটি ব্যাট হয়ে গিয়ে প্যাডে লেগেছে। আম্পায়ারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে তখনই ক্রিজের অপর সঙ্গী চেতন চৌহানকে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে মাঠ ছেড়ে প্রায় বেরিয়ে যান গাভাস্কার। যদিও পরে সেটা মীমাংসা হয়ে যায়।

কিন্তু নিজেই একসময় ‘অন্যায়’ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মাঠ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে গাভাস্কার এখন কেন আবার সাকিবের প্রতিবাদী রূপের সমালোচনা করছেন, সে নিয়ে উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না ক্রিকেটপ্রেমীরা। যদিও এটাকে স্পষ্টতই ‘স্ববিরোধী অবস্থান’ বলা হচ্ছে।

বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের প্রতিবাদী হয়ে ওঠা ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ দলগুলোর বর্তমান ও সাবেকদের ‘সমালোচনার’ বিষয় হলেও এমন ঘটনার নজির অবশ্য এবারই প্রথম নয়। যে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে ম্যাচ ঘিরে আলোচনা, সেই লঙ্কানদেরই ইতিহাসে এ ধরনের ঘটনার নজির আছে।

১৯৯৫ সালে সেই মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ চলছিল শ্রীলঙ্কার। মুত্তিয়া মুরালিধরনের বলে বারবার ‘নো’ ডাকছিলেন আম্পায়ার ড্যারেল হেয়ার। লঙ্কানদের তখনকার অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা মাঠ থেকে উঠে যান। নতুন সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠে ফিরে প্রান্ত বদল করেন। বছর তিনেক পর এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে সেই মুরালিধরনের বলে বারবার ‘নো’ ডাকছিলেন আম্পায়ার রস এমারসন। প্রতিবাদমুখর রানাতুঙ্গা তখন দল নিয়ে মাঠ ছেড়ে যান। পুরো দল বাউন্ডারি লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে, রানাতুঙ্গা মাঠের বাইরে ঊর্ধ্বতন কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন। দু’পক্ষের আলোচনা শেষে ফের মাঠে আসে শ্রীলঙ্কা দল।  

শুক্রবারের ম্যাচে সাকিবের কথায় শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ম্যাচ ছেড়ে দিলে টুর্নামেন্ট থেকে ‘ডিসকোয়ালিফাইড’ হয়ে যেতে পারতো বলে ধারণা ছড়ালেও ওই মুহূর্তের প্রতিবাদের প্রশংসাও করছেন অনেক ক্রিকেটবোদ্ধা।

ক্রীড়া সাংবাদিক ও লেখক রাজীব হাসানের ভাষ্যে, ‘অনেকে দেখলাম সাকিবের তীব্র সমালোচনা করছেন সাকিব মাঠ ছেড়ে আসতে বলেছিলেন বলে। এই প্রতিবাদগুলোর দরকার আছে। ভবিষ্যতে আম্পায়ারদের ব্যাক অব দ্য মাইন্ডে এটা থাকবে। তারা বাড়তি সতর্ক থাকবে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিদ্ধান্ত দিতে। ’

রাজীব উল্লেখ করেন, ‘ফুটবলে রেফারিকে নিয়ে মন্তব্য করে সবচেয়ে বেশি জরিমানা গুনেছেন আলেক্স ফার্গুসন আর হোসে মরিনহো। রেফারি তাদের সমঝেও চলে। এখন বাংলাদেশকেও সমঝে চলতে হবে। কম অন্যায়ের শিকার তো হইনি!’

সুনীল গাভাস্কারের আউটের প্রতিবাদের মুহূর্ত


মুরালিধরনের বলে ‘নো’ ডাকার প্রতিবাদে রানাতুঙ্গার নেতৃত্বে লঙ্কানদের প্রতিবাদ

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৭, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।