ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

নারী-পুরুষকে যেন সমান চোখে দেখা হয়: সালমা খাতুন 

স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১০ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৯
নারী-পুরুষকে যেন সমান চোখে দেখা হয়: সালমা খাতুন  সালমা খাতুন

সালমা খাতুন, বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের আইকন। যে কাজ পুরুষ ক্রিকেটাররা করতে পারেননি, সেই অধরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতা (এশিয়া কাপ) দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। 

একাধারে ডানহাতি ব্যাটসম্যান আর অফব্রেক বোলিং করেন ১৯৯০ সালের ১ অক্টোবর খুলনায় জন্মগ্রহণ করা এই এই প্রথিতযশা প্রমিলা ক্রিকেটার। ২৬ নভেম্বর, ২০১১ তারিখে সাভারে অনুষ্ঠিত খেলায় আয়ারল্যান্ড মহিলা ক্রিকেট দলের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।

এরপর ২৮ আগস্ট, ২০১২ তারিখে ডাবলিনে আয়ারল্যান্ড দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়।  

এছাড়া চীনের গুয়াংজুতে অনুষ্ঠিত ২০১০ সালের এশিয়ান গেমসের ক্রিকেটে রৌপ্যপদক বিজয়ী বাংলাদেশ দলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন সালমা। গত বছর মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে এশিয়া কাপে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর তার অধীনেই স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ ও বিশ্বকাপ বাছাইয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। বিশ্ব নারী দিবস উপলক্ষে তিনি কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট রিফাত আনজুম ও স্টাফ করেসপন্ডেন্ট (স্পোর্টস) মোয়াজ্জেম হোসেন।  

প্রশ্ন: এত খেলা থাকতে ক্রিকেটকেই কেন বেছে নিলেন?
সালমা খাতুন:
আসলে আমি ক্রিকেট খেলাটা দেখতেও পছন্দ করি আর খেলতেও পছন্দ করি। ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেট আমার অনেক পছন্দের।  

প্রশ্ন: ক্রিকেট খেলার পেছনে আপনার অনুপ্রেরণা কে ছিলেন? আর পরিবার থেকে কতটা সমর্থন পেয়েছেন?
সালমা:
প্রথমদিকে যখন বাড়িতে খেলতাম, কেউ তেমন উৎসাহ দেয়নি। উৎসাহটা আসলে পেয়েছি যখন মামাতো ভাই, খালাতো ভাই কিংবা পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে খেলতাম তখন থেকে। তখন আমার উৎসাহটা দিতো মূলত পাড়ার ছেলেরাই। ওরাই আমাকে ডেকে নিয়ে যেতো খেলার জন্য।

নারী ক্রিকেট দল

প্রশ্ন: পরিবার কখন থেকে উৎসাহিত করতে শুরু করে?

সালমা: যখন থেকে নারী ক্রিকেট দল যাত্রা শুরু করে আর আমি যোগ দিলাম, তখন থেকেই আমার পরিবার উৎসাহ দিতে শুরু করে। বিশেষ করে আমার পাড়ার ছেলেরা যাদের সঙ্গে আমি খেলতাম, তারা তো অনেক খুশি। সেই থেকে আমি নিজেও উৎসাহ পেতে শুরু করি।  

প্রশ্ন: এশিয়া কাপ থেকেই বাংলাদেশ নারী ক্রিকেটের মূল উত্থান বলা যায়। আপনার এবং আপনার সতীর্থদের হাত ধরেই প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতার স্বাদ পায় নারী ক্রিকেট দল। ওই মুহূর্তের অনুভূতিটা যদি একটু শেয়ার করতেন-

সালমা: আমি যতদিন অধিনায়ক ছিলাম, আমার লক্ষ্য ছিল আমার নেতৃত্বে দল একটা বড় শিরোপা বাংলাদেশের জন্য এনে দেব। একটানা ৮ বছর নেতৃত্বে থাকার পর ২ বছর আমার অধিনায়কত্ব ছিল না। পরে যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আমাকে সুযোগ দিল, তখন ভাবলাম আরেকটা সুযোগ পেয়েছি, এবার দেশকে কিছু দিতে হবে। তো যেদিন এশিয়া কাপের শিরোপা জিতলাম, সবাই টেলিভিশনের পর্দায় নিশ্চয় দেখেছেন, ওই মুহূর্তের আনন্দ আসলে কখনোই ভুলব না। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল সেদিন। দেশের জন্য শিরোপা জিতিয়ে আমি অনেক গর্ববোধ করছিলাম।

প্রশ্ন: বাংলাদেশ প্রথম কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শিরোপা জেতে আপনাদের হাত ধরে। যে কাজটা পুরুষ ক্রিকেটাররা করতে পারেননি এত বছরেও, সেটাই আপনারা করে দেখালেন। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

সালমা: নারী হিসেবে অবশ্যই অনেক ভালো লেগেছে। তবে তার চেয়েও বেশি ভালো লেগেছে এটা দেখে যে ভাইয়ারা (পুরুষ ক্রিকেটাররা) সেদিন আমাদের দারুণ সমর্থন দিয়েছিলেন। তামিম ভাই (বাংলাদেশের জয়ের পর তামিম-মাশরাফিদের একটি ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে দেখা যায় শেষ বলের আগে চাতক পাখির মতো টিভির দিকে তাকিয়ে আছেন ক্রিকেটাররা। জয়সূচক রানটি আসতেই উল্লাসে ফেটে পড়েন সবাই। পরে এই ভিডিও নিজের ফেসবুকে পোস্ট করেন তামিম। ) একটি ভিডিও আপলোড করেছিলেন, যেটা বিশ্বের সবাই দেখার পর আমরা দেখেছি। ওটা দেখে এত ভালো লেগেছে যে বলে বোঝানো যাবে না। দেশের সবার যে সমর্থন আর ভালোবাসা পেয়েছি, তাদের মর্যাদা রাখতে পেরেছি তা ক্রিকেটার ও নারী হিসেবেও অনেক বড় পাওয়া। আমি এখনো খেলছি। আশা করি ভবিষ্যতেও দেশের জন্য আরও গৌরব বয়ে আনতে পারব।

প্রশ্ন: নারী ক্রিকেটারদের বেতন বৈষম্য নিয়ে প্রায়ই লেখালেখি হয়। পুরুষ ক্রিকেটারদের যে হারে বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি দেওয়া হয়, তেমনটা নারীদের ক্ষেত্রে দেওয়া হয়না। এ নিয়ে আপনার কোনো ক্ষোভ আছে কি না?

সালমা:  আগের চেয়ে এখনকার চিত্র কিছুটা পাল্টেছে। শিরোপা জিতে আসার পর স্পন্সর পেয়েছি। এটা অনেক বড় পাওয়া। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে নারীরা এখন আর পিছিয়ে নেই। নারীরাও যে সব করতে পারে তা কিন্তু আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি। শুধু আমরা না, অনেক নারী খেলোয়াড়রাই প্রমাণ করেছেন। নারীরা এখন অনেক পেশায় আসছেন। তারাও কিন্তু দেশকে কিছু না কিছু দিচ্ছেন। আর বেতন কাঠামোর ক্ষেত্রে যদি বলি, আগের চেয়ে এখন অনেকটা উন্নতি হয়েছে।  

প্রশ্ন: জাতীয় দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। অধিনায়কত্ব কতটা উপভোগ করেন? আর সতীর্থদের সঙ্গে আপনার বোঝাপড়া কেমন?

সালমা:  সতীর্থরা অনেক হেল্পফুল। তাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক অনেক ভালো। আর নেতৃত্ব খুব উপভোগ করি। মাঠে সতীর্থদের উৎসাহ দেওয়া, আনন্দে রাখা আমার কাছে বিষয়টা খুব উপভোগ্য। আর নারী হিসেবে খেলতে এসেছি বলে বাইরে থেকে অনেক কথা হয়। আমি শুধু একটা কথাই বলব, পুরুষদের যেভাবে দেখা হয়, একইভাবে যেন নারীদেরও দেখা হয়।

প্রশ্ন: বৈশ্বিক পর্যায়ে নারী ক্রিকেটের সঙ্গে আমরা আসলে কতটা তাল মেলাতে পারছি?

সালমা: আমরা খুব বেশি পিছিয়ে আছি বিষয়টা এমন নয়। ২০১৮ সালে আমরা অনেক ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছি। আমরা আরও এগিয়ে যাব, যদি আরও বেশি ম্যাচ খেলানো হয়, অনেক বেশি সফর করা যায় তাহলে। ঘরোয়া লিগগুলো আরও নিয়মিত আয়োজিত হলে সেটাও কাজে দেবে।

প্রশ্ন: আপনার মতো আরও যারা ক্রিকেট খেলতে চায়, সেসব নারীদের ক্ষেত্রে এই খেলায় আসার পেছনে কী ধরনের প্রতিবন্ধকতা আছে বলে মনে করেন?

সালমা: এখন কিন্তু আগের চেয়ে সুযোগ অনেক বেড়েছে। এখন অনেকে পারিবারিক সমর্থনও পাচ্ছেন। আমার কাছেই অনেকে ফোন করে জানতে চান তাদের মেয়েকে কোথায় প্র্যাকটিস করাবেন কিংবা কোথায় দিলে ভালো হবে এসব। অর্থাৎ, এখন পরিবার থেকেই আগ্রহ দেখানো হচ্ছে। আমরা এশিয়া কাপের শিরোপা জেতার পর থেকেই এমন আগ্রহ বেড়ে গেছে। কিন্তু এগিয়ে আসার পরেও কিছু বিষয় থাকে। এখন তৃণমূল থেকে খেলোয়াড় বাছাই করা হচ্ছে। জাতীয় দলের পাইপলাইন সমৃদ্ধ হচ্ছে এটা ভালো দিক। তবে এটা ধরে রাখতে হবে। আর ক্রিকেট হচ্ছে ভদ্র খেলা। এটার জন্যই আগ্রহ বাড়ছে।

প্রশ্ন: এবার অন্য প্রসঙ্গে আসি, খেলোয়াড় সালমা অবসরে কী করেন?

সালমা: আসলে সেভাবে সময় পাইনা। মাঠের খেলা শেষে বাসায় এসে পরিবারকে সময় দেওয়ার পর হয়তো গান শুনি কিংবা বই পড়ি। মাঝে মাঝে সতীর্থদের সঙ্গে আড্ডা দেই, গান গাই- এইতো।

প্রশ্ন: যদি ক্রিকেটার না হতেন তাহলে কোন পেশা বেছে নিতেন?

সালমা: ক্রিকেট না খেললে আর যদি বাংলাদেশে নারী ক্রিকেট দল না থাকতো তাহলে বিয়ে-শাদি করতাম, ঘর সংসার হতো(হাসি)। আমি একটা জিনিসই পছন্দ করি, আর তা হলো ক্রিকেট। এর বাইরে অন্য কোনো চাওয়া কিংবা পাওয়া নেই।

প্রশ্ন: সামনে কোন সিরিজের প্রস্তুতি নিচ্ছেন?

সালমা: আপাতত ডিভিশন খেলা চলছে। এরপর হয়তো প্রিমিয়ার লিগ হবে। এছাড়া কোনো দেশকে সফরে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা চলছে।

আপনাকে ধন্যবাদ, আপনাকে নারী দিবসের শুভেচ্ছা।  

সালমা: আপনাদেরও ধন্যবাদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০১৯
আরএআর/এমএইচএম/এসআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।